রুশ হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে ন্যাটো

অনলাইন ডেস্ক, ২৫ মার্চ।। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের আজ এক মাস পূর্ণ হতে চলেছে। গত মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল রাশিয়া। এক মাসে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেশটি। ৩০-৪০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। দেশেই আশ্রয়হীন আরও কয়েক লাখ মানুষ। এরই মধ্যে গতকাল ইউক্রেন-পরিস্থিতি নিয়ে ন্যাটোর জরুরী বৈঠক বসেছিল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে।

বৈঠক শুরুর আগে ন্যাটোর সদস্যদের সামনে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জলেনস্কি। বলেন, ‘রাশিয়া কোনও কিছু মানছে না। আরও সামরিক সাহায্য প্রয়োজন। আমাদের বাঁচান’। জবাবে বৈঠকে অপ্রত্যাশিত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি ন্যাটো। ইউক্রেনে আরও সামরিক সাহায্য পাঠানোর কথা জানিয়েছে তারা। এবং সেই সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছে, জোটের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোকে রক্ষা করতে আরও এককাট্টা ন্যাটো। এই বৈঠক শেষ হতেই বসেছে জি-৭ এর বৈঠক।

বৈঠক শুরুর আগে ন্যাটোর সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জেলেনস্কি। এ পর্যন্ত তারা যা যা সাহায্য করেছেন, সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ জানান। তবে এদিন আর তার মুখে ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। ইউক্রেনের আকাশকে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার আবেদনও আর করেননি তিনি। তা যে হওয়ার নয়, বুঝে গিয়েছেন জেলেনস্কি।

এদিন জেলেনস্কি বলেন, ‘আপনাদের বিমানের ১ শতাংশ আমাদের দিন। ১ শতাংশ ট্যাঙ্ক দিন। মাত্র ১ শতাংশ চাইছি!’ তার অভিযোগ, কোনও নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করতে বাকি রাখছে না রাশিয়া। মস্কো নিজেই সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল, তারা শব্দের চেয়ে ১০ গুণ গতিসম্পন্ন, অতিশক্তিশালী হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। জেলেনস্কির দাবি, ফসফরাস বোমাও ব্যবহার করেছে রাশিয়া। এটি অনেকটা পাউডারের মতো ছড়িয়ে যায়। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে ওঠে এবং ভয়াবহ ভাবে পুড়িয়ে দেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালেই এই ফসফরাস বোমা ছুড়েছে রুশ বাহিনী। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন’।

রুশ হামলার কড়া নিন্দা করে ন্যাটো জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনকে সাহায্য করে আসছে তারা। ইউক্রেনর সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ন্যাটো। তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ন্যাটোর বার্তা, ইউক্রেনকে তারা সাহায্য করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সাইবার-নিরাপত্তা দেবে, রাসায়নিক, জৈব, তেজস্ক্রিয় ও পরমাণু অস্ত্র থেকে নিরাপত্তা দেবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের মানুষকে বাঁচাতে সাহায্য তো করবেই। পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর কথা জানিয়েছে ন্যাটোর সদস্যেরা।

রুশ ডুমার ৩২৮ জনকে বৃহস্পতিবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। ৪৮টি প্রতিরক্ষা বিষয়ক ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের কথা ঘোষণা করেছে তারা। ন্যাটোর ৩০ সদস্যের প্রত্যেকেই বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে বার্তা, অবিলম্বে বন্ধ করা হোক যুদ্ধ। ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করা হোক’। বেলারুশকেও এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার বার্তা দিয়েছে তারা। গত ১৬ মার্চ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত রাশিয়াকে হামলা বন্ধের নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে ন্যাটো। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেনে হামলার ঘটনা শুধু সেই দেশই নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে।

ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ বলেন, ‘ইউক্রেন ছাড়িয়ে এই যুদ্ধ যাতে অন্য কোনও দেশে ছড়িয়ে না-পড়ে, আরও বড় আকার না-নেয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর’।

ইউরোপ আসলে ভয় পাচ্ছে, ইউক্রেন সীমান্ত ছাড়িয়ে যুদ্ধের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি-সহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে জানানো হয়েছে বৈঠকে। যেমন, পূর্ব ইউরোপে নতুন ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করবে ন্যাটো। আকাশপথে ও নৌপথে সামরিক মহড়া বাড়বে। ইউক্রেন-পার্শ্ববর্তী বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় অতিরিক্ত সেনাদল তৈরি করা হবে।

সম্মেলন শেষে এক বিবৃতিতে ন্যাটো বলে, আমরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করার এবং ইউক্রেন থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। এবং ২ মার্চ ২০২২ তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত ইউক্রেনে রুশ আগাসনের বিরুদ্ধে গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেলারুশকে এর সম্পৃক্ততা বন্ধ করার আহ্বান জানাই। রাশিয়াকে গত ১৬ মার্চ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের রায় মেনে নিতে হবে এবং অবিলম্বে সামরিক অভিযান স্থগিত করতে হবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বিশ্ব নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক নিয়মের উপর এর আক্রমণ বিশ্বকে আরও কম নিরাপদ করে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের উত্তেজনামূলক বক্তব্যগুলো দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার মাধ্যমে রাশিয়াকে দেখাতে হবে যে তারা শান্তি আলোচনার বিষয়ে আন্তরিক। আমরা রাশিয়াকে স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার এবং এরপর ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণরূপে সৈন্য প্রত্যাহারের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য আলোচনায় গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানাই।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?