আগরতলা, ৩১ অক্টোবর।। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হচ্ছেন দেশের একতা ও সংহতির প্রতীক। স্বাধীনতার পর দেশের একতা ও অখন্ডতা রক্ষায় তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি অখন্ড ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজীবন কাজ করে গেছেন। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশকে আরো শক্তিশালী করা এবং সমৃদ্ধ ভারত গড়ার জন্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করা। আজ নরসিংগড়স্থিত কেটিডি সিং পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস পালন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতীয় রাজনীতিতে ভারতের লৌহ মানব হিসাবে সুপরিচিত। স্বাধীন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনটি (৩১ অক্টোবর) ২০১৪ সাল থেকে সারা দেশে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এর মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রতি সম্মান জানানো। পাশাপাশি আমাদের দেশের ভেতরে ও বাইরে যে সমস্ত অশুভ শক্তি দেশকে দুর্বল করার জন্য এবং দেশের অখন্ডতা বিঘ্ন করার জন্য সচেষ্ট তাদের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা। দেশের একতা ও অখন্ডতা রক্ষায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর লক্ষ্য নিয়েই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘রান ফর ইউনিটির’ সূচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময়কালে বিশেষ করে ১৯৪৭-১৯৪৯ সালের মধ্যে সর্দার প্যাটেল প্রায় ৫৬২টি রাজন্যশাসিত অঞ্চলকে ভারতে অর্ন্তভুক্ত করেছিলেন। সর্দার প্যাটেলের দৃঢ় মানসিকতা ও বলিষ্ট পদক্ষেপের জন্যই কাজটি সম্ভব হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পুলিশ রাজ্যের জনগণের সেবায় ১৫০ বছর পূর্ণ করেছে। ১৮৭৩ সালে মাণিক্য রাজাদের রাজত্বকালে রাজ্য পুলিশের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা এখন ‘প্রেসিডেন্ট কালারস্’ সম্মান প্রাপ্ত অন্যতম দক্ষ বাহিনী হয়ে উঠেছে। ত্রিপুরা পুলিশ কার্যকরভাবে রাজ্যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের সামগ্রিক অপরাধের হারের নিরিখে ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা তৃতীয় সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে।
মামলার সংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রধানত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং ব্যাপক প্রসিকিউশন রিপোর্ট, ট্রাফিক জরিমানা ও প্রতিরোধমূলক গ্রেপ্তারই মুখ্য কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের নিরিখে ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা অষ্টম সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। মহিলাদের অভিযোগ জানানোর জন্য রাজ্যের প্রতিটি জেলায় একটি করে মহিলা থানা সহ মোট ৯টি মহিলা থানা এবং উইমেন হেল্প ডেস্ক রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাদক বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করা নিষিদ্ধ দ্রব্যের নিরিখে ত্রিপুরা পুলিশ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সতর্কতামূলক তৎপরতার কারণেই ২০২৩ সালে বিধানসভা এবং ২০২৪ সালে লোকসভার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ১২টি থানা ও আউট পোস্টের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেখানেই ঘটনার খবর পাওয়া গেছে সেখানে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কয়েক দশকের বিদ্রোহের পরে আত্মগোপনকারী জঙ্গী সংগঠনের সমস্ত ক্যাডাররা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে মূলধারায় ফিরে এসেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এক হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এবং আরও ৯১৬টি কনস্টেবলের পদ মঞ্জুর করা হয়েছে। সঙ্কটের সময়, সাধারণ জনগণ পুলিশের সহায়তা চাইতে এবং তাৎক্ষণিক পরিষেবা গ্রহণের জন্য ইমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম-১১২ চালু করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে পুলিশ প্রশাসনের সাফল্যের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বি এস এফ, সি আর পি এফ, টি এস আর, মহিলা ও পুরুষ পুলিশ, হোমগার্ড এবং ট্রাফিক পুলিশের জওয়ানগণ কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান।