অনলাইন ডেস্ক, ৪মে।। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের যোধপুরে ঈদের দিন ও তার আগের দিন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোতের নিজ শহর যোধপুরের উদয় মন্দির ও নাগোরি গেট এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারির পাশাপাশি গুজব ঠেকাতে ইন্টারনেটও বন্ধ রাখা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ঈদের দিন ও তার আগের দিনের সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে বুধবার সকালেও গোলমাল শুরু হয়। এ ঘটনায় সকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সংঘর্ষের ঘটনায় এর আগে ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোত শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন। ঘটনার পর বুধবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে অংশ নিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, অতিরিক্ত মুখ্যসচিবসহ পদস্থ আমলারা হেলিকপ্টারে চেপে পৌঁছান যোধপুরে।
যোধপুরের ১০টি থানা সংলগ্ন অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে উদয় মন্দির, নাগোরি গেট, খন্দ ফলসা, প্রতাপ নগর, দেব নগর, সুর সাগর এবং সরদারপুরা। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার শহরের জালোরি গেট গোলচক্করে ঈদের পতাকা লাগানো নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এদিন রাতে সংঘর্ষরতদের পাথর নিক্ষেপে অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি পেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
যোধপুরে তিন দিনব্যাপী পরশুরাম জয়ন্তী উৎসব পালনকারী ও ঈদ পালনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে মঙ্গলবার ঈদের দিনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ শহরের কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করে।
মুখ্যমন্ত্রী গেহলোত সংঘর্ষে বিজেপির ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ করেন।
এনডিটিভিকে মঙ্গলবার তিনি বলেন, এটি বিজেপির কাজ, কারণ লাগাম ছাড়া মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব সামাল দিতে না পারছে না তারা। তাই মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে ভেবেচিন্তেই এসব করছে তারা।
সম্প্রতি ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য এতে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে দিল্লি, গুজরাট, মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে রাম নবমী, হনুমান জয়ন্তী ও রোজাকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ক্রমবর্ধমান এসব দাঙ্গা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা ও এসব সহিংসতা দমনে সরকারি উদ্যোগগুলোর সমালোচনা করেছে দেশটির বিরোধীদল, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা ঘটনার দায় বিজেপির ওপরে চাপিয়ে বলেছেন- রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত, কর্ণাটকের মতো যে সব রাজ্যে ভোট আসন্ন, সেখানে পরিকল্পিত ভাবে গোলমাল তৈরি করা হচ্ছে। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা ভোট শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার অশান্তি উধাও। সুরজেওয়ালার অভিযোগ, বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি।
যদিও সুরজেওয়ালার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। যোধপুরের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, অশান্তির ঘটনায় অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ করা না হলে জালোরি গেটে ব্যাপক প্রতিবাদে শামিল হবেন তাঁরা।