আগরতলা, ১৫ মার্চ।।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উদ্যোগে উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য সহ ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়কে নিয়ে রাজ্যে গতকাল থেকে আঞ্চলিক পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনদিনব্যাপী এই আলোচনাসভা আগামীকাল সমাপ্ত হবে। গতকাল আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে এই আলোচনাসভার উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা এল এস চ্যাঙসাড। ৩দিনের পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস প্রভৃতি পতঙ্গবাহিত রোগ এবং তার প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।
তাছাড়া এই কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পর্যলোচনা করা হচ্ছে। জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প মূলত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস, কালাজ্বর এবং লিমফেটিক ফাইলেরিয়াসিসের মতো ৬টি পতঙ্গ বাহিত রোগের সাথে মোকাবিলা করছে। তাদের মধ্যে ত্রিপুরায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ছাড়াও চিকুনগুনিয়া ও জাপানিজ এনকেফেলাইটিসের রোগী পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ত্রিপুরায় কালাজ্বর ও লিমফেটিক ফাইলেরিয়াসিস জনিত কোনও রোগের সংক্রমণ নেই। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা শাখা থেকে আজ এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানানো হয়।
প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে এই পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ বিভাগের যুগ্ম সচিব রাজীব মাঝি এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচলপ্রদেশ, ত্রিপুরা সহ ওড়িশা, ঝাড়খন্ড, ছত্রিশগড় থেকে আগত প্রতিনিধিরা এই আলোচনাসভায় অংশ নিয়েছেন।
তাছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ বিভাগের যুগ্ম সচিব রাজীব মাঝি, রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ব্রাহ্মীৎ কৌর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ নির্মূলীকরণ প্রকল্পের অধিকর্তা ডা. তনু জৈন, রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকারের অধিকর্তা ডা. সঞ্জীব দেববর্মা, রাজ্য পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক অধিকারের অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, ত্রিপুরার যুগ্ম মিশন অধিকর্তা বি বি দাস প্রমুখ।
প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা এল এস চ্যাঙসাঙ জনসাধারণের কাছে যেন আরও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায় তার উপর আলোকপাত করেন। তিনি কমিউনিটি হেলথ অফিসার, আশা কর্মী এবং আশা ফেসিলিটেটরদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ বিভাগের যুগ্ম সচিব রাজীব মাঝি আজ আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং জিবি হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক বিভাগ এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, গত ১৩ মার্চ আগরতলা মহাকরণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা এল এস চ্যাঙসাঙ-এর পৌরহিত্যে রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৭ সালের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যকে ম্যালেরিয়া মুক্ত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয়।
ত্রিপুরা রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের আওতাধীন জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রচেষ্টায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গ্রাম পাহাড়ে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যে ম্যালেরিয়া সনাক্তকরণের জন্য মোট ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৫৪ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ৭৭৫ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু সনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেককেই বিনামূল্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যমে সুস্থ করা হয়েছে। ফলে এই বছর এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় কোনও রোগীর মৃত্যু হয়নি।