স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৫ জুলাই।। মানব সভ্যতার উন্নতির পথে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের বিরূপ প্রভাবে শুধু পরিবেশেই দূষিত হয় না, আমাদের শরীরেরও ক্ষতি হয়। তাই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে প্লাস্টিক বর্জনে জনজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জনের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আজ আগরতলা টাউন হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের অধীনস্থ ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্ৰণ পর্ষদ আয়োজিত ‘প্লাস্টিক মুক্ত ত্রিপুরা অভিযানের’ সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। এই কর্মসূচি আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
অনুষ্ঠানের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা বলেন, পরিবেশকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রত্যেক সচেতন নাগরিকেরই নিজের বাড়িঘরের পাশাপাশি আশপাশকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ। বাড়িঘরের আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে এবং এলাকার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিতে মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ২০০ এমন রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই এই ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে নানা রোগ তৈরি হচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যাপক প্রচার সংঘটিত করার উপরও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, রাজ্যের স্কুল, কলেজ, পাড়া সর্বত্রই প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। প্লাস্টিক মুক্ত ত্রিপুরা গড়তে সমস্ত নাগরিককে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়, কলেজ, অফিস বিল্ডিংগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উপরও গুরুত্বারোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মুক্ত ভারত গড়ার যে আহ্বান রেখেছেন সেই বার্তা জনসচেতনতার মাধ্যমে রাজ্যের সর্বত্র পৌছে দিতে হবে। প্লাস্টিক মুক্ত ত্রিপুরা গড়তে মুখ্যমন্ত্রী সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক হওয়া এবং সার্বিকভাবে প্লাস্টিক মুক্ত ত্রিপুরা গড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এই অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, দেশে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যাকে ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইবুন্যাল ফোরামে কোন ধরণের বিরূপ মন্তব্য বা জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়নি। এই কৃতিত্ব আগরতলা পুরনিগম সহ রাজ্যের স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলির সাথে যুক্ত কর্মীদের। ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সাথে যুক্ত মহিলারা প্লাস্টিকের বিকল্পে যে পরিবেশবান্ধব দ্রব্যসমূহ তৈরি করছেন, তা ক্রয় করতে তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। এর ফলে মহিলাদের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি তাদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে বলে মুখ্যসচিব উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের প্রধান সচিব কে এস শেঠি। এছাড়াও ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ মহানির্দেশক সৌরভ ত্রিপাঠী, ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য সচিব ড. বিশু কর্মকার। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের অধিকর্তা অনিমেষ দাস। অনুষ্ঠানে ‘প্লাস্টিক মুক্ত ত্রিপুরা’ শীর্ষক একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার গ্রামীণ জীবিকার মিশনের অধীনস্ত বিভিন্ন স্বসহায়ক দলগুলির দ্বারা প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে তৈরিকৃত পরিবেশবান্ধব দ্রব্যসমূহ বিষয়ক একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে স্বসহায়ক দলগুলি দ্বারা তৈরিকৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদির একটি কিট বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে অল ত্রিপুরা মার্চেন্ট এসোশিয়েশনের সভাপতির হাতে তুলে দেওয়া হয়।