আগরতলা, ১৯ জানুয়ারি।। রাজ্য সরকার ককবরক ভাষা সহ চাকমা, হালাম, মগ, কুকি, মিজো, গারো, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী এবং মণিপুরী এই ৮টি ভাষার সার্বিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা নিয়েছে। এবারের বাজেটে জনজাতিদের কল্যাণে ১৪টি সাব প্ল্যানে মোট ৫,৬০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব ব্যাঙ্কের ১৪০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তায় বর্তমানে জনজাতিদের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত ৪৬তম রাজ্যভিত্তিক ককবরক ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে আমাদের রাজ্যে ১১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮১৩ জন জনজাতি অংশের মানুষ বসবাস করেন। বর্তমানে এই ৮টি ভাষার সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে রাজ্যে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা উন্নয়ন দপ্তর সংখ্যালঘু অংশের মানুষের ভাষার পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা, এই ভাষাগুলো পড়ানো হয় এমন স্কুলের সংখ্যা বাড়ানো, ভাষাগুলোকে একটি বিষয় হিসেবে উচ্চ ক্লাসে উন্নীত করা, সাহিত্য পুস্তিকা প্রকাশ, সেমিনার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ও গবেষণার কাজ করছে। তিনি বলেন, সকল ভাষা মাতৃসম। আমাদের রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ ককবরক ভাষাভাষীর জনগোষ্ঠী রয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীদিনে এই ভাষাকে আরও কিভাবে শক্তিশালী করা যায় এবং রাজ্যের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে জনজাতিদের কিভাবে সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু অংশের মানুষের ভাষাকে একটি বিষয় হিসেবে বুনিয়াদিস্তরে ১,৬৪০টি বিদ্যালয়ে, মাধ্যমিক স্তরে ১১৫টি বিদ্যালয়ে এবং উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে ৭২টি বিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। ২০২২ সালে সরকারি কর্মচারিদের জন্য অনলাইনে ককবরক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে। গবেষকদের গবেষণা করার জন্য ১ লক্ষ টাকা অনুদানের সংস্থান রয়েছে।
এছাড়া ককবরক ও অন্যান্য উপভাষায় ছাত্রছাত্রীদের সহায়ক পাঠের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষায় সাহিত্য পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ককবরক ভাষায় পিএইচডি ডিগ্রি কোর্স চালু রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদি ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর জনজাতি গৌরব দিবসের ও বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার সূচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জনজাতিদের কল্যাণে আন্তরিক রয়েছেন। এজন্য বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা আগামীদিনে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করব।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ককবরককে একটি বিষয় হিসেবে আরও ২০টি নতুন বিদ্যালয়ে চালু করা হবে। তিনি বলেন, ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তরের উদ্যোগে ককবরক সহ অন্য আরও ৫টি সংখ্যালঘু ভাষার উন্নতির জন্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ককবরক ভাষা উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান ডা. অতুল দেববর্মা তাঁর ভাষণে ককবরক ভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ককবরক ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারে আন্তরিক রয়েছে।
বিশেষ অতিথির ভাষণে ককবরক ভাষা উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ভাষাকে মর্যাদা দেবার জন্য বর্তমান প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ‘তকসাতিয়ারী’ পুস্তকের আবরণ উন্মোচন করেন। ‘করম কাঁচাক হিমবতক’ পুস্তকের আবরণ উন্মোচন করেন বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া।
অনুষ্ঠানে ককবরক ভাষার উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য শিক্ষক তরুণ কুমার দেববর্মা, প্রীতিলতা দেববর্মা, প্রণতি রিয়াং, দিলীপ মানিক কলই ও জগৎপদ জমাতিয়াকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা শুভাশিষ বন্দোপাধ্যায়, জনজাতি গবেষণা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্তা আনন্দহরি জমাতিয়া প্রমুখ। আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর, উপজাতি গবেষণা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকলকে ধন্যবাদজ্ঞাপন করেন ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তরের অধিকর্তা রত্নজিৎ দেববর্মা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সকালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণ থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, এনসিসি ক্যাডেট, ছাত্রী নিবাস, ছাত্রাবাস, সামাজিক সংস্থার জনজাতি অংশের ছাত্র, ছাত্রী, শিল্পী ও সাহিত্যিক চিরাচরিত পোষাক পরিধান করে এতে অংশ নেন। র্যালির পুরোভাগে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া সহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। এই র্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিক্রমা করে পুনরায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এসে শেষ হয়।