স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৭ সেপ্টেম্বর।। ১০ যুব আইএএস ও ১০ চিকিৎসককে নিয়ে গড়া টিম সমন্বয়করেই রুখবে কোভিড সংক্রমন ৷ দুদিনের মধ্যে ত্রিপুরায় শুরু হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি৷ করোনা পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করতে এক গুচ্ছ পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার৷ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার দায়বদ্ধতা থেকেই, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও শৃঙ্খলিত করার উদ্দেশে রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করেছে৷
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দেখা করেন বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে৷ ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও চিকিৎকসকের আলোচনার পরেই কোভিড চিকিৎসাকে ঢেলে সাজতে একাধিক গুরুত্রপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১০ জন যুব আইএএস ও ১০ জন চিকিৎসককে নিয়ে টিম গঠন করা হবে৷ ১০ টি আলাদা আলাদা বিষয় দেখভাল করবেন তাঁরা প্রতিটি বিষয়ের দায়িত্বে থাকবেন একজন করে আইএএস ও একজন চিকিৎসক৷
চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় গড়ে তুলে করোনাকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷ কোভিড কেয়ার-অক্সিনেটেড বেড, কোভিড হাসপাতাল ও কোভিড কেয়ার সেন্টারে থাকা রোগীদের খাওয়াদাওয়া, মাস্ক-স্যানিটাইজার- ওষুধ, হোম আইসোলেশন, করোনা চিকিৎসার উপকরণ, গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা, কঠিন অসুখ থাকা করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রাখা এবং অক্সিজেন সাপ্লাই এই ১০টি বিষয়কে আলাদা করে ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১০ আইএএস ও ১০ চিকিৎসককে৷ মঙ্গলবার এই ১০ আইএএস ও ১০ চিকিৎসকের নম্বর রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা হবে৷ এদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আগামী দুদিনের মধ্যে রাজ্যে প্লাজমা থেরাপির প্রক্রিয়া শুরু হবে৷
এদিনের বৈঠকে ত্রিপুরার মৃতু হার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷ কী ভাবে এই মৃত্যু হার দ্রুত কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারেও চিকিৎসকদের সার্বিক উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর লক্ষ্য, ত্রিপুরার এক জন মানুষও যেন করোনায় মারা না যান৷ তাঁর কথায় প্রতিটি মৃতুই হৃদয় বিদারক৷ রাজ্য সরকার আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রোগী কল্যাণ সমতির চেয়ারম্যানকে জিবি পন্থ হাসপাতালে সপ্তাহে পাঁচ দিন বসতে হবে৷সেখানে সশরীরে উপস্থিত থেকেই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত ব্যবস্থা তত্বাবধান করতে হবে৷ একই সঙ্গে ওয়ার্ড, ক্যাসুয়ালটি ওয়ার্ড এবং ওপিডি স্থানান্তরিত করা হবে আইজিএম হাসপাতালে৷ বেসরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেএদিন৷
রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, যদি কোনও বেসরকারি হাসপাতাল চায় তারা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করবে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য প্রশাসন অনুমতি দিয়ে দেবে৷ সেইসঙ্গে ত্রিপুরা সরকার এও ঠিক করেছে, আগরতলার ১৭টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে যাপিড ত্যান্টিজেন টেস্টেও সুবিধা চালু করা হচ্ছে৷ যে কোনও নাগরিক ৭৫০ টাকা দিয়ে সেই টেস্ট করাতে পারবেন৷ রিপোর্ট পজিটিভ এলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের সঙ্গে পরামর্শ করে হোম আইসোলেশন বা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে৷ সেন্টারে এই মুহুর্তে ২৫০টি বেডে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে৷ এর মধ্যে ৫০টি বেড অক্সিনেটেড৷ যার মধ্যে ৩০টি পুরুষরোগীদের জন্য বরাদ্দ ও ২০টি মহিলা রোগীদের জন্য৷ কৈলাশহর, গোমতী চন্দ্রপুর এবং ধর্মনগরেও যথাক্রমে ৫০, ২০ এবং ১৫টি বেডে কোভিড রোগীদেও চিকিৎসা শুরু হয়েছে৷ আইএলএস হাসপাতালে ৪৭টি বেডে কোভিড চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ আমবাসাতেও নতুন করে কোভিড হাসপাতাল শুরু হতে চলেছে৷
সংক্রমণ রুখতে ও সংক্রামিতদের যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার৷ সেই কারণেই উপরিলিক্ষিত সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হয়েছে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়৷ আগরতলার যে ১৭টি স্বাস্ত্য প্রতিষ্ঠানে যাপিড ত্যান্টিজেন টেস্ট হবে সেগুলি হল- আইএলএস হাসপাতাল, লাইফলাইন নার্সিংহোম ত্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দেবলোক হাসপাতাল, আশা চাইন্ড কেয়ার নার্সিংহোম ও রিসার্চ সেন্টার,কেয়ার ত্যান্ড কিওর পলিক্লিনিক ও নার্সিংহোম, আগরতলা হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টার, ট্রপিক্যাল অথর্োপেডিক ত্যান্ড রিলেটেড রিসার্চ সেন্টার, ভলান্টিয়ারি হেলথ আ্যাসোসিয়েশন অফ ত্রিপুরা, সেন্ট জোসেফ হাসপাতাল, নাইটেঙ্গেল নার্সিংহোম, টেরেসা হেলথ সেন্টার, অথর্ো কেয়ার ত্যান্ড রিলেটেড সেন্টার৷