অনলাইন ডেস্ক, ২৬ ফেব্রুয়ারী।।রুশ আগ্রাসনের তৃতীয় দিনে রাশিয়ান সেনাদের হামলার মুখে ইউক্রেনে রাজধানী কিয়েভ যখন প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, ঠিক তখনই শহরটি ছেড়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ শহরে পালিয়ে গেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শনিবার রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমার স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের লভিভে পালিয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, জেলেনস্কি ইতোমধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী ত্যাগ করেছেন।
নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন লিখেছেন, জেলেনস্কি দ্রুত কিয়েভ ছেড়েছেন।
গতকাল তিনি ইউক্রেনের রাজধানীতে ছিলেন না। দলবল নিয়ে তিনি কিয়েভ ছেড়ে লভিভে পালিয়েছেন। সেখানে তিনি এবং তার সহযোগীরা আগেই থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন।
ভলোদিন আরও বলেছেন, জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তা আগেই রেকর্ড করে রাখা ছিল। ইউক্রেনের আইনসভার সদস্যদের কাছে থেকে জেলেনস্কির পালিয়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন রুশ এই স্পিকার।
এর আগে, ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। যদিও শনিবার এক ভিডিও বার্তায় আত্মসমর্পণের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অনেক ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। আমি সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়েছি ও নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছি- এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু আমি এখানেই আছি। আমরা অস্ত্র ছাড়ব না এবং দেশ রক্ষা করব’।
ওদিকে, শনিবার বিকালে আরেকটি নতুন ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যেভাবে রাজধানী কিয়েভ দখল এবং তার সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছিল তা নস্যাত করে দিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
এসময় তিনি রাশিয়ার নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন যুদ্ধ বন্ধে তাদের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চাপ প্রয়োগ করেন।
নতুন ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা তাদের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছি’। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাজধানী কিয়েভ এবং এর আশেপাশের প্রধান শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বলেও জোর দাবি করেছেন তিনি।
এসময় তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলা রাশিয়ান নাগরিকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং যুদ্ধ বন্ধে তাদেরকে পুতিনের ওপর চাপ বজায় রাখতে বলেছেন এই বলে যে, ‘তারা আপনাদের সঙ্গে মিথ্যা বলছে, আমাদের সঙ্গে মিথ্যা বলছে, সমগ্র বিশ্বের কাছে মিথ্যা বলছে’।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় এখন পুরোদস্তুর যুদ্ধ চলছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সেনাদের মধ্যে। আজ শনিবার রুশ বাহিনীর হামলার তৃতীয় দিনের শুরুতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে লড়াই।
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে। বহু বেসামরিক নাগরিককে অস্ত্র হাতে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার সাধারণ নাগরিকদের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে ইউক্রেন সরকার। পালিয়ে না গিয়ে দেশ রক্ষায় রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানানো হয়েছে পুরুষদের। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের ১৮ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হয়।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক তার দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, রাজধানী কিয়েভসহ খেরসন, মাইকোলাইভ, ওডেসা এবং মারিউপোল শহরেও সংঘর্ষ চলছে।
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ যুদ্ধের মধ্যেও সারা দেশে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে উল্লেখ করে পোডোলিয়াক জোর দিয়ে বলেন যে, ‘কিয়েভ এবং কিয়েভের আশে-পাশের অঞ্চলের পরিস্থিতিও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
পোডোলিয়াক বলেন, ‘শনিবার সকাল পর্যন্ত ৩৫০০-রও বেশি রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছে এবং ২০০ জনকে বন্দী করা হয়েছে’।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাশিয়ান বাহিনী চেষ্টা করছে রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখলে নেয়ার। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে।