স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারী।। জনকল্যাণ ও রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশই সরকারের প্রধান অভিমুখ। রাজ্যের সার্বিক বিকাশে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে।
ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে। আজ কেন্দ্রীয় সরকারের মডেল আইটিআই স্কিমে ইন্দ্রনগরস্থিত মহিলা আইটিআই’র নবনির্মিত দ্বিতল স্টেট অব আর্ট বিল্ডিংয়ের দ্বারোদঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এরপর শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অন্তর্গত মহিলা আইটিআই’এর নবনির্মিত দ্বিতল স্টেট অব আর্ট বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী সহ সকল অতিথিগণ।
উল্লেখ্য, এই ভবন নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান রয়েছে ৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। রাজ্য সরকারের অনুদান ৮০ লক্ষ টাকা। এর মোট আয়তন ৮০৬.৪০ বর্গমিটার। এতে বেসিক কসমেট্রোলজি, কম্পিউটার এইডেড এমব্রয়ডারি ডিজাইন ও সার্ভেয়ার এই তিনটি অত্যাধুনিক ট্রেডের শাখা খোলা হয়েছে।
প্রতিটি ট্রেডে ৪০ জন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারবে।নিষিদ্ধ নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গড়া সরকার এবং আরক্ষা বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মহিলাদেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ড্রাগস কারবারীদের সাথে কোনোরকম আপোষ করবে না। ড্রাগস ব্যবসার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না। বিগত সরকারের আমলে রাজ্যে অবাধ ড্রাগস বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। যার ফলে যুব সমাজ ধীরে ধীরে নিরাশায় আচ্ছন্ন হয়েছিলো।
বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে নতুন গতিতে এগিয়ে চলেছে ত্রিপুরা। রাজ্যের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে জাগিয়েছে নতুন আশা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে মানুষের মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে তেমনি কৃষকদেরও মাসিক আয় অনেকটাই বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যে বর্তমানে ২৬ হাজার স্বসহায়ক দল রয়েছে। যার সঙ্গে রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মহিলা যুক্ত রয়েছে। এর অর্থনীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। আত্মনির্ভর দেশ গড়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের স্বশক্তিকরণে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একই দিশাতে রাজ্য সরকারও কাজ করে চলেছে।
রাজ্যে বর্তমানে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তার ফলে শিল্পক্ষেত্রে দক্ষ লোকের প্রয়োজনীয়তা এই আইটিআইগুলি থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৩ বছরে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইটিআই থেকে পাশ করা প্রায় ৪০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাকিরাও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমে স্বউদ্যোগে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পূর্বে আইটিআই থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের স্নাতক হওয়ার ক্ষেত্রে পুনরায় তাদের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশুনা করতে হতো। বর্তমান সরকার এই অসুবিধাকে দূরীকরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে আইটিআই প্রশিক্ষণের পর একটি ভাষা বিষয়ক পরীক্ষা দিয়ে সফল হলে ছাত্রছাত্রীদের কলা বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণী পাশের সমতুল্য বলে বিবেচনা করা হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব বলেন, রাজ্যে আইটিআইগুলি আত্মনির্ভর হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে রাজ্যে ১৯টি আইটিআই রয়েছে। যার মধ্যে এই সরকারের ৪ বছরে ৭টি নতুন আইটিআই স্থাপন করা হয়েছে। এগুলিতে প্রায় ৪ হাজার ৯০০-র অধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। আরও কিছু আইটিআই স্থাপনের জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বর্তমান সরকার শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে। যার ফলে বাজেটেও সবচেয়ে বেশি অর্থের সংস্থান রাখা হয় শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে। আত্মনির্ভরতার প্রাথমিক শর্তই হলো আমদানি কমানো রপ্তানি বাড়ানো। এক্ষেত্রে রাজ্যে চলতি অর্থবর্ষে এখন পর্যন্ত রপ্তানি বেড়ে ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
রাজ্যের শিল্পের পরিবেশে পরিবর্তন আসার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানান ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংক রায়। ইনভেস্টমেন্ট সামিটে মৌ স্বাক্ষরের পর রাজ্যে ইতিমধ্যেই ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব ড. পি কে গোয়েল ও ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন অধিকর্তা স্বপ্না দেবনাথ। অনুষ্ঠান মঞ্চে অতিথিদের হাতে চারা গাছ তুলে দেওয়া হয়।
[slickly _ligo _carousel id=”47536″]