অনলাইন ডেস্ক, ২০ এপ্রিল।। ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয়দের তীব্র লড়াই চলছে। ৩০০ মাইল দীর্ঘ এক রণক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ বাহিনীকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
ইতিমধ্যে লুহানস্কের ক্রিমিনা এবং অন্য একটি ছোট শহর রুশ বাহিনী দখল করে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে ইউক্রেন সরকার।
সেখানকার আঞ্চলিক প্রশাসক সেরহি হাইদাই বলেন, বিভিন্ন শহরের ওপর ভারী গোলাবর্ষণ করছে রুশ সৈন্যরা।
এতে চার বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে।
শহরটিতে যুদ্ধের আগে ২০ হাজার মানুষ বাস করতেন। ক্রেমিনা ক্রামাতোরস্ক থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই ক্রামাতোরস্কে লুহানস্কের আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবন রয়েছে।
ক্রামাতোরস্ক ও এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক ভবন দখল করার জন্য প্রানপণ চেষ্টা চালাবে রাশিয়া। কারণ এখান থেকে ডনবাস অভিযান পরিচালনা করা তাদের জন্য সহজ হবে।
দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, ডনবাস দখলের এই নতুন অধ্যায়ে রাশিয়ার বাহিনী পুরো রণক্ষেত্র বরাবর একের পর এক হামলা চালাচ্ছে।
এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার রাত থেকে রুশ সেনারা ইউক্রেনের ভেতরে ১ হাজার ২৬০টি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে এবং ভারী কামান থেকে গোলাবর্ষণ করেছে। বিমান থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর স্লোভিয়ানস্কসহ ডনবাস অঞ্চলের ১৩টি জায়গায় আঘাত হেনেছে।
ডনবাস অঞ্চলের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এডুয়ার্ড বাসুরিন বলছেন, রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ডোরা মারিওপোলের বিশাল ইস্পাত কারখানায় ইউক্রেনের বাহিনীর শেষ অবস্থানের ওপরও হামলা শুরু করেছে।
তিনি রাশিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল রাশিয়া টুয়েন্টি ফোরকে বলেছেন, ওই অঞ্চলে রুশ বিমান এবং গোলন্দাজ বাহিনী কমান্ডোদের সাহায্য করছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী আবারও মারিওপোলের ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানিয়েছে।
বিবিসির নিরাপত্তা প্রতিবেদক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ডনবাসে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে।
কারণ রুশদের মোকাবেলা করতে ইউক্রেনের হাতে পর্যাপ্ত রশদ ও গোলাবারুদ নেই। ইউক্রেন যে গোলাবারুদের সঙ্কটে আছে এ বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।
ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার তার বিশ্লেষণে বলেছেন, ইউক্রেনের যে সংখ্যক যোদ্ধা ডনবাসে যুদ্ধ করছেন রাশিয়ার তুলনায় তাদের সংখ্যা খুবই কম।
ডনবাসে অবস্থান করছে রাশিয়ার ৭৬টি ট্যাকটিক্যাল ব্যাটালিয়ন। আর একেকটি ব্যাটালিয়নে গড়ে এক হাজার সেনা আছেন। তাদের সবার একটাই লক্ষ্য ডনবাস জয় করা।
তাছাড়া রুশদের কাছে আছে বিপুল পরিমাণ কামান ও হামলা করার যুদ্ধাস্ত্র।
ইউক্রেনে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, যদি রাশিয়ার এত বড় সৈন্যদলকে যদি হারানোর কোনো সুযোগ আমাদের থাকে তাহলে এজন্য আমাদের প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ ভারী সরঞ্জাম, অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
অস্ত্র পেলে ইউক্রেন যে বেশ ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে এ বিষয়টিও বেশ ভালো ভাবেই জানে রাশিয়া।
আর এ কারণে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো থেকে যে পথ দিয়ে ইউক্রেনে অস্ত্র আসছিল সেগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
এমনকি যদি ইউক্রেন রুশদের বিপক্ষে ডনবাস যুদ্ধে জয় পায় তাতেও সহসাই এ সংঘাত থামবে না। ডনবাস যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই আশঙ্কা বিবিসির বিশ্লেষক ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের।