বিষাক্ত গ্যাস দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হল দেগঙ্গার পাঁচ যুবকের

অনলাইন ডেস্ক,১৯ এপ্রিল।। অশোকনগরের পর এবার দেগঙ্গা। ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাস দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হল দেগঙ্গার পাঁচ যুবকের। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও চার যুবক। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নাড়া জেলার ভাজপে থানা এলাকায়। মাছের হেডলেস কারখানার ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে পাঁচ যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে মৃত পাঁচ যুবকেরা হলেন দেগঙ্গার দেগঙ্গা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দোগাছিয়া গ্রামের মিরাজুল ইসলাম (২০) ও সরাফত আলী (২১)। নুরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ফাজিলপুর গ্রামের সামিউল ইসলাম (১৭) ও ওমর ফারুক (২১)। এবং আমুলিয়া পঞ্চায়েতের রায়পুরে বাড়ি নিজামুদ্দিন ওরফে বাবলু সাহাজি (১৯)। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। প্রশাসনের সহযোগিতায় মৃতদেহ আনতে কর্নাটকে পৌঁছেছেন আত্মীয়-স্বজনরা।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বনভূমির কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ বলেন, ‘এরা সকলে কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরের দক্ষিণ কন্নাড়া জেলার ভাজপে থানা এলাকায় দিন মজুরের কাজ করতে গিয়েছিলেন। ওই কারখানার নোংরা জল ও বর্জ্য পাশের একটি ম্যানহোলে ফেলা হয়। মাঝেমধ্যে কারখানার শ্রমিকদের দিয়েই ম্যানহোল পরিষ্কার করান কারখানা কর্তৃপক্ষ। রবিবার বিকেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ চেম্বার পরিষ্কার করার জন্য শ্রমিকদের নির্দেশ দেয়। প্রথমে ওমর ফারুক নামে। সে উঠছে না দেখে সামিউল নামে। সে না ওঠায় আর একজন ম্যানহোলে নামে। এই ভাবে একের পর এক বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয়। দ্রুত মৃত এবং আহতদের দেগঙ্গায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মাস আগে দেগঙ্গার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাজের জন্য ছেলেরা কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরের দক্ষিণ কন্নাড়া জেলার ভাজপে থানা এলাকায় দিন মজুরের কাজ করতে যায়। তারা সেখানে একটি মাছের কোম্পানিতে মাছ প্যাকেজিং এর কাজ করত।

পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, দেগঙ্গার পাঁচ যুবক ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাস থাকা ম্যানহোলের মধ্যে কাজ করার সময়ে মারা যায়। এই ঘটনায় আরও চারজন যুবক আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা চলছে। এমন ঘটনায় দেগঙ্গায় শোকের ছায়া নেমেছে।

সোমবার দেগঙ্গায় গেলে মৃতদের পরিবারের পক্ষে জানানো হয় রবিবার রাতে তাদের কাছে ছেলেদের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছায়। কর্নাটকে সঙ্গীদের কাছে মৃত্যুর খবর জানতে চাওয়া হলে তারা বলে, একটি ম্যানহোলের ড্রেন পরিষ্কার করতে নেমেছিল একজন। সে উঠছে না দেখে আর একজন নামে। এই ভাবে ন’জন নামলে সকলেই ম্যানহোলের মধ্যে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসের জন্য মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয় আর ৪ জন গুরুত্বর অসুস্থ হওয়ায় তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই খবর দেগঙ্গার গ্রামে পৌঁছাতেই মৃত এবং অসুস্থ যুবকদের পরিবারে শোকের ছায়া আসে।

এই ঘটনায় সোমবার সকালে মৃত ও আহতদের বাড়িতে যান উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বনভূমির কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ। রবিবার রাতেই পরিবারের লোকজন প্লেনে করে ম্যাঙ্গালোরের দক্ষিণ কন্নড়া এলাকায় মৃতদেহ আনার জন্য পাড়ি দিয়েছে তা জানিয়ে মৃত ওমর ফারুকের বাবা সিয়েফ আলি বলেন,’মোবাইলের মাধ্যমে কর্নাটক প্রশাসনের পক্ষে ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাই। গ্যাস লিক করে পাড়ার আরও একটা ছেলে সামিউল ইসলামের মৃত্যু হয়। আমার আর এক ছেলেও ওখানে কাজ করে। সেও ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছে।’

সিয়েফ আলির কথায়, এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফোন এসেছে। ওমর ফারুকের বিয়ে হয়ে গেছে। সন্তানও আছে। এখন কি ভাবে সংসার চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না।

মৃত ওমর ফারুকের বাবা সিয়েফ আলী বলেন ঈদের আগেই তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ছেলে জানিয়েছিল রবিবারই তাদের শেষ কাজ। তারপরেই তারা ঈদ পালনের জন্য বাড়িতে রওনা দেবে। কিন্তু ছেলে আর বাড়িতে ফিরল না।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?