বইমেলা ২০২২ ।। সামাজিক সভ্যতার আদি থেকেই মেলা মানুষের চিরাচরিত সমাজ জীবনের এক বিশেষ অঙ্গ।পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই বছরে একাধিকবার আয়োজিত হয়ে থাকে বই মেলা বা গ্রন্থ মেলা। বইমেলার মাধ্যমে একটি দেশের সাহিত্য-শিল্প-সাংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া যায়। এটি জ্ঞানান্বেষী কোটি কোটি মানুষের জ্ঞান-তীর্থ। বই ছাড়া শিক্ষিত জ্ঞান পিপাসু মানুষের জীবন একপ্রকার অচল।
অন্যদিকে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপাদান হলো বই বা গ্রন্থ। মেলায় যেসব দূর্লভ বই হাতের নাগালে পাওয়া যায় অন্য অনেক সময়েই তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। মানুষকে বইমুখী করে তোলার জন্য বইমেলার রয়েছে এক অনবদ্য অবদান। বই আমাদের পরম বন্ধু। সমাজকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা আর সেই শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি বই থেকে। ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন-
“আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থাকে তার জন্যে আমি বইয়ের কাছে ঋণী।”
বই মেলার উদ্দেশ্যই হল – নানা রকমের বই দেখা, যার মধ্য দিয়ে জ্ঞানের প্রতি গড়ে উঠে আকর্ষণ; নানা বইয়ের সঙ্গে গড়ে নতুন সখ্যতা। প্রবীণ থেকে বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা মেলার আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন বই এর সাথে পরিচিত হয়। মেলার আনন্দের মধ্য দিয়ে এভাবেই শিক্ষার বিস্তার ঘটে।
বইমেলায় প্রত্যেক বছর পৃথিবীর প্রতিটি কণার বিপুল সম্ভাবনাময় নানা নতুন লেখক-কবিদের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তাদের এই সুপ্ত সম্ভাবনাময় প্রতিভার কথা হয়তো বইমেলা ছাড়া আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হতো না।বই আমাদের মনের আকাশ কে বড় করে।
সভ্যতার ধারাবাহিকতা রক্ষায় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সংরক্ষণের, সমাজ ও ব্যক্তির মুক্তি সাধনে মানুষের জীবনের লক্ষ্য ,ব্যক্তি মনের সর্বপ্রকার তুচ্ছতা সংকীর্ণতাকে উন্নত ও উচ্চতর ভাবলোকে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু তাই নয় ব্যক্তিসত্তা থেকে বেরিয়ে সমাজের মানুষের সঙ্গে সুন্দরের সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় বইমেলার প্রভাব অনস্বীকার্য।
তাছাড়া একজন লেখক হলেন মেধার পরিবেশক। পাঠকই ক্রমান্বয়ে লেখক হয়ে ওঠেন। পাঠের মাধ্যমে লেখার আভ্যন্তরীন প্রয়োজনীয় বিষয়ের অভাবকে তিনি আবিষ্কার করেন। ফলে তিনিও তার নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা শুরু করেন। আর এভাবেই জন্ম নেয় নতুন লেখক। বইমেলায় তাই নতুন লেখক ও নতুন চিন্তার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার অবারিত সুযোগ থাকে।
আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা সাহিত্য চর্চার একটি সুগভীর ইতিহাস রয়েছে। সেইক্ষেত্রে আগরতলা বইমেলা আমাদের মনের মেলা। রাজ্যের সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে বইমেলার গুরুত্ব অপরসীম। এবারকার বইমেলার থিম আমার ত্রিপুরা, আমার গর্ব। আগামী ২৫ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগরতলার বইমেলা উদ্বোধন করবেন। বইমেলায় বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বইয়ের স্টল অংশগ্রহণ করবে। সকলের সামগ্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবারের বইমেলাকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। ৪০তম বইমেলা এক স্মরণীয় মেলায় পরিণত হবে বলে আশা করা যায়।