স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৩০ অক্টোবর।। ইন্দো-বাংলা রেল সংযোগ আজ আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রেন আজ পরীক্ষামূলকভাবে ত্রিপুরায় নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে সফলভাবে এসেছে। ফলে, আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পের চূড়ান্ত পর্যায় খুবই সন্নিকটে বলেই মনে হচ্ছে। সম্ভবত, আগামী ১ নভেম্বর ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে মিটার গেজ লাইনে বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রেন ত্রিপুরায় আসবে।
সোমবার ওই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় ট্রেন আসছে, জীবদ্দশায় দেখতে পারব ভাবিনি কখনো। আজ নিশ্চিন্তপুরে আগরতলা-আখাউড়া প্রকল্পে পণ্যবাহী ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল সাক্ষী থাকতে পেরে এভাবেই আবেগে ভাসেন ষাটোর্দ্ধ আন্নান মিয়া। নাতিন-কে সাথে নিয়ে ট্রেনের ট্রায়াল রান দেখে গেছেন তিনি। তাঁর দাবি, এই রেল প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি দিয়েছি। পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে আরও জমি চাইছে। উন্নয়নের প্রশ্নে আরও জমি দিতে প্রস্তুত আছি।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক দিনে দিনেই সুমধুর হচ্ছে। দুই দেশ সমস্ত ক্ষেত্রেই একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব। ফলে, বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উপকৃত করবে, তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্প এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌছেছে। ১ নভেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে পারেন বলে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই লক্ষ্যে এদিন বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে পণ্যবাহী ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে ত্রিপুরায় নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে এসেছে।
এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী থাকতে বহু স্থানীয় মানুষ ইন্দো-বাংলা সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন। সাইরেন বাজিয়ে ট্রেন আসছে, এই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করে রেখেছেন অনেকেই। তাঁদের সকলের মধ্যে আন্নান মিয়া(৬৮)-কে ভীষণ আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকেই এই নিশ্চিন্তপুর এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা আমরা। সীমান্ত লাগুয়া এই এলাকায় নানা ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু, আজ রেলের জন্য ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে। কিছুটা আবেগের সুরে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ট্রেন এই নিশ্চিন্তপুরে আসবে জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব ভাবিনি কখনো। সবই যেন স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে এখনো। তাঁর দাবি, এই রেলের জন্য জমি দিয়েছি। এখন রেলওয়ে থেকে আরও জমি চাইছে। উন্নয়নের প্রশ্নে তাতেও রাজি আছি।
তাঁর কথায়, আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ স্থাপনে নিশ্চিন্তপুর সহ আশপাশের এলাকার মানুষ ভীষণ উপকৃত হবেন। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের জন্য যখন আমাদের কাছে রেলওয়ে থেকে জমি চেয়েছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছিলাম। কিন্তু, এলাকা এবং ত্রিপুরার উন্নয়নের প্রশ্নে সাহস করে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি, সেদিন সাহস দেখাতে না পারলে আজ এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী থাকতে পারতাম না।
আন্নান মিয়া-র মতো আরও অনেকেই এই রেল প্রকল্পের জন্য জমি দিয়েছেন। তাঁদের সময়োচিত সহযোগিতা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের নতুন করিডোর খুলে দিয়েছে। তাতে, শুধু ত্রিপুরা নয়, উপকৃত হবে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল।