অনলাইন ডেস্ক, ১৭ ফেব্রুয়ারী।। সময়ানুবর্তিতা, আরামদায়ক, গ্রাহক পরিষেবা, অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট, বিস্তৃত বিশ্ব নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং শক্তিশালি অর্থনীতি- এসব নিয়ে ভবিষ্যতে এয়ার ইন্ডিয়া আরও এগিয়ে যাবে। বুধবার প্রথমবারের মতো টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখর এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে কর্মীদের উদ্দেশ্যে তার রূপরেখা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি এসব কথা জানান।
এয়ার ইন্ডিয়াকে ‘ফ্ল্যাগশিপ’ উল্লেখ করে সবাইকে জেআরডি টাটার (জাহাঙ্গীর রতনজী দাদাভাই টাটা) আবেগ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন এন চন্দ্র শেখর। তিনি কর্মীদের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন। ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই- প্রত্যেক ভারতীয় যেন তার গন্তব্যে যতটা সম্ভব সরাসরি যেতে সক্ষম হয়। আপনারা যদি পেছনে ফিরে তাকান, তাহলে দেখবেন এয়ার ইন্ডিয়া বিশ্বে ভারতকে পরিচিত করার একটি প্রতীক ছিল।’ তিনি বলেছেন, যখন বিশ্বে একই মানের অনেক বিমান সংস্থা ছিল তখন এয়ার ইন্ডিয়া যাত্রীদের অতুলনীয় অভিজ্ঞতা দিতে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিল। তার এয়ারক্রাফট বহরে সম্রাট, মহারাজা লাউঞ্জ ছিল। এয়ারক্রাফটগুলো যাত্রীর আকাশ ভ্রমণে আরামদায়ক সঙ্গী ছিল।
এয়ার ইন্ডিয়া বিশ্বে ভারতের অতিথিপরায়ণতা তুলে ধরেছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে এয়ার ইন্ডিয়াকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে টাটা গ্রুপের অনুসারি সংস্থা টালাস প্রাইভেট লিমিটেডকে বিক্রি করে ভারত সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়ার পাশাপাশি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং এয়ার ইন্ডিয়া স্যাটসের (‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং’ বা অন্যান্য বিষয় সামলানো হয় যে সংস্থাকে দিয়ে) ৫০ শতাংশ শেয়ারও টাটার কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরণের হাতে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা হস্তন্তর করেন। এয়ার ইন্ডিয়া ‘ঘরে ফেরায়’ পুরো জাতি এয়ার ইন্ডিয়াতে আনন্দিত বলেও মন্তব্য করেছেন এন চন্দ্রশেখর।
গ্রাহক বান্ধব বলে সুখ্যাতি রয়েছে টাটা গ্রুপের। তাদের তাজ হোটেল, টাটা লবণ এবং জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার ৬০ কোটি ভারতীয়দের জীবনের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন তিনি। এখন এয়ার ইন্ডিয়ার ১৩০ কোটি ভারতীয়র ব্র্যান্ড হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি এয়ারলাইন্সটির নতুন রূপরেখা তুলে ধরে বলেছেন, আমরা এয়ার ইন্ডিয়াকে বিশ্বমানের এয়ারলাইন্স করতে সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি বিশ্বমানের এয়ারলাইন্স হওয়ার জন্য পুরোপুরি যোগ্য। এখন আমরা কিছু বিষয় উন্নত করার জন্য ফোকাস করব।
যেমন- গ্রাহক পরিষেবা, প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বিমান সংস্থাম হিসেবে গড়ে তোলা, পুরনো এয়ারক্রাফটগুলো আপগ্রেড করা এবং বহরে নতুন এয়ারক্রাফট যোগ করা। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আরো বিস্তৃত করব, ফ্লাইট এবং অফ ফ্লাইট উভয় ক্ষেত্রেই সবেচেয়ে ভালো আতিথেয়তা প্রদানের চেষ্টা করা হবে। গ্রাহক পরিষেবা নিয়ে তিনি বলেন, গ্রাহকদের প্রতিবারেই সময় মতো সেবা প্রদান করতে হবে।
নির্বিঘ্ন বুকিং, বিমানবন্দর, বোর্ডিং, লাউঞ্জ সব ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত পরিষেবা দিতে হবে। তিনি ভোক্তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং যাত্রী, ক্রু এবং গ্রাউন – প্রত্যেকের জন্য সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। সব দিক দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তিগত বিমান সংস্থা করতে চায় টাটা। অ্যাপস, ওয়েবসাইট, মোবাইল চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া বা টাটার নতুন অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীদের ডিজিটাল পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে।
বহর এবং নেটওয়ার্ক প্রসারিত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ওয়াইড বডি এবং ন্যারো বডির সংখ্যা বাড়াব। এরপর তিনি মহারাজার আতিথেয়তা ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন তিনি। ১৯৩২ সালে টাটা এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪৬ সালে নাম বদলে করা হয় এয়ার ইন্ডিয়া। পরে ১৯৫৩ সালে এর নিয়ন্ত্রণ নেয় সরকার। তবে জেআরডি টাটা ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বেই ছিলেন।