স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৭ মার্চ।। রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। যুবকরা আজ স্বরোজগারি মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলছে। রাজ্যের সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশে রাজ্যের বর্তমান সরকার কাজ করে চলছে।
আজ হাঁপানিয়াস্থিত আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গন ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৩২তম ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন রাজ্যে নতুন নতুন ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শিল্পপতিরা এখন রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর আয়োজিত এই মেলা চলবে আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, নতুন সরকার আসার পর রাজ্যের মানুষের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের মধ্যে এখন স্বরোজগারের মানসিকতা তৈরী হয়েছে। যুবক যুবতীরা আত্মনির্ভর হতে সচেষ্ট হচ্ছেন।
বর্তমান সরকার প্রতিটি ঘরে রোজগার বৃদ্ধির ব্যবস্থা করে চলেছে। তিনি বলেন, বহির্রাজ্যের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে রপ্তানি বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়ে হয়েছে ৭৩৩ কোটি টাকার উপর। তিনি আরও বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার মানুষের কল্যাণে নেওয়া কর্মসূচিগুলিকে রাজ্যের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত নিয়ে যেতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যের মানুষ ওয়ান কার্ড ওয়ান রেশনিং সিস্টেমের সুবিধা পাচ্ছেন। ফায়ার এনওসি প্রদান করা থেকে শুরু করে বিল্ডিং নির্মাণ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে সরলীকরণ করা হয়েছে। এতে আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে শিল্প উদ্যোগীরা রাজ্যে শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাজের সরলীকরণের উদ্দেশ্যে সমস্ত সরকারি এজেন্সিকে যুক্ত করে স্বাগত পোর্টাল সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম চালু করা হয়েছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রের উন্নতিসাধনে পরিকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি যোগাযোগের উন্নতির উপরও অনেক নির্ভরশীল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার সড়ক, রেল সহ বিমান পরিষেবার উন্নতিতেও উদ্যোগী রয়েছে।
তিনি বলেন, গোমতী নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। সোনামুড়া থেকে উদয়পুর পর্যন্ত ১০টি জোট নির্মাণ করা হবে। রাজ্যের আরও ৫টি থেকে ৬টি রেল স্টেশনে বাণিজ্যিক পণ্য উঠানামানোর ব্যবস্থা করা হবে। রাজ্য সরকার বাঁশ, রাবার, কৃষি, চা ইত্যাদি সর্ব ক্ষেত্রের উন্নতিসাধনে দৃঢ় মানসিতা নিয়ে কাজ করে চলছে।
মহিলা স্বশক্তিকরণেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এর ফলে রাজ্যের মহিলারা আজ আত্মনির্ভর হয়ে উঠছেন। উন্নয়ন আজ রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষ আজ উন্নয়ন নিজ চোখে অনুধাবন করতে পারছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি সাত্তুমে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সুবিধা, সাব্রমের মৈত্রি সেতু নির্মাণ, জাতীয় সড়কের উন্নতিসাধন, পরিকাঠামোর প্রভূত উন্নয়ন ইত্যাদির কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রেও জনকল্যাণমুখী সরকার মানুষের স্বার্থে কাজ করে চলছে। আমরা প্রতিদিন কোন না কোন সরকারি জনকল্যাণমূলক কাজের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার রাজ্যকে আত্মনির্ভর রাজ্য রূপে এবং রাজ্যের যুবাদের আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কিছুদিন পূর্বে সম্পন্ন হওয়া ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা ইনভেস্টমেন্ট সামিটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। এই সামিটে দেশ-বিদেশের বহু শিল্প উদ্যোগপতি এবং স্টেক হোল্ডাররা অংশগ্রহণ করেছিলেন। সম্মানিত অতিথির ভাষণে ত্রিপুরায় নিযুক্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সহকারি হাই কমিশনার মহ; আরিফ মোহাম্মদ বলেন, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে সংস্কৃতির মিল রয়েছে।
নতুন সরকার আসার পর রাজ্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্পর্কও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে এই সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায় বলেন, রাজ্যের যুবারা এখন উদ্ভাবনী ভাবনায় আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার প্রমাণ দিচ্ছেন।
এই প্রসঙ্গে দুবাই আন্তর্জাতিক মেলায় ভারতবর্ষ থেকে যোগ দেওয়া ৩০ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে রাজ্যের এক ব্যবসায়ীর সুযোগ পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষের মানসিকতার অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। রাজ্যের এখন রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এবছর শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় মোট স্টল রয়েছে ২৪৯টি। এর মধ্যে সরকারি স্টল ৮৪টি, ১৫টি রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণের, বহিরাজ্যের রয়েছে ৬০টি স্টল। তাছাড়াও মেলায় ৯০টি স্থানীয় স্টল অংশ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যানাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার ও বিধায়ক মিমি মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা, ত্রিপুরা হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বলাই গোস্বামী, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব এবং শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা স্বপ্না দেবনাথ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব প্রশান্ত কুমার গোয়েল।