৷৷ বিশ্বজিৎ বণিক ।। উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার শুরু থেকেই বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রামীণ এলাকায় পেভার ব্লক সড়ক। এই পেভার ব্লক সড়কগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই সরকার রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার সড়কগুলিকে পেভার ব্লক সড়কে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। খোয়াই ব্লকে এমনই একটি সড়ক নির্মিত হয়েছে।
সড়কটি দিয়ে ব্লকের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরাঙ্গটিলা বাজার সংলগ্ন খোয়াই তেলিয়ামুড়া রাস্তা থেকে দক্ষিণ দিকে আলাপ্পা পর্যন্ত যাওয়া যায়। আজ এই পেভার ব্লক সড়কটি বদলে দিয়েছে দক্ষিণ আলাপ্লাবাসীর জীবনযাত্রার মান। স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার গতবছর এই সড়কটিকে পেভার ব্লকে তৈরি করার কাজ শুরু করে। বর্তমানে রাস্তার অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের দাবিকে বাস্তবায়ন হতে দেখে এলাকার জনগণ খুব খুশি।
খোয়াই তেলিয়ামুড়া রাস্তা থেকে দক্ষিণ আলাপ্পা রাস্তাটি পেভার ব্লক দিয়ে নির্মাণ হওয়ার ফলে এলাকার বিকাশ দেব ও সুমিত পাল জানান, রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় গ্রামের সকল অংশের জনগণের সুবিধা হয়েছে। আগে রাস্তাটি খুব খারাপ অবস্থায় ছিল। রাস্তাটি ইট সলিং ছিল। যাতায়াতের উপযুক্ত ছিল না। মানুষের খুব অসুবিধা হতো। বর্ষার সময় মালপত্র, কৃষিজ পণ্য পরিবহণ করা, বিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের যাওয়া আসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই রাস্তা। তারা জানান, নবনির্মিত পেভার ব্লক রাস্তার পাশে রয়েছে শ্রীশ্রী জ্ঞান মন্দির বিদ্যালয়, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, পশু হাসপাতাল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, কৃষি দপ্তরের সার বিতরণ কেন্দ্র এবং একটি মন্দির।
শ্রীশ্রী জ্ঞান মন্দির বিদ্যালয়টিতে বাগানবাজার, দ্বারিকাপুর, পশ্চিমদ্বারিকাপুর, রামচন্দ্রঘাট, পূর্বরামচন্দ্রঘাট এবং রসরাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখন এই নবনির্মিত রাস্তাটি দিয়ে খুব আনন্দের সাথে জোটবেঁধে বিদ্যালয়ে আসে। বিগত দিনগুলিতে রাস্তার বেহাল দশার দরুণ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাল ডাল নেওয়ার কোনও উপায় ছিল না।
লোকেরা মাথায় করে সাইকেল দিয়ে চাল, ডাল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়ে যেতো। বর্তমানে চাল ডাল ভর্তি গাড়ি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে, সার ভর্তি গাড়ি সার বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছায়। মলিন দেব, সুদর্শন দেব, প্রণব দেবের মতো অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, সব্জি তাদের বাড়ি থেকে সহজে বাজারজাত করতে পারছে। এর ফলে কৃষকদের অনেক সাশ্রয় হয়। রাস্তা তৈরি হওয়াতে দুলাল পাইনকা, স্বপন পাইনকা, শঙ্কর দেবের মতো অনেক এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রাপ্ত ঘরের সরঞ্জাম ইট, বালি, সিমেন্ট, রড ভর্তি গাড়ি তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে। রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় ফলে রাস্তার পাশে অবস্থিত মন্দিরে আগত ব্যক্তিরাও খুশি। এলাকার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে এই মন্দিরকে ঘিরে।
রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে জনগণ এই মন্দিরে এসে পূজার্চনা করেন। সহজেই তারা মন্দিরে আসা যাওয়া করতে পারছেন। রাস্তা তৈরি হওয়ায় সকল অংশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটছে।
এলাকাবাসী এবং লক্ষ্মী নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রীতি কর এবং উপপ্রধান তপন দাস জানান, রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় পন্ডব পাড়া, গারো বস্তি, শান্তিনগর, আমতলি এলাকার মানুষও উপকৃত হবে। দীর্ঘদিন বেহাল রাস্তার দরুণ অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন এলাকার জনগণ।
বর্তমানে তার অবসান ঘটলো। গ্রামের প্রধান ও উপপ্রধান জানান, নবনির্মিত রাস্তাটির পাশে সোলার লাইট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। পূর্ত দপ্তরের খোয়াই মহকুমা কার্যালয়ের এসডিও সঞ্জীব দাস জানিয়েছেন, পূর্ত দপ্তরের মাধ্যমে গৌরাঙ্গটিলা বাজার সংলগ্ন দক্ষিণ আলাপসার নবনির্মিত পেভার ব্লক রাস্তাটির কাজ গত বছর শুরু হয়েছিল।
রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ১,২০০ মিটার। বর্তমানে রাস্তার অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তাটি মোট প্রস্থ ৫.৫ মিটার। এর মধ্যে কেরিজ ওয়ে রয়েছে ৩.৫ মিটার। রাস্তাটিতে ২টি বক্স কালভার্ট, ৫০০ মিটার ড্রেন রয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রাস্তাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬০ মিটার আরসিসি ওয়াল এবং সিসি ব্লক রাস্তার পাশে বসানো হয়েছে।