অনলাইন ডেস্ক, ১৬ জানুয়ারী।।২০২২ সালের মে মাসে তারা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২২ আরোহীর সবাই নিহত হন। বছর না ঘুরতেই আবার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। রোববার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭২ জন আরোহী নিয়ে ইয়েতি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে দেশটির পুলিশ। প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থার সূত্রের খবর, ইয়েতি এয়ারলাইনসের বিমানটিতে ৪ জন ক্রু সদস্য এবং ৬৮ জন যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে ৫ জন ভারতীয়, ৫৩ জন নেপালি এবং চার জন রুশ নাগরিক, কোরিয়ার ২ জন, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ডের একজন করে নাগরিক ছিলেন বলে এএনআই জানিয়েছে।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় স্তম্ভিত নেপালসহ সারা বিশ্ব। নেপালবাসীদের মনে ভেসে আসছে পুরনো স্মৃতি। ইয়েতি এয়ারলাইনস সংস্থার বিমান দুর্ঘটনা সেই সমস্ত ক্ষতে ভরা স্মৃতিই যেন তাজা করে দিয়েছে। নেপালের দুর্গম এলাকা, খারাপ আবহাওয়া, নতুন বিমানের জন্য বিনিয়োগের অভাব এবং কার্যকরী বিমানগুলোর পরিকাঠামোর দিকে ঠিকমতো লক্ষ করা হয় না। এর ফলেই নেপালে বিমান দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। বিমান নিরাপত্তা বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত তিন দশকে (১৯৯২-২০২৩) ২৭টি বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী নেপাল।
নেপালের বিমান যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) এয়ারস্পেসে নামতে না পারে, সেই কারণে ২০১৩ সালে ইইউ নেপালের সমস্ত বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০২২ সালের মার্চে নেপাল সরকারের তরফে ইইউ-কে এই নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও ইইউ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে নেপালের বিমানগুলোকে কালো তালিকাতে রেখেছে।
১৯৬৯ সালের জুলাই মাস। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনস সংস্থার একটি বিমান নেপালের সিনারা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।বিমানবন্দরে অবতরণ করার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। ৩১ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য এই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন।
১৯৯২ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও উড়ান দেয় থাই এয়ারওয়েজ সংস্থার এয়ারবাস ৩১০। ১৪ জন ক্রু সদস্য এবং ৯৯ জন যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাচ্ছিল বিমানটি।
কাঠমান্ডু থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ে ধাক্কা লাগে এয়ারবাস ৩১০-এর। যাত্রীসহ ক্রু সদস্যদের সকলে এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। পরে তদন্ত করে জানা যায় যে, বিমানের ডানায় কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিমানের পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে যোগাযোগ বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনার কবলে পরে মৃত্যু হয় ১১৩ জনের।
একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। পাকিস্তানের করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস সংস্থার একটি বিমান।
কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে তখনও ১১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস সংস্থার বিমানটি। সেই সময় পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় সেটি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এই দুর্ঘটনায় মোট ১৬৭ জন মারা গিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালের জুলাই মাস। এভারেস্ট এয়ার সংস্থার একটি ডর্নিয়ার বিমান উড়ান দিয়েছিল নেপালের উদ্দেশে। কিন্তু বিমানবন্দরে অবতরণ করার সুযোগ পায়নি সেই বিমান। বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি।
নেপালের কাছে চুলে ঘোপ্তে পাহাড়ে ধাক্কা লাগে ডর্নিয়ার বিমানটির। বিমানে ছিলেন ৩ জন ক্রু সদস্যসহ ১৬ জন যাত্রী। এই দুর্ঘটনায় ১৯ জন মারা যান বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর।
১৯৯৩ সালের পর ৭ বছর নেপালে কোনও বড়সড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। ২০০০ সালের জুলাই মাসের একটি ঘটনা আবার পুরনো ক্ষত জাগিয়ে তোলে। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনস সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি টুইন ওটার বিমান নেপালের উদ্দেশে উড়ান দিয়েছিল।
নেপালের ধানঘাধি বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগে দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ৩ জন ক্রু সদস্য এবং ২২ জন যাত্রী এই দুর্ঘটনায় মারা যান।
২০০১ সালের ১২ নভেম্বর। নেপালের রাজপরিবারের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক অধ্যায় লেখা হয়েছিল সেদিন। নেপালের রাজকন্যা প্রেক্ষা শাহের (ছবিতে) মৃত্যু শোকের ছায়ায় ঘিরে ফেলে নেপালবাসীকে।
হেলিকপ্টারে চেপে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করছিলেন প্রেক্ষা শাহ। নেপালের পশ্চিমাংশে রারা হ্রদের কাছে পোঁছতেই হেলিকপ্টারটি ভেঙে যায়। হেলিকপ্টারের ভেতর ৬ জন ব্যক্তি এই দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে হ্রদ থেকে রাজকন্যার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের দাবি।
ইয়েতি এয়ারক্রাফ্টের একটি বিমান ২০০৬ সালের জুন মাসে আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় বিমানের ৬ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্যরা মারা যান।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ সংস্থার তরফে অভিযানে বেরিয়েছিল শ্রী এয়ার হেলিকপ্টার। সেই উপলক্ষে নেপালের তাপলজং জেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে পূর্ব নেপালের ঘুনসা এলাকার উদ্দেশে উড়েছিল হেলিকপ্টারটি।
কিন্তু গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শ্রী এয়ার হেলিকপ্টারটি। যাত্রী এবং ক্রু সদস্যসহ মোট ২৪ জন এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তদন্তে জানা যায় যে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। মাউন্ট এভারেস্ট থেকে ঘুরে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন পর্যটকেরা। বুদ্ধা এয়ার সংস্থার বিচক্রাফ্ট ১৯০০ডি বিমানে চেপে নেপালে ফিরছিলেন তারা। কিন্তু মাঝ আকাশেই ঘটে দুর্ঘটনা।
অতিবৃষ্টির কারণে আকাশে প্রচুর মেঘ জমে থাকায় তা বিমান চলাচলের পক্ষে খুব একটা অনুকূল পরিস্থিতি ছিল না। তাই খারাপ আবহাওয়া থাকার কারণে একটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে বিমানটি। দুর্ঘটনার ফলে ১৯ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ১৯ জন যাত্রীর মধ্যে ১০ জন ভারতীয় ছিলেন।
২০১২ সালের মে মাসের ঘটনা। পোখরা বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু করে জমসম বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা করছিল একটি ডর্নিয়ার বিমান। ২১ জন যাত্রীকে নিয়ে উড়েছিল বিমানটি। নেপালের উত্তরাংশে বেশি উচ্চতায় থাকা একটি বিমানবন্দরে নামার চেষ্টা করছিল ওই বিমান। কিন্তু অবতরণের সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সেটি।
পাহাড়ের একটি চূড়ায় ধাক্কা লাগে ডর্নিয়ার বিমানটির। এই দুর্ঘটনায় ১৫ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন ভারতীয় এবং তারা সকলেই তীর্থযাত্রী ছিলেন।
২০১৫ সালের মে মাস। নেপাল সেই সময় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। চারিকোট এলাকায় তখন ‘সহযোগী হাট’ নামের অপারেশন চালানো হয়। ইউএইচ-১ওয়াই হুয়ে হেলিকপ্টার চারিকোট এলাকায় ত্রাণ পৌঁছতে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান হেলিকপ্টারে থাকা ৮ জন ব্যক্তি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ৮ জনের মধ্যে দু’জন নেপালি সৈন্য ছিলেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এয়ার কাষ্ঠামণ্ডপ এয়ারক্রাফ্টের একটি বিমান। নেপালের কালিকোট জেলার কাছে পৌঁছতে বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। ঘটনায় দু’জন ক্রু সদস্য মারা যান এবং ৯ জন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি বিমান ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য নিয়ে ফিরছিল। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল বিমানটির।
কিন্তু পাইলট হঠাৎ বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় বিমানবন্দরের কাছে একটি ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ জোরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আগুন লেগে যায় বিমানটিতে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এই ঘটনায় ৪৯ জন মারা যান।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। খারাপ আবহাওয়ার কারণে উড়ানে সমস্যা দেখা দেবে বলে আবার নেপালে ফিরছিল একটি এয়ার ডাইন্যাস্টির হেলিকপ্টার। কিন্তু নেপালে ফেরার পথে একটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে হেলিকপ্টারটি। এই দুর্ঘটনায় ৭ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ওই হেলিকপ্টারে নেপালের তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীও ছিলেন। দুর্ঘটনার ফলে তিনি প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হেলিকপ্টারে যে ফুয়েল ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছিল তার অবস্থান ঠিক ছিল না। ফলে হেলিকপ্টারের ওজনের ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। এমনকি, আসন ব্যবস্থাও সঠিক ছিল না। তাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
২০২২ সালের মে মাসে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফের বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় নেপাল। তারা এয়ারপ্লেন সংস্থার একটি বিমান ২২ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে উড়েছিল।
কিন্তু নেপালের মুসতাং জেলায় পৌঁছতেই ঘটল দুর্ঘটনা। এই এলাকা পাহাড়ে ঢাকা। খারাপ আবহাওয়া থাকার কারণে পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। দুর্ঘটনার ফলে ২২ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ২২ জনের মধ্যে ৪ জন ভারতীয় ছিলেন।দুর্ঘটনার তিন দিন পর দুর্ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা
২০২২ সালের মে মাসে তারা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২২ আরোহীর সবাই নিহত হন। বছর না ঘুরতেই আবার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। রোববার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭২ জন আরোহী নিয়ে ইয়েতি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে দেশটির পুলিশ। প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থার সূত্রের খবর, ইয়েতি এয়ারলাইনসের বিমানটিতে ৪ জন ক্রু সদস্য এবং ৬৮ জন যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে ৫ জন ভারতীয়, ৫৩ জন নেপালি এবং চার জন রুশ নাগরিক, কোরিয়ার ২ জন, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ডের একজন করে নাগরিক ছিলেন বলে এএনআই জানিয়েছে।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় স্তম্ভিত নেপালসহ সারা বিশ্ব। নেপালবাসীদের মনে ভেসে আসছে পুরনো স্মৃতি। ইয়েতি এয়ারলাইনস সংস্থার বিমান দুর্ঘটনা সেই সমস্ত ক্ষতে ভরা স্মৃতিই যেন তাজা করে দিয়েছে। নেপালের দুর্গম এলাকা, খারাপ আবহাওয়া, নতুন বিমানের জন্য বিনিয়োগের অভাব এবং কার্যকরী বিমানগুলোর পরিকাঠামোর দিকে ঠিকমতো লক্ষ করা হয় না। এর ফলেই নেপালে বিমান দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। বিমান নিরাপত্তা বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত তিন দশকে (১৯৯২-২০২৩) ২৭টি বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী নেপাল।
নেপালের বিমান যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) এয়ারস্পেসে নামতে না পারে, সেই কারণে ২০১৩ সালে ইইউ নেপালের সমস্ত বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০২২ সালের মার্চে নেপাল সরকারের তরফে ইইউ-কে এই নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও ইইউ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে নেপালের বিমানগুলোকে কালো তালিকাতে রেখেছে।
১৯৬৯ সালের জুলাই মাস। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনস সংস্থার একটি বিমান নেপালের সিনারা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।বিমানবন্দরে অবতরণ করার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। ৩১ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য এই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন।
১৯৯২ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও উড়ান দেয় থাই এয়ারওয়েজ সংস্থার এয়ারবাস ৩১০। ১৪ জন ক্রু সদস্য এবং ৯৯ জন যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাচ্ছিল বিমানটি।
কাঠমান্ডু থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ে ধাক্কা লাগে এয়ারবাস ৩১০-এর। যাত্রীসহ ক্রু সদস্যদের সকলে এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। পরে তদন্ত করে জানা যায় যে, বিমানের ডানায় কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিমানের পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে যোগাযোগ বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনার কবলে পরে মৃত্যু হয় ১১৩ জনের।
একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। পাকিস্তানের করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস সংস্থার একটি বিমান।
কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে তখনও ১১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস সংস্থার বিমানটি। সেই সময় পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় সেটি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এই দুর্ঘটনায় মোট ১৬৭ জন মারা গিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালের জুলাই মাস। এভারেস্ট এয়ার সংস্থার একটি ডর্নিয়ার বিমান উড়ান দিয়েছিল নেপালের উদ্দেশে। কিন্তু বিমানবন্দরে অবতরণ করার সুযোগ পায়নি সেই বিমান। বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি।
নেপালের কাছে চুলে ঘোপ্তে পাহাড়ে ধাক্কা লাগে ডর্নিয়ার বিমানটির। বিমানে ছিলেন ৩ জন ক্রু সদস্যসহ ১৬ জন যাত্রী। এই দুর্ঘটনায় ১৯ জন মারা যান বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর।
১৯৯৩ সালের পর ৭ বছর নেপালে কোনও বড়সড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। ২০০০ সালের জুলাই মাসের একটি ঘটনা আবার পুরনো ক্ষত জাগিয়ে তোলে। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনস সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি টুইন ওটার বিমান নেপালের উদ্দেশে উড়ান দিয়েছিল।
নেপালের ধানঘাধি বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগে দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ৩ জন ক্রু সদস্য এবং ২২ জন যাত্রী এই দুর্ঘটনায় মারা যান।
২০০১ সালের ১২ নভেম্বর। নেপালের রাজপরিবারের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক অধ্যায় লেখা হয়েছিল সেদিন। নেপালের রাজকন্যা প্রেক্ষা শাহের (ছবিতে) মৃত্যু শোকের ছায়ায় ঘিরে ফেলে নেপালবাসীকে।
হেলিকপ্টারে চেপে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করছিলেন প্রেক্ষা শাহ। নেপালের পশ্চিমাংশে রারা হ্রদের কাছে পোঁছতেই হেলিকপ্টারটি ভেঙে যায়। হেলিকপ্টারের ভেতর ৬ জন ব্যক্তি এই দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে হ্রদ থেকে রাজকন্যার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের দাবি।
ইয়েতি এয়ারক্রাফ্টের একটি বিমান ২০০৬ সালের জুন মাসে আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় বিমানের ৬ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্যরা মারা যান।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ সংস্থার তরফে অভিযানে বেরিয়েছিল শ্রী এয়ার হেলিকপ্টার। সেই উপলক্ষে নেপালের তাপলজং জেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে পূর্ব নেপালের ঘুনসা এলাকার উদ্দেশে উড়েছিল হেলিকপ্টারটি।
কিন্তু গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শ্রী এয়ার হেলিকপ্টারটি। যাত্রী এবং ক্রু সদস্যসহ মোট ২৪ জন এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তদন্তে জানা যায় যে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। মাউন্ট এভারেস্ট থেকে ঘুরে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন পর্যটকেরা। বুদ্ধা এয়ার সংস্থার বিচক্রাফ্ট ১৯০০ডি বিমানে চেপে নেপালে ফিরছিলেন তারা। কিন্তু মাঝ আকাশেই ঘটে দুর্ঘটনা।
অতিবৃষ্টির কারণে আকাশে প্রচুর মেঘ জমে থাকায় তা বিমান চলাচলের পক্ষে খুব একটা অনুকূল পরিস্থিতি ছিল না। তাই খারাপ আবহাওয়া থাকার কারণে একটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে বিমানটি। দুর্ঘটনার ফলে ১৯ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ১৯ জন যাত্রীর মধ্যে ১০ জন ভারতীয় ছিলেন।
২০১২ সালের মে মাসের ঘটনা। পোখরা বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু করে জমসম বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা করছিল একটি ডর্নিয়ার বিমান। ২১ জন যাত্রীকে নিয়ে উড়েছিল বিমানটি। নেপালের উত্তরাংশে বেশি উচ্চতায় থাকা একটি বিমানবন্দরে নামার চেষ্টা করছিল ওই বিমান। কিন্তু অবতরণের সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সেটি।
পাহাড়ের একটি চূড়ায় ধাক্কা লাগে ডর্নিয়ার বিমানটির। এই দুর্ঘটনায় ১৫ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন ভারতীয় এবং তারা সকলেই তীর্থযাত্রী ছিলেন।
২০১৫ সালের মে মাস। নেপাল সেই সময় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। চারিকোট এলাকায় তখন ‘সহযোগী হাট’ নামের অপারেশন চালানো হয়। ইউএইচ-১ওয়াই হুয়ে হেলিকপ্টার চারিকোট এলাকায় ত্রাণ পৌঁছতে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান হেলিকপ্টারে থাকা ৮ জন ব্যক্তি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ৮ জনের মধ্যে দু’জন নেপালি সৈন্য ছিলেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এয়ার কাষ্ঠামণ্ডপ এয়ারক্রাফ্টের একটি বিমান। নেপালের কালিকোট জেলার কাছে পৌঁছতে বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। ঘটনায় দু’জন ক্রু সদস্য মারা যান এবং ৯ জন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি বিমান ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য নিয়ে ফিরছিল। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল বিমানটির।
কিন্তু পাইলট হঠাৎ বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় বিমানবন্দরের কাছে একটি ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ জোরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আগুন লেগে যায় বিমানটিতে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এই ঘটনায় ৪৯ জন মারা যান।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। খারাপ আবহাওয়ার কারণে উড়ানে সমস্যা দেখা দেবে বলে আবার নেপালে ফিরছিল একটি এয়ার ডাইন্যাস্টির হেলিকপ্টার। কিন্তু নেপালে ফেরার পথে একটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে হেলিকপ্টারটি। এই দুর্ঘটনায় ৭ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ওই হেলিকপ্টারে নেপালের তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীও ছিলেন। দুর্ঘটনার ফলে তিনি প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হেলিকপ্টারে যে ফুয়েল ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছিল তার অবস্থান ঠিক ছিল না। ফলে হেলিকপ্টারের ওজনের ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। এমনকি, আসন ব্যবস্থাও সঠিক ছিল না। তাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
২০২২ সালের মে মাসে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফের বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় নেপাল। তারা এয়ারপ্লেন সংস্থার একটি বিমান ২২ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে উড়েছিল।
কিন্তু নেপালের মুসতাং জেলায় পৌঁছতেই ঘটল দুর্ঘটনা। এই এলাকা পাহাড়ে ঢাকা। খারাপ আবহাওয়া থাকার কারণে পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। দুর্ঘটনার ফলে ২২ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ২২ জনের মধ্যে ৪ জন ভারতীয় ছিলেন।দুর্ঘটনার তিন দিন পর দুর্ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়
২০২২ সালের মে মাসে তারা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২২ আরোহীর সবাই নিহত হন। বছর না ঘুরতেই আবার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। রোববার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭২ জন আরোহী নিয়ে ইয়েতি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে দেশটির পুলিশ। প্রাণহানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থার সূত্রের খবর, ইয়েতি এয়ারলাইনসের বিমানটিতে ৪ জন ক্রু সদস্য এবং ৬৮ জন যাত্রী ছিলেন। তার মধ্যে ৫ জন ভারতীয়, ৫৩ জন নেপালি এবং চার জন রুশ নাগরিক, কোরিয়ার ২ জন, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ডের একজন করে নাগরিক ছিলেন বলে এএনআই জানিয়েছে।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় স্তম্ভিত নেপালসহ সারা বিশ্ব। নেপালবাসীদের মনে ভেসে আসছে পুরনো স্মৃতি। ইয়েতি এয়ারলাইনস সংস্থার বিমান দুর্ঘটনা সেই সমস্ত ক্ষতে ভরা স্মৃতিই যেন তাজা করে দিয়েছে। নেপালের দুর্গম এলাকা, খারাপ আবহাওয়া, নতুন বিমানের জন্য বিনিয়োগের অভাব এবং কার্যকরী বিমানগুলোর পরিকাঠামোর দিকে ঠিকমতো লক্ষ করা হয় না। এর ফলেই নেপালে বিমান দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। বিমান নিরাপত্তা বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত তিন দশকে (১৯৯২-২০২৩) ২৭টি বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী নেপাল।
নেপালের বিমান যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) এয়ারস্পেসে নামতে না পারে, সেই কারণে ২০১৩ সালে ইইউ নেপালের সমস্ত বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০২২ সালের মার্চে নেপাল সরকারের তরফে ইইউ-কে এই নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও ইইউ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে নেপালের বিমানগুলোকে কালো তালিকাতে রেখেছে।
১৯৬৯ সালের জুলাই মাস। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনস সংস্থার একটি বিমান নেপালের সিনারা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।বিমানবন্দরে অবতরণ করার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। ৩১ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য এই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন।
১৯৯২ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও উড়ান দেয় থাই এয়ারওয়েজ সংস্থার এয়ারবাস ৩১০। ১৪ জন ক্রু সদস্য এবং ৯৯ জন যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাচ্ছিল বিমানটি।
কাঠমান্ডু থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ে ধাক্কা লাগে এয়ারবাস ৩১০-এর। যাত্রীসহ ক্রু সদস্যদের সকলে এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। পরে তদন্ত করে জানা যায় যে, বিমানের ডানায় কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিমানের পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে যোগাযোগ বার বার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনার কবলে পরে মৃত্যু হয় ১১৩ জনের।
একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। পাকিস্তানের করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস সংস্থার একটি বিমান।
কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে তখনও ১১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস সংস্থার বিমানটি। সেই সময় পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় সেটি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এই দুর্ঘটনায় মোট ১৬৭ জন মারা গিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালের জুলাই মাস। এভারেস্ট এয়ার সংস্থার একটি ডর্নিয়ার বিমান উড়ান দিয়েছিল নেপালের উদ্দেশে। কিন্তু বিমানবন্দরে অবতরণ করার সুযোগ পায়নি সেই বিমান। বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিমানটি।
নেপালের কাছে চুলে ঘোপ্তে পাহাড়ে ধাক্কা লাগে ডর্নিয়ার বিমানটির। বিমানে ছিলেন ৩ জন ক্রু সদস্যসহ ১৬ জন যাত্রী। এই দুর্ঘটনায় ১৯ জন মারা যান বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর।
১৯৯৩ সালের পর ৭ বছর নেপালে কোনও বড়সড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। ২০০০ সালের জুলাই মাসের একটি ঘটনা আবার পুরনো ক্ষত জাগিয়ে তোলে। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনস সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি টুইন ওটার বিমান নেপালের উদ্দেশে উড়ান দিয়েছিল।
নেপালের ধানঘাধি বিমানবন্দরে পৌঁছনোর আগে দুর্ঘটনার শিকার হয় বিমানটি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ৩ জন ক্রু সদস্য এবং ২২ জন যাত্রী এই দুর্ঘটনায় মারা যান।
২০০১ সালের ১২ নভেম্বর। নেপালের রাজপরিবারের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক অধ্যায় লেখা হয়েছিল সেদিন। নেপালের রাজকন্যা প্রেক্ষা শাহের (ছবিতে) মৃত্যু শোকের ছায়ায় ঘিরে ফেলে নেপালবাসীকে।
হেলিকপ্টারে চেপে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করছিলেন প্রেক্ষা শাহ। নেপালের পশ্চিমাংশে রারা হ্রদের কাছে পোঁছতেই হেলিকপ্টারটি ভেঙে যায়। হেলিকপ্টারের ভেতর ৬ জন ব্যক্তি এই দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে হ্রদ থেকে রাজকন্যার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল বলে স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের দাবি।
ইয়েতি এয়ারক্রাফ্টের একটি বিমান ২০০৬ সালের জুন মাসে আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় বিমানের ৬ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্যরা মারা যান।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ সংস্থার তরফে অভিযানে বেরিয়েছিল শ্রী এয়ার হেলিকপ্টার। সেই উপলক্ষে নেপালের তাপলজং জেলায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখান থেকে পূর্ব নেপালের ঘুনসা এলাকার উদ্দেশে উড়েছিল হেলিকপ্টারটি।
কিন্তু গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শ্রী এয়ার হেলিকপ্টারটি। যাত্রী এবং ক্রু সদস্যসহ মোট ২৪ জন এই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তদন্তে জানা যায় যে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। মাউন্ট এভারেস্ট থেকে ঘুরে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন পর্যটকেরা। বুদ্ধা এয়ার সংস্থার বিচক্রাফ্ট ১৯০০ডি বিমানে চেপে নেপালে ফিরছিলেন তারা। কিন্তু মাঝ আকাশেই ঘটে দুর্ঘটনা।
অতিবৃষ্টির কারণে আকাশে প্রচুর মেঘ জমে থাকায় তা বিমান চলাচলের পক্ষে খুব একটা অনুকূল পরিস্থিতি ছিল না। তাই খারাপ আবহাওয়া থাকার কারণে একটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে বিমানটি। দুর্ঘটনার ফলে ১৯ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ১৯ জন যাত্রীর মধ্যে ১০ জন ভারতীয় ছিলেন।
২০১২ সালের মে মাসের ঘটনা। পোখরা বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু করে জমসম বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা করছিল একটি ডর্নিয়ার বিমান। ২১ জন যাত্রীকে নিয়ে উড়েছিল বিমানটি। নেপালের উত্তরাংশে বেশি উচ্চতায় থাকা একটি বিমানবন্দরে নামার চেষ্টা করছিল ওই বিমান। কিন্তু অবতরণের সময় দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সেটি।
পাহাড়ের একটি চূড়ায় ধাক্কা লাগে ডর্নিয়ার বিমানটির। এই দুর্ঘটনায় ১৫ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন ভারতীয় এবং তারা সকলেই তীর্থযাত্রী ছিলেন।
২০১৫ সালের মে মাস। নেপাল সেই সময় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল। চারিকোট এলাকায় তখন ‘সহযোগী হাট’ নামের অপারেশন চালানো হয়। ইউএইচ-১ওয়াই হুয়ে হেলিকপ্টার চারিকোট এলাকায় ত্রাণ পৌঁছতে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান হেলিকপ্টারে থাকা ৮ জন ব্যক্তি। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ৮ জনের মধ্যে দু’জন নেপালি সৈন্য ছিলেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এয়ার কাষ্ঠামণ্ডপ এয়ারক্রাফ্টের একটি বিমান। নেপালের কালিকোট জেলার কাছে পৌঁছতে বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। ঘটনায় দু’জন ক্রু সদস্য মারা যান এবং ৯ জন যাত্রীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি বিমান ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য নিয়ে ফিরছিল। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল বিমানটির।
কিন্তু পাইলট হঠাৎ বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় বিমানবন্দরের কাছে একটি ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ জোরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আগুন লেগে যায় বিমানটিতে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এই ঘটনায় ৪৯ জন মারা যান।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। খারাপ আবহাওয়ার কারণে উড়ানে সমস্যা দেখা দেবে বলে আবার নেপালে ফিরছিল একটি এয়ার ডাইন্যাস্টির হেলিকপ্টার। কিন্তু নেপালে ফেরার পথে একটি পাহাড়ে ধাক্কা মারে হেলিকপ্টারটি। এই দুর্ঘটনায় ৭ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ওই হেলিকপ্টারে নেপালের তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারীও ছিলেন। দুর্ঘটনার ফলে তিনি প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হেলিকপ্টারে যে ফুয়েল ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়েছিল তার অবস্থান ঠিক ছিল না। ফলে হেলিকপ্টারের ওজনের ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। এমনকি, আসন ব্যবস্থাও সঠিক ছিল না। তাই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হেলিকপ্টারটি।
২০২২ সালের মে মাসে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফের বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় নেপাল। তারা এয়ারপ্লেন সংস্থার একটি বিমান ২২ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে উড়েছিল।
কিন্তু নেপালের মুসতাং জেলায় পৌঁছতেই ঘটল দুর্ঘটনা। এই এলাকা পাহাড়ে ঢাকা। খারাপ আবহাওয়া থাকার কারণে পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে বিমানটি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। দুর্ঘটনার ফলে ২২ জন মারা যান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, ২২ জনের মধ্যে ৪ জন ভারতীয় ছিলেন।দুর্ঘটনার তিন দিন পর দুর্ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।