নতুন প্রতিনিধি, উদয়পুর, ২৪ ডিসেম্বর৷৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ত্রিপুরার মন্দিরনগরী উদয়পুর৷ মঙ্গলবার উদয়পুরে সিপিএমের মিছিলকে ঘিরে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ আহতদের মধ্যে পুলিশ কর্মীও রয়েছেন৷ ওই সংঘর্ষের ঘটনায় শাসকদল বিজেপি এবং বিরোধী সিপিএম একে অন্যের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করেছে৷ তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন রাধাকিশোরপুর থানার ওসি শ্যামল চক্রবর্তী৷প্রসঙ্গত, আজ সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ উদয়পুরে কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে সিপিএম মিছিল ও সভার ডাক দিয়েছিল৷ ওই মিছিলে শাসকদল বিজেপি-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়া এবং হামলার অভিযোগ এনেছে সিপিএম৷ বিজেপি-র দাবি, ত্রিপুরায় অশান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে সিপিএম মিথ্যা প্রচার করে চলেছে৷ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অজুহাতে তাঁরা বিজেপি কর্মীদের আক্রমণ করেছে৷ সিপিএম বিধায়ক রতন ভৌমিক বলেন, উদয়পুরে সিপিএমের মিছিল ও সভায় বিজেপি-আশ্রিত দুষৃকতীরা হামলা চালিয়েছে৷ তাঁর কথায়, পুলিশের অনুমতি নিয়ে মিছিল ও সভা সংগঠিত করা হলেও পুলিশের সামনেই সিপিএম কর্মীদের ওপর হামলা করেছে বিজেপি-আশ্রিত দুষৃকতীরা৷ ওই হামলায় তিনি নিজেও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রতনবাবু৷তিনি বলেন, সিপিএম পার্টির মহকুমা দফতর থেকে মিছিলটি সেন্ট্রাল রোড হয়ে নিউ টাউন রোড ধরে এগোবার পথে বিজেপির ৮-১০ জন দুষৃকতকারী মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু দুর্বৃত্তদের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে চলে৷ তিনি অভিযোগ করে বলেন, মিছিল শেষে পার্টি অফিসের সামনে জামায়েত শুরু হলে বিজেপি-র ৪০-৫০ জন দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে সভাস্থলে আক্রমণ চালায়৷ তাতে বেশ কয়েকজন আহত হন৷ তাঁদের টেপানিয়া জেলা হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে৷রতনবাবুর কথায়, পার্টির উদয়পুর মহকুমা কমিটির সম্পাদক মানিক বিশ্বাস-সহ ৭-৮ জন পার্টিকর্মী হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন৷ তাঁর দুই নিরাপত্তারক্ষী এবং গোমতি জেলা কমিটির সম্পাদক ও প্রাক্তন বিধায়ক মাধব সাহার দেহরক্ষীরাও আহত হয়েছেন, জানান তিনি৷ রতনবাবুর দাবি, তাঁর এক নিরাপত্তারক্ষী গুরুতর আহত হয়েছেন৷ তাঁকে সিটিস্ক্যান করাতে হবে৷ সিপিএম ওই হামলার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷সিপিএমের বক্তব্য, পুলিশের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে ওই হামলা চালানো হলেও পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়েছে৷ সিপিএম ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার তদন্তক্রমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শীর্ষ পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে৷এদিকে, বিজেপি-র গোমতি জেলা সভাপতি অভিষেক দেবরায় আজকের সংঘর্ষের ঘটনায় সিপিএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন৷ তিনি বলেন, সিপিএমের মিছিলে বিজেপি-র হামলা চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ তাঁর দাবি, সিপিএম যখন মিছিল বের করে তখন নিউ টাউন রোডে কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়েছিল৷ তার পর সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁরাই বিজেপি কর্মীদের ওপর চড়াও হন৷ তিনি বলেন, সিপিএমের আক্রমণে বিজেপি-র তিনজন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন৷ প্রদীপ পোদ্দার, ভোলা দে এবং রূপন দে-কে হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছে৷ তাছাড়া, শিশির ভৌমিক-কে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসক৷অভিষেকবাবুর বক্তব্য, ত্রিপুরায় শান্তির পরিবেশ সিপিএমের সহ্য হচ্ছে না৷ তাই তাঁরা পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়েছে৷ তাঁর দাবি, মিছিলের অছিলায় সিপিএম বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমণের সুযোগ খুঁজতে থাকে৷ আজকের ঘটনা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ৷ তিনি জানান, ওই ঘটনায় আজ সকালেই সিপিএম কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ প্রদীপ পোদ্দার এবং শিশির ভৌমিকের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে৷এদিকে, রাধাকিশোরপুর থানার ওসি শ্যামল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আজ সিপিএমের মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে৷ নিউ টাউন রোডে বিজেপি কর্মীরা সিপিএমের মিছিলকে বাধা দিলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁরা এগিয়ে যেতে পেরেছেন৷ পরবর্তী সময়ে সিপিএমের সভা শুরু হলে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা এবং ধাক্কাধাক্কি হলে সিপিএম ও বিজেপি উভয় দলের কর্মী আহত হয়েছেন৷ ওই ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷