স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৫ আগস্ট।। জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই রাজ্যের উন্নয়নের সার্বিক সফলতা সম্ভব। রাজ্যের জনগণ আজ উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে অংশীদার। সকলের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়েই সরকার আগামীদিনে এগিয়ে চলার দিশায় কাজ করছে।
মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদ নিয়ে সরকার রাজ্যকে দেশের সামনে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। আজ আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মুখ্যমন্ত্রী সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।
আসাম রাইফেলস ময়দানে স্বাধীনতা দিবসের মূল অনুষ্ঠানে কারামন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন এবং আরক্ষা ও রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের মানুষের আর্থসামাজিক বিকাশ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রতিভার অন্বেষণ, স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের মধ্য দিয়ে রাজ্যের অগ্রগতি ঘটছে।
নীতি আয়োগ প্রকাশিত সর্বশেষ ইনডেক্স অনুসারে উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের নিরিখে ত্রিপুরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে আজ সামনের সারিতে রয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণের মধ্য দিয়ে রাজ্যকে মডেল রাজ্যে পরিণত করতে সরকার দায়বদ্ধ। আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি নির্ভর এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী উপকৃত হয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় উপকৃত হয়েছেন ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬৯৭ জন। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ১০৯ মেট্রিকটন আনারস দুবাই ও কাতার সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি হয়েছে। কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির বিকাশে অগ্রাধিকার দেওয়ায় রাজ্যের কৃষকগণ উপকৃত হয়েছেন ও বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন। রাজ্যের মোট ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৪১ হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে। কৃষির বিকাশে রাজ্য সরকার খুব শীঘ্রই নতুন সেচ নীতি প্রণয়ন করবে।
রাজ্য সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে খারিফ মরশুম থেকে ন্যূনতম সহায়কমূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে কৃষকদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫২১ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এরফলে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৩৯.৭২ কোটি টাকা সরাসরি প্রদান করা হয়েছে। মৎস্যচাষের মাধ্যমেও মৎস্যচাষীদের আয় যেমন বৃদ্ধি হচ্ছে তেমনি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজ্যে মাছের উৎপাদনও বেড়ে হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৭৪ মেট্রিকটন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে দুধ, মাংস, ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্প চালুর ফলে স্ত্রী বাছুরের জন্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। ত্রিপুরা আগর পলিসি অনুমোদন করার ফলে রাজ্যের আর্থিক প্রগতি ত্বরান্বিত হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জল জীবন মিশনে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৪০৮টি বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
এতে গ্রামীণ এলাকার ৫২.৭৪ শতাংশ ও শহর এলাকায় ৪৬.৪৬ শতাংশ বাড়ি পানীয়জল সরবরাহের আওতায় এসেছে। জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ১৬টি একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিল্লায় একলব্য মডেল ডে বোর্ডিং স্কুলের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
জনজাতি এলাকায় যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ও রাজ্যে গুণগত রাবার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ২০২১-২২ সালে রাজ্য সরকার চিফ মিনিস্টার রাবার মিশন প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পে আগামী ৫ বছরে রাজ্যের ৩০ হাজার হেক্টর এলাকা রাবার চাষের আওতায় আসবে। মিজোরাম থেকে আসা ৩৭ হাজার ১৩৬ জন ব্লু (রিয়াং) শরণার্থীদের রাজ্যে পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ চলছে।
এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০ কোটি টাকার প্যাকেজ প্রদান করেছে। ব্লু শরণার্থীদের পুনর্বাসন এলাকায় ২০টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর পরম্পরাগতভাবে রাজ্যের বনবাসীদের বনের উপর অধিকার নিশ্চিত করতে পাট্টা জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য রাজ্যে বনাধিকার অ্যাক্ট চালু হয়েছে।
এতে রাজ্যের বনবাসীদের বিভিন্ন সরকারি সুবিধা প্রদান করা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্পের বিকাশ ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগের ভারতীয় অংশের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে। আশা করা হচ্ছে ভারতীয় অংশের রেল সংযোগ ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। রাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপনের প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিজ ফেলিসিটেশন অ্যাক্ট ২০১৮ রাজ্য সরকার চালু করেছে।
এরফলে ব্যবসা ও বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারুমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপন এক নতুন উদ্যোগের সূচনা করেছে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে কাজে লাগিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রকে আকৃষ্ট করবে। রাজ্যে রেশম চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পশ্চিম জেলার খামারবাড়িতে একটি রেশম চাষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আর্থিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে পর্যটন শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে রাজ্যের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের উন্নয়নের কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হচ্ছে।