স্টাফ রিপোর্টার, পানিসাগর/ কাঞ্চনপুর/ আগরতলা, ২১ নভেম্বর।। ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে আপত্তি-কে কেন্দ্র করে জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির জাতীয় সড়ক অবরোধে পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসক এবং জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। অবশ্য, পুলিশও বিবৃতি দিয়ে আজকে একজনের মৃত্যু ও সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনায় অবরোধকারীদের সম্পূর্ণভাবে দায়ী করেছে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে আত্মরক্ষায় পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালিয়েছে। তাতে, এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
তবে, এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, অবরোধকারীদের সাথে সংঘর্ষে নিরাপত্তা কর্মীরাও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। ওই সংঘর্ষে ১৮ জন সাধারণ জনগণ আহত হয়েছেন, অন্যদিকে ১৪ জন পুলিশ ও দমকল এদিন মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। কয়েকটি গাড়ি, বাইক রোষের শিকার হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, পানিসাগর-র ঘটনা জানার সাথে সাথেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, মুখ্য সচিব মনোজ কুমার, ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক ভি এস যাদব, এডিজি রাজীব সিং এবং মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের সচিব জরুরি বৈঠক করেছেন।
ওই বৈঠকেই পানিসাগরে জাতীয় সড়ক অবরোধ-কে ঘিরে এদিনের ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাথে মৃতের পরিবার-কে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ত্রিপুরা সরকার আহত সকলের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করবে বলে স্থির হয়েছে। তবে, গুলি চালানোর প্রকৃত কারণ অবশ্যই তদন্তক্রমে বের করা প্রয়োজন বলেই মনে করছে ত্রিপুরা সরকার, বলেন তিনি। আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক নাগেশ কুমার বি জানিয়েছেন, ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও পানিসাগরে চামটিলা এলাকায় প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়েছে। তাঁরা ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছেন।
তাঁর কথায়, অবরোধ-কে ঘিরে ডুলুবাড়ি এলাকায় প্রচুর নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। তাঁরা অবরোধকারীদের থামাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর দাবি, অবরোধকারী-রা পানিসাগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিজিৎ দাসের উপর হামলা চালিয়েছিলেন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই সময় আত্মরক্ষায় পুলিশ বাধ্য হয়ে শূন্যে গুলি চালিয়েছিল।
দূর্ভাগ্যবসত, পানিসাগরের বাসিন্দা পেশায় কাঠ মিস্ত্রি শ্রীকান্ত দাসের বুকে লাগে। তাতে, তার মৃত্যু হয়েছে।উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক জানিয়েছেন, অবরোধকারী-রা আজ বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ৩টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, উত্তেজিত জনতা-কে থামাতে গিয়ে ২৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জন সাধারণ মানুষ এবং ১৪ জন পুলিশ ও দমকল কর্মী রয়েছেন। তাদের-কে প্রথমে পানিসাগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে ৮ জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সকলকেই জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জেলাশাসকের কথায়, ত্রিপুরা সরকার মৃত শ্রীকান্ত দাসের পরিবার-কে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, আজকের সমস্ত ঘটনায় মেজিস্ট্রেট তদন্তেরও ঘোষণা দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। ত্রিপুরা সরকার ১ মাসের মধ্যে উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসক-কে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ ধর্মনগর মহকুমাতেও ১৪৪ জারি করা হয়েছে।
এদিকে ত্রিপুরা পুলিশ এক বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, পানিসাগরে জাতীয় সড়ক অবরোধ চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্ত প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ১৪ জন পুলিশ ও দমকল কর্মী-র পাশাপাশি ১৮ জন সাধারণ নাগরিকও আহত হয়েছেন। এছাড়া একজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সাফ জানিয়েছে, অবরোধ চলাকালীন উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে প্রথমে লাঠিচার্জ করা হয়েছিল। এমনকি, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছিল পুলিশ। কিন্তু, অবরোধকারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এবং তাদের আক্রমণ প্রতিহত করে আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়ে গুলি চালিয়েছে পুলিশ।
ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, ৮ জন দমকল কর্মী আজ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দামছড়া অগ্নি নির্বাপক কেন্দ্রের কর্মী বিশ্বজিৎ দেববর্মা-র শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে জি বি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া, জহরলাল সরকার, রুবেল দেব, শচীন্দ্র দেববর্মা, স্বামীর দেবনাথ, জিতেন দেববর্মা, কানাই দেবনাথ এবং নির্মল সরকার-কে পানিসাগর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
ত্রিপুরা পুলিশ আরো জানিয়েছে, ৬ জন সুরক্ষা কর্মী বর্তমানে ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পানিসাগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অভিজিৎ দাস, তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সমরজিৎ সিনহা ও সুদীপ নাথ, মহিলা কনস্টেবল মৌটুসী দেব, টিএসআর ৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান দীপন চাকমা এবং মারামালি কাজী-র চিকিৎসা চলছে ধর্মনগর হাসপাতালে।
এদিকে, জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটির আহ্বায়ক সুশান্ত বড়ুয়া জানিয়েছেন, আজ সকাল থেকে পানিসাগর, চামটিলা এবং পেচারথলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে আমাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণ ওই অবরোধ কর্মসূচিতে হটাৎ বাইকে সওয়ার টিএসআর জওয়ান প্রচন্ড গতিতে এসে গুলি চালিয়ে পালিয়ে গেছেন।তাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন আহত হয়েছেন। তাছাড়া পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জে সবমিলিয়ে ১৮ জন আহত হয়েছেন।