অনলাইন ডেস্ক, ২৯ এপ্রিল।। রাশিয়ার কবল থেকে ক্রিমিয়াসহ ‘পুরো ইউক্রেনকে’ মুক্ত করতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। রাশিয়ান বাহিনীকে পুরো ইউক্রেন থেকে হটিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার লন্ডনে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ভাষণে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয় পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এখন ‘কৌশলগতভাবে অপরিহার্য’।
তার একথার মাধ্যমে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে ব্রিটেনের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেল এবার।
এতদিন পর্যন্ত ব্রিটেন বলে এসেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ইউক্রেন হামলা ‘অবশ্যই বিফল হবে, এবং সেই বিফলতা সবাই দেখবে’।
ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনের মাত্রাকে দ্বিগুণ করতে হবে বলেও জানান তিনি বলেন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়াকে গোটা ইউক্রেন থেকে বের করে দিতে হবে। এজন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে, আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হবে’।
এর অর্থ হলো গত ২৪শে ফেব্রুয়ারির পর থেকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের যেসব জায়গা দখল করেছে শুধু সেইসব জায়গাই না, আট বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনের যেসব জায়গা দখল করেছিল- যেমন ক্রাইমিয়া কিংবা ডনবাস অঞ্চলের কিছু অংশ- সেই সব জায়গা থেকেও রুশ বাহিনীকে বহিষ্কার করতে হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস আরও বলেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তিনি পশ্চিমকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সফল হলে ‘ইউরোপে আরও দুর্দশায় পড়বে এবং বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে’। ট্রাস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি দীর্ঘ ঘটনা হতে পারে এবং ইউরোপকে ‘দীর্ঘ যাত্রার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে’।
যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন যে পুতিনকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলে রাখতে দিলে তিনি জর্জিয়া এবং মলদোভার মতো দেশগুলোতেও আক্রমণ শুরু করবেন। লিজ ট্রাস তার বক্তৃতায় পুতিনকে ‘মরিয়া দুর্বৃত্ত অপারেটর’ বলে অভিহিত করেছেন, যার আগ্রাসন প্রতিরোধের সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত। তিনি বলেন যে, গ্রেট ব্রিটেন এবং তার মিত্রদের উচিত ‘পুরো ইউক্রেন থেকে রাশিয়াকে বের করে দেওয়ার জন্য আরও সামনে এবং দ্রুত এগিয়ে যাওয়া’।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন ট্রাসের মন্তব্য, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করার পর থেকে পশ্চিমের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
ওয়ালেস স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা ক্রমাগত বলেছি যে রাশিয়ার ইউক্রেনের সার্বভৌম অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া উচিত’।
কিন্তু ক্রিমিয়া উপদ্বীপ পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রিটেন ইউক্রেনকে সামরিকভাবে সহায়তা দেবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় ঢোকার আগে অনেক দূর যেতে হবে’।
‘আমি মনে করি, আমি অবশ্যই যা বলব তা হল, আমরা ইউক্রেনের সার্বভৌম অখণ্ডতাকে সমর্থন করছি। আমরা এটি সব সময়ই করেছি। অবশ্যই এর মধ্যে ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে’।
‘কিন্তু আপনি জানেন, প্রথম এবং সর্বাগ্রে আসুন রাশিয়াকে, যেখানে তারা এখন তাদের আক্রমণের পরিকল্পনায় রয়েছে, সেখান থেকে বের করে দেই’।
বুধবার দিন শেষে লন্ডনে কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকে লিজ ট্রাস বলেন যে, ব্রিটেন তার সামরিক সহায়তা দ্বিগুণ করছে।
পশ্চিমা মিত্রদেরকেও ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধবিমানসহ সামরিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে পুরো ইউক্রেন থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আরও বহুদূর এবং দ্রুত এগিয়ে যাব’।
তবে ওয়ালেস জোর দিয়ে পুনরায় বলেছেন যে, যুক্তরাজ্যের কোনো ট্যাঙ্ক এবং বিমান সরাসরি ইউক্রেনে যাবে না বরং পোল্যান্ডের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো হবে।
তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে দূরপাল্লার গন্ধক ক্ষেপণাস্ত্র, যা সমুদ্র থেকে ছোঁড়া হবে, ‘ভূমিতে ব্যবহার করা হবে’। কিন্তু ব্রিটেন জাহাজ-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্য পরীক্ষা করে দেখছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইউক্রেন থেকে আসা যে শস্য, যা আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে, তার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাশিয়াকে কৃষ্ণ সাগর থেকে হটিয়ে দিতে হবে’।
তবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে সব পশ্চিমা দেশই যে একমত তা বলা যাবে না। কারণ তারা মনে করে শুধু অস্ত্র ব্যবহার করে কিংবা আলোচনা না করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া সম্ভব না।