স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ এপ্রিল।।ত্রিপুরাকে একটি শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহিলা সশক্তিকরনের উপর গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকার কাজ করছে। এই লক্ষ্যে রাজ্যের মহিলাদের জন্য চাকুরির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ সহ মহিলা কল্যাণে গুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। গত ৮ মার্চ, ২০২২ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজ্য সফরে এসে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। রাজ্যের মহিলাদের জন্য ঐদিনটি অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ আগরতলা মাতঙ্গিনী-প্রীতিলতা সভাগৃহে মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী, অধ্যাপক ও অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মহিলা সশক্তিকরণে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে একথা বলেন। মতবিনিময় সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার মহিলাদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ করছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় ১১ জন মহিলা মন্ত্রী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কাজকর্ম সামলাচ্ছেন। আগে প্রচলিত ধারনা ছিল অর্থ দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর কোনো মহিলা মন্ত্রী চালাতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী সেই ধ্যান ধারনা ভেঙ্গে দিয়ে নির্মলা সীতারমনকে অর্থ দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাতে মহিলা সশক্তিকরনে কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিবাচক মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালো সংস্কারবোধ বাড়ী থেকে তৈরী হয় এবং তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিকশিত হয়। বর্তমান সময়ে ছাত্রছাত্রীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি দেশের সমসাময়িক ঘটনার বিষয়েও সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। তবেই তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ দ্রুত ঘটবে। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ট্যুইটার ও ফেসবুক পেজ নিয়মিত অনুসরন করা আবশ্যক। এরফলে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প, সরকারী সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারবে এবং তা নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সবসময় ইতিবাচক ও পরোপকারী মনোভাব নিয়ে এগুতে হবে। যে কোন কাজ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে করলে তাতে সাফল্য নিশ্চয়ই আসবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সবসময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ইতিবাচক মনোভাবের কারনেই দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয়েছে। রাজ্যের বর্তমান সরকারও প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনকে পাথেয় করে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে রাজ্যের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে।
রাজ্যকে আরোও উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রশাসনিকস্তরের বিভিন্ন শীর্ষপদে মহিলাদের অংশগ্রহন আরোও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মহিলা সশক্তিকরণ নীতি তৈরী করেছে। এই পলিসির মাধ্যমে চাকুরী ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন যেমন সংরক্ষন করা হয়েছে, তেমনি কর্মরত মহিলাদের জন্য হোস্টেল তৈরীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রচলিত ধ্যানধারনার বাইরে ব্যতিক্রম কিছু করলে তা সবাই মনে রাখে। রাজ্য সরকার রুদ্রসাগর এলাকায় বসবাসকারি ১ হাজার মহিলাকে ৫০ হাজার হাঁসের বাচ্চা প্রদান করেছে। সেই মহিলারা হাঁস পালনের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিমাসে ভালো টাকা আয় করতে পারছেন। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য মহিলাদের আর্থিকভাবে সশক্তিকরন করা। তাহলে রাজ্যও দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। বর্তমান রাজ্য সরকার সেই দিশায় কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের শুধু নিজের জন্যই ভাবলে চলবে না। সমাজের জন্যও তাদের ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষনীয় বিষয় তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী ও অধ্যাপকদেরও প্রধানমন্ত্রীর পরীক্ষা পে চর্চা অনুষ্ঠানটি দেখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ভোকাল ফর লোকাল আহ্বানে অনুপ্রানিত হয়ে মহিলা কলেজের ছাত্রীরা পরিত্যক্ত বিভিন্ন জিনিষের দ্বারা তৈরী বিভিন্ন শিল্পকার্য অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করেন। কলেজর দুইজন ছাত্রী অপর্ণা পাল ও পৌষালি দাস তাদের আঁকা প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের হাতে তুলে দেন।