৷৷ তুহিন আইচ ৷৷ কমলপুরে ধলাই নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম মেথিরমিয়া। কৃষিজীবী অংশের মানুষের বসবাস এই গ্রামে। মেথিরমিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিতে উৎপাদিত ফসল ধলাই জেলার প্রধান প্রধান বাজারের আকর্ষণীয় পণ্য। প্রায় এক বছর আগে এই গ্রামে সরকারি উদ্যোগে বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প।
সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পে মেথিরমিয়ার কৃষকদের স্বপ্ন সবুজ হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ উর্জা সুরক্ষা ইভাম উত্থান মহা অভিযান (পিএম-কুসুম) প্রকল্পে মেথিরমিয়ায় ১৩ জন কৃষকের জমিতে সৌরচালিত জলসেচের পাম্প বসানো হয়েছে। এতে দীর্ঘদিনের সেচের সমস্যার অবসান হয়েছে বলে অভিমত কৃষকদের।
সালেমাস্থিত ধলাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট প্রদীপ কুমার দাস জানালেন, পিএম কুসুম প্রকল্পে সৌরচালিত পাম্পের মাধ্যমে বহু অনাবাদি জমি এখন আবাদি হয়ে যাবে। কৃষককে সেচের জলের জন্য এখন আর আক্ষেপ করতে হবে না। পিএম কুসুম প্রকল্পটির পরিকল্পনা মূলত: জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য। রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা ট্রেডা (ত্রিপুরা রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি) এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে সোলার প্ল্যাট সহ পাম্প মেশিন দেওয়া হচ্ছে। প্রতি হেক্টর (আড়াই আনি) জমি পিছু এক হর্স পাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প মেশিন পাচ্ছেন কৃষকরা। প্রধানত পাম্প মেশিন বসানোর কাজ দুই ভাবে হচ্ছে। জলের উৎসের কাছাকাছি জমিতে প্রকল্পের অর্থে ১,২৫,০০০ টাকা ব্যয়ে মেশিন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুবিধাভোগীদের মেশিন বসানো বাবদ শুধুমাত্র ২,৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। জলের উৎস থেকে দূরবর্তী জমিতে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জল মেশিনে তোলা হচ্ছে। ব্যয় করা হয়েছে ১,২৯,০০০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সারা রাজ্যব্যাপী শুরু হয়েছে বলে জানান ট্রেডার প্রকৌশলী স্বরাজ দেববর্মা। জুমের আলি খান, সিরাজ আহমেদ খান, গৌতম দাস, অধীর দাস, তাজুদ্দিন আহমেদ খানরা আজ এই সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প পেয়ে যারপরনাই খুশি।
কথা প্রসঙ্গে বছর ষাটের কৃষক জুমের আলি খান বলেন, আমার প্রায় ২০ থেকে ২৫ কানি জমি। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ কানির বেশির জমি আবাদি ছিল না। সেচের সমস্যায় প্রায় অর্ধেক জমি অনাবাদি থাকতো। এই পাম্প বসানোয় এখন পুরো জমি আবাদি হয়েছে। ধানের পরে জমিতে এখন সব্জিও চাষ হয়েছে। শীতকালেও সেচের সমস্যায় আর ঘরে বসে থাকতে হয়নি। একজনের কৃষকের কথাতেই প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের চিত্র ফুটে উঠে। অধীর দাস, গৌতম দাসরা এই পরিবেশ বান্ধব ও সম্পূর্ণ বায়হীন সেচের মাধ্যমে আবাদ করেছেন তাদের জমি। উৎপাদন করছেন সব্জি, ধান। এতো বছর জলসেচের মাধ্যম ছিল শ্যালো মেশিন। ডিজেল চালিত পাম্প। যার ফলে সেচের জন্য এক একজনের বছরে সেচ বাবদ অনেক টাকা ব্যয় হতো। সেচের অভাবে নদী চরের বহু জমি এই কারণে অনাবাদি থাকতো। কিন্তু বর্তমানে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বর্তমানে জলসেচ হয়ে গেছে ব্যয়হীন।
সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প বদলে দিয়েছে ধলাই নদীর পারের মেথিরমিয়ার কৃষকদের ভাগ্য। মুখে ফুটে উঠেছে অনাবিল সন্তুষ্টি। এই পদ্ধতিতে কোনও জ্বালানির খরচ নেই। সেচের জলে চরের অনাবাদি জমিগুলিও আজ ভরে উঠেছে সবুজ ফসলে। অন্য কৃষকের জমিতেও সেচের সুযোগ করে দিচ্ছেন সুবিধাভোগীরা।সফল বাস্তবায়নে পিএম কুসুম প্রকল্পে নবজাগরণ ঘটবে জলসেচে। জমির উৎপাদনশীলতার মূল চাবিকাঠি হলো সারাবছরব্যাপী সেচ। সেচের এই ঘাটতি কৃষকজীবন থেকে দূরীভূত করতে পারে এই পরিবেশ বান্ধব সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প। বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। মেথিরমিয়ার মতো বহু গ্রামে কৃষকের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন সবুজ হবে এই পিএম কুসুমের মাধ্যমে। নিশ্চিতভাবে তা আশা করা যায়।