আনন্দসাগর এডিসি ভিলেজ মডেল ভিলেজের পথে এগিয়ে যাচ্ছে

 

।। বিদ্যা মোহন জমাতিয়া ।। এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করে রাজ্যের সর্বত্র দ্রুত গতিতে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করেন। তাই গ্রামীণ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যকে মডেল রাজ্য গড়া সম্ভব নয়। গ্রামীণ এলাকার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সরকারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্র। চলতি অর্থ বছরে রাজ্য সরকার গ্রামীণ বা স্থানীয়স্তরে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে এক নতুন প্রকল্প চালু করেছে।

নতুন প্রকল্পটির নাম হচ্ছে ‘মুখ্যমন্ত্রী মডেল ভিলেজ স্কিম’। এই স্কিমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চিহ্নিত গ্রামপঞ্চায়েত বা ভিলেজ কমিটিগুলিকে সামগ্রিক বিকাশের দিকে পরিচালিত করে এমন ধরণের কার্যক্রমের রূপরেখা তৈরী করা। যা গ্রামীন বা ভিলেজ এলাকার সকল অংশের জনগণের জীবনযাত্রার গুণগতমান উন্নত করা অর্থাৎ স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি করা সহ উন্নত জীবন জীবিকার সুযোগ তৈরী করা।

কাঞ্চনপুর মহকুমার দশদা ব্লক সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আনন্দসাগর এডিসি ভিলেজ। এই ভিলেজে ৮৩৯টি পরিবারের বসবাস। সবমিলিয়ে লোকসংখ্যা ৩,২৩৮ জন। এর মধ্যে তপশিলী জনজাতি ২,৬৫৩ জন। তপশিলী জাতির ৩৭৫ জন এবং অন্যান্য ২১০ জন। এই ভিলেজে আনন্দবাজার, আনন্দসাগর, বড়ছড়া, জ্ঞাপনপড়া, মানিকরায় পাড়া, সুভাষনগর, হাজাছড়া গ্রাম রয়েছে। এই ভিলেজে এমজিএনরেগায় স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির পাশাপাশি নিয়মিত কর্মসংস্থানও হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ অর্থে এই ভিলেজে মোট ৩০টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২২টি গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ) প্রকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে এই ভিলেজে ৫৭টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৮টি শৌচালয় তৈরী করা হয়েছে। বর্তমানে আনন্দনগর এডিসি ভিলেজে পানীয়জলের উৎস রয়েছে ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ৪টি ডিপ টিউবওয়েল রয়েছে।

এছাড়াও চলতি অর্থ বছরে অটল জলধারা মিশন প্রকল্পের আওতায় এই ভিলেজের প্রত্যেক পরিবারে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌছানোর জন্য আরও নতুন ৩টি ডিপ টিউবওয়েল খনন করা হয়েছে। আর ২টি স্মলবোর ডিপ টিউবওয়েল খননের কাজ চলছে। এতে ২৭৯টি পরিবার উপকৃত হবে। এই ভিলেজে শিক্ষার পরিকাঠামো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে ১টি হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল, ৩টি জেবি স্কুল এবং ১৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। এই ভিলেজে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। আর ১০০ শতাংশ গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ি মা-র নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে এই ভিলেজে।

গ্রামীণ এলাকার জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্ববলম্বী করার লক্ষ্যে এই ভিলেজের ইতিমধ্যেই ১৪টি স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। আরও নতুন ৪০টি স্বসহায়ক দল গঠন করে সবকয়টি স্বসহায়ক দলকে ত্রিপুরা রুরাল লাইভলিহুড মিশন-র আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর চলতি বছরে উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় এই ভিলেজ এলাকার ১০৩টি পরিবারকে পেঁপে, লেবু, সুপারির চারা ও সব্জী বীজের প্যাকেট প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের উদ্যোগে গতবছরে এমজিএন রেগার মাধ্যমে এই ভিলেজের ৪ হেক্টর জায়গায় সুপারিবাগান করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প সঠিকভাবে রূপায়ণের মাধ্যমে আনন্দসআগর এডিসি ভিলেজ মডেল ভিলেজ গড়ে উঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?