অনলাইন ডেস্ক, ৮ এপ্রিল।। আগ্রাসনের ৪৪তম দিনে এসে ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রুশ সেনার মৃত্যুর কথা স্বীকার করল রাশিয়া।
রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ব্রিটিশ চ্যানেল স্কাই নিউজকে বলেছেন, ইউক্রেনে উল্লখযোগ্য সংখ্যক রাশিয়ান সেনার হতাহতের ঘটনা আমাদের জন্য একটি বড় ট্র্যাজেডি।
তিনি আরও বলেন যে, তিনি আশা করছেন, রাশিয়া ‘আগামী দিনগুলোতে’ তার যুদ্ধের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কারের পর পেসকভ এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৩ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় ৯৩ জন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তিরস্কারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। উত্তর ইউক্রেনের বুচা শহরে রাশিয়ান সেনাদের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের পর এই পদক্ষেপ নিল জাতিসংঘ।
ওদিকে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নৃশসংসতার অভিযোগ এনেছেন। জেলেনস্কি রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে রাজধানী কিয়েভের কাছে অবস্থিত আরকেটি শহর বোরোদিয়াঙ্কায়ও নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ এনেছেন।
তবে পুতিনের মুখপাত্র পেসকভ বুচা শহর বা অন্য কোথাও রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে আনা নৃশসংতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যে, ‘আমরা জাল এবং মিথ্যার দিনে বাস করছি’। তার দাবি, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবিগুলো ভুয়া।
তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, রাশিয়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। গত ২৫ মার্চ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল যে, তাদের ১৩৫১ জন সৈন্য ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের দাবি, তারা প্রায় ১৯ হাজার রুশ সেনাকে হত্যা করেছে।
তবে রাশিয়া বা ইউক্রেন কারো দাবির সত্যতাই স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, একদিকে, রাশিয়া তার হতাহতের হার কমিয়ে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন নিজ সেনাদের মনোবল বাড়াতে রুশ সেনাদের হতাহতের সংখ্যা বেশি করে দেখাচ্ছে। পশ্চিমা নেতাদের বিশ্বাস, ইউক্রেন যুদ্ধে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে।
পেসকভ আরও দাবি করেছেন যে, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেন অভিযানের সমাপ্তি ঘটাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে’। এবং আমরা আশা করি যে আগামী দিনগুলোতে, অদূর ভবিষ্যতে, এই অভিযান তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে বা রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এর শেষ হবে’।
রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে পূর্ব ইউক্রেনের ওপর পূর্ণ শক্তি নিয়ে হামলা শুরু করেছে। ফলে যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত সাধারণ নাগরিকদেরকে সম্ভব হলে পালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে রুশ গোলাবর্ষণের তীব্রতা ইতিমধ্যেই সাধারণ নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে বাধা সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
মার্কিন সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে রাশিয়াকে দেওয়া ‘সবচেয়ে পছন্দের জাতি’ বাণিজ্যিক মর্যাদা বাতিলে ভোট দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার প্লাটিনাম, রাসায়নিক, লোহা এবং ইস্পাতের মতো পণ্যের উপর নতুন শুল্ক এবং রাশিয়ার আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। যা রাশিয়ার জন্য আরও ক্ষতির কারণ হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী ১২০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার কয়লা আমদানির উপর ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সম্মত হয়েছে। রাশিয়ান অর্থনীতিতে যার অবদান বছরে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন সংসদে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
তিন বলেন, ‘কোন সন্দেহ নেই, বর্তমান পরিস্থিতিকে রাশিয়ার জন্য গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন বলা যেতে পারে। স্নায়ু যুদ্ধের অন্ধকার সময়েও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি’।
তবে তিনি এই দাবিও করেছেন যে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিত রয়েছে এবং অর্থনীতি ভালো অবস্থায় ফিরে আসবে।
তার এই দাবির সত্যতার প্রমাণও মিলতে শুরু করেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন দর পতনের পর রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মূল্য যুদ্ধ-পূর্ববর্তী পর্যায়ে ফিরে এসেছে।
ওদিকে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি পশ্চিমাদের কাছে ফের ভারী অস্ত্র-শস্ত্র সরবরাহ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, তার বাহিনীর ‘অস্ত্রের প্রয়োজন যা তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ে সহায়তা করবে এবং এটিই হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা’।