আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর।। সুসংহত ও স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যৌথ উদ্যোগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নীতি আয়োগের এক প্রতিনিধিদল আজ তিনদিনের রাজ্য সফরে এসেছেন। নীতি আয়োগের সদস্য ড. ভি কে সরস্বতের নেতৃত্বে সফররত প্রতিনিধিদলটি আজ সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহার সাথে নীতি আয়োগের কৌশলগত উদ্যোগসমূহ রূপায়ণের রূপরেখা নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে স্থানীয় উদ্যোগকে শক্তিশালী করে যৌথ প্রচেষ্টার উপর গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন না হলে দেশেরও উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই রাজ্যে স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি, পর্যটন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের যে সংকল্প নিয়েছেন তার অনুপ্রেরণা নিয়েই রাজ্য সরকার কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রাবার, আগর, বাঁশ, প্রাকৃতিক গ্যাস, আনারস, কাঁঠাল সহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সেগুলিকে ভিত্তি করেই রাজ্য সরকার শিল্প ক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করছে। এক্ষেত্রে নীতি আয়োগের সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে রাজ্যে বর্তমানে সড়ক, রেল, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ৬টি জাতীয় সড়ক রয়েছে। আরও ৪টি জাতীয় সড়কের জন্য নীতিগতভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের মঞ্জুরী পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৪টি রোপওয়ের মঞ্জুরী পাওয়া গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সমস্ত অংশের জনগণকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানে রাজ্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। রাজ্যের প্রধান হাসপাতাল জিবি ও আইজিএম হাসপাতালে রেফারেল রোগীর চাপ কমানোর লক্ষ্যে জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসা পরিসেবা প্রদানের লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা হাসপাতালগুলোতে ইতিমধ্যেই ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিসেবার ক্ষেত্রে রাজ্যে বর্তমানে ২টি মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ সহ অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগামী দিনে পিপিপি মডেলে রাজ্যে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সন্তোষজনক। তাই বহিরাজ্যের বিনিয়োগকারীরাও বর্তমানে রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে নীতি আয়োগের লজিস্টিক সহযোগিতাও চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, শিক্ষা দপ্তরের সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ডঃ সন্দীপ আর রাঠোর, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানসচিব ও সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যকে কৃষি, স্বাস্থ্য, আইটি, যোগাযোগ, পর্যটন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে নীতি আয়োগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের প্যারামিটার দেখে প্রতিনিধিদলটি বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি যে সমস্ত ক্ষেত্রের উন্নয়নের বিষয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের বিষয়েও নীতি আয়োগ প্রতিনিধিদলটি রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যে পিপিপি মডেলে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপরও বৈঠকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।