অনলাইন ডেস্ক, ২৮ মার্চ।। ইউক্রেনের একাধিক শহরে এখনো একনাগাড়ে গোলাবর্ষণ করে চলেছে রাশিয়া। তারই মধ্যে সোমবার তুরস্কে ফের মুখোমুখি বৈঠকে বসছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধি। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এই বৈঠক চলবে বলে জানানো হয়েছে। বস্তুত, রবিবারেও ভিডিও বৈঠক হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সেখানেই সোমবার মুখোমুখি আলোচনায় বসার প্রস্তাব ওঠে। দুই দেশই তাতে সম্মত হয়। রাশিয়ার প্রতিনিধি অবশ্য সংবাদসংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার এবং বুধবার আলোচনা হবে।
এরদোয়ানের বক্তব্য :
সোমবার বৈঠক শুরু হওয়ার আগে ফের রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। রবিবার এবিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে তার কথা হয়েছে। এরপরেই এরদোয়ান একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি ইস্তাম্বুলে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের আলোচনা হওয়ার কথাও বলেছেন। তবে বৈঠক কবে শুরু হবে এবিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। এরদোয়ান দুই দেশের কাছে দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে শান্তিপ্রস্তাবে সই করার আহবান জানিয়েছেন।
জেলেনস্কির বক্তব্য :
রবিবার ৯০ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেছেন, তৃতীয় কোনো দেশ যদি নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়, তাহলে নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ অবস্থান মেনে নিতে আপত্তি নেই ইউক্রেনের।
কূটনীতির পরিভাষায় নিউট্রাল স্ট্যাটাস একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এর অর্থ, ইউক্রেন ন্যাটো বা ওই ধরনের গোষ্ঠীর অংশ হবে না। পরমাণু অস্ত্রও রাখতে পারবে না। জেলেনস্কি বলেছেন, শান্তির স্বার্থে এই বিষয়টি মেনে নিতে তিনি রাজি আছেন। কিন্তু তৃতীয় কোনো দেশকে গ্যারান্টার হিসেবে থাকতে হবে। তাদের জানাতে হবে, ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব তারা নেবে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে থেকেই মস্কো দাবি করে আসছে, ইউক্রেনকে তারা ন্যাটোর সদস্য হতে দেবে না। কারণ, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে রাশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি স্পষ্টভাবেই তার অবস্থান জানিয়েছেন। তুরস্কের বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার ভাষা ব্যবহার নিয়েও রাশিয়ার বেশকিছু বক্তব্য আছে। এবিষয়েও আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন জেলেনস্কি।
একদিকে আলোচনা অন্যদিকে লড়াই
জার্মানির কাছ থেকে রবিববার পাঁচ হাজার ১০০টি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার অস্ত্র কিনেছে ইউক্রেন। এই অস্ত্রগুলি কাঁধে নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। আরজিডাব্লিউ৯০ এইচএইচ সিরিজের এই অস্ত্রগুলোকে ম্যাটাডোরও বলা হয়। ২৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে জার্মানির কাছ থেকে এই অস্ত্রগুলো কিনেছে ইউক্রেন। জার্মানির একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর মধ্যে দুই হাজার ৬৫০টি অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে। বাকি দুই হাজার ৪৫০টি অস্ত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
পোল্যান্ডের কাছেও ট্যাঙ্ক আর ফাইটার জেট চেয়েছে ইউক্রেন। তবে পোল্যান্ড কবে তা ইউক্রেনকে দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জেলেনস্কির সাক্ষাৎকার প্রচারে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার যোগাযোগ পর্যবেক্ষক বিষয়ক সংস্থা রোসকোমনাদজোর জেলেনস্কির এই সাক্ষাৎকার প্রচারে বিরত থাকতে রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নেওয়া রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর বিষয়ে তদন্ত শুরুর ঘোষণাও দিয়েছে সংস্থাটি।
রাশিয়ার যোগাযোগ পর্যবেক্ষক সংস্থাটি জানিয়েছে, রাশিয়ার সংবাদাধ্যমগুলোর একজন উপস্থাপক ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
রোববার দেওয়া সংস্থাটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভলোদিমির জেলেনস্কির সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রুশ মিডিয়াকে সতর্ক করছে রোসকোমনাদজোর’।