কৈলাসহর, ২০ মার্চ।। নাবালিকা অপহরণের ঘটনায় উত্তপ্ত ত্রিপুরাী ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর। পুলিশ ১০ঘন্টার মধ্যে সাফল্য পাওয়ায় অবশেষে এলাকায় স্বস্তির পরিবেশ। উল্লেখ্য, কৈলাসহর এলাকার এক নাবালিকা অপহরণ করায় রাতভর কৈলাসহর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন।
জানা গিয়েছে, কৈলাসহর পুর পরিষদ এলাকার ১নং ওয়ার্ডের শীল পাড়া এলাকার ১৪ বৎসরের এক নাবালিকাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কৈলাসহর মহকুমার মাগুরুলী গ্রামের ভিন্ন ধর্মের এক যুবক। অভিযোগের তীর মাগুরউলি গ্রামের জাহিদ আলি নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাহিদ আলিকে গ্রেফতার এবং ১৪ বৎসরের নাবালিকা প্রনতিকে (কাল্পনিক নাম) উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দিতে হিন্দু সংগঠনের প্রায় দুইশ যুবক সহ পরিবারের লোকজন রাত থেকে কৈলাসহর থানা ঘেরাও করে থানার সামনেই আগুন জালিয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিল।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অবরোধকারীদের সাথে কথা বলেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার। জয়ন্তবাবু অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন এবং আইন মোতাবেক যা করনীয় তা করবেন বলে আশ্বাস দেন। জয়ন্তবাবুর এই মৌখিক আশ্বাস পাওয়ার পরও অবরোধকারীরা দীর্ঘক্ষন পথ অবরোধ করে রাখে। তবে রাষ্ট্রীয় হিন্দু সংগঠনের জেলা সভাপতি শ্যামল সরকার প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করলে নাবালিকার পরিবারের তরফ থেকে যে এফআইআর করা হয় তা রেজিস্ট্রি করেছে মহিলা থানার পুলিশ। রাষ্ট্রীয় হিন্দু সংগঠনের তরফ থেকে নাবালিকা অপহরণকারী যুবককে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করার সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয় পুলিশ প্রশাসনকে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপহরণকারী যুবককে গ্রেফতার না করলে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হবে বলে জানান ঊনকোটি রাষ্ট্রীয় হিন্দু সংগঠনের সভাপতি শ্যামল সরকার।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত জাহিদ আলীর মাগুরুলী গ্রামটি ইরানি থানার অন্তর্ভুক্ত। ইরানি থানা সুত্রের খবর অনুযায়ী, গতকাল গভীর রাতে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার ইরানি থানার ওসি যতীন্দ্র দাসকে সাথে নিয়ে বিশাল পুলিশ এবং টি.এস.আর নিয়ে নাবালিকা মেয়েকে খুঁজে বের করে। ইরানি থানা থেকে কৈলাসহর মহিলা থানার কাছে নাবালিকাকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। নাবালিকার মেডিকেল পরীক্ষার পর রাতেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
শুধুমাত্র নাবালিকা উদ্ধারই নয়, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার অবরোধকারীদের কথা দেওয়ার মাত্র ১০ ঘন্টার মধ্যেই অভিযুক্ত নাবালিকা অপহরণকারী যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এই বিষয়ে জয়ন্ত বাবু ইরানি থানার ওসির সাথে একটি টিম তৈরী করে রাতভর তল্লাশি চালানো হয় গোটা মাগুরুলী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। কৈলাসহর মহকুমায় যাতে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরী না হয় সে মোতাবেক মাগুরুলী গ্রাম পঞ্চায়েত সহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এগিয়ে আসেন এবং এই ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত যুবককে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তোলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অবশেষে মাগুরুলি গ্রামের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সহযোগিতায় জাহিদ আলিকে পাকড়াও করে ইরানি থানার ওসি যতীন্দ্র দাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে ইরানি থানা থেকে কৈলাসহর মহিলা থানায় স্থানান্তরিত করে এনং পরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে দুই ধর্মের মানুষ যেভাবে সহযোগিতা করে অপহরণ কান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগকারী যুবককে যেভাবে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন তা এক শুভ বার্তা বহন করবে বলে শহরবাসীর ধারনা।
তবে, এই নাবালিকাকে সত্যিই কি অপহরণ করা হয়েছিল নাকি এই অপহরণের পিছনে অন্য কোনো ঘটনা জড়িত রয়েছে? সূত্রের খবর, যে নাবালিকা অপহরণ হয়েছে বলে থানা ঘেরাও করা হয়েছে, সেই নাবালিকা গত এক সুপ্তাহ পূর্বে নিজের ইচ্ছেতেই নাকি জাহিদ আলীর বাড়িতে সারাজীবন থাকার জন্য চলে গিয়েছিল। এই খবর পুলিশের কাছেও এসেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।