অনলাইন ডেস্ক, ১৪ ফেব্রুয়ারী।। ফের ব্যান হল চিনা অ্যাপ। জানা গেছে, ফের ভারত সরকারের রোষের মুখে পড়েছে ৫৪টি চিনা অ্যাপ। গত বছরই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ৫৯টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করে দেওয়া। এই নিয়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তিনবার অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে।
মোট বাতিল হল মোট ২২৪টি অ্যাপ। এর মধ্যে টিকটক, উ ইচ্যাট, হেলোর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলিও ছিল। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে এই অ্যাপগুলি বাতিল করা হল বলে ভারত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। টেলিকম মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘৫৪টি চিনা অ্যাপকে ব্লক করা হয়েছে।
প্লে স্টোর-এর মধ্যে আর সেগুলো ভারতে অ্যাকসেস করা যাবে না।’গুগলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইটি আইনের ধারা ৬৯এ আইনকে কাজে লাগিয়ে একাধিক অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে। সাময়িক ভাবে প্লে স্টোরে নির্দিষ্ট কয়টি অ্যাপের অ্যাক্সেস বন্ধ করা হয়েছে। টেলিকম মন্ত্রকের এক আধিকারিক অধিকর্তা জানান, ‘টেনসেন্ট এবং আলিবাবার স্টেবলের অনেক অ্যাপ মালিকানা লুকোনোর জন্য হাত বদল করেছে।
এগুলো হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোর বাইরেও হোস্ট করা হচ্ছে, তবে ডেটা শেষ পর্যন্ত চিনের সার্ভারগুলোতে চলে যাচ্ছে।’দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতেই এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যান করা হবে বলে জানা গিয়েছে। যে অ্যাপগুলি বন্ধ হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে বহুল ব্যবহৃত সুইট সেলফি এইচডি, বিউটি ক্যামেরা-সেলফি ক্যামেরা, ভিভা ভিডিয়ো এডিটর, টেনসেন্ট এক্সরিভার, অ্যাপ লক ও ডুয়াল স্পেস লাইটের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলি।জানা গিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে মোট তিনবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপ ব্যান করা হয়েছে।
পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালে ভারত ও চিনের মধ্যে যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল, তারপর থেকেই একের পর এক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল চিনা অ্যাপ।গত বছরের জুন মাসে ভারত সরকারের তরফে ৫৯টি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যান করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল টিকটক, উইচ্যাট, হেলোর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলিও ছিল। টিকটক ব্যান হওয়াকে কেন্দ্র করে অশান্তির আগুন ছড়ালেও কেন্দ্রের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, এইসমস্ত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলি দেশের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের উপর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীদের থেকে কী কী তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্য কী কাজে লাগে, তা জানতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারি মাসে টিকটক, উইচ্যাট সহ একাধিক কোম্পানিগুলি তথ্য জমা দেয়। কিন্তু সেই জবাবে কেন্দ্র সরকার বিশেষ সন্তুষ্ট না হওয়ায়, চিরতরেই টিকটক, উইচ্যাট সমেত মোট ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসেও ৪৩টি অ্যাপ্লিকেশনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। চিনের বিখ্যাত আলিবাবা গ্রুপের চারটি অ্যাপ সহ একাধিক চিনা অ্যাপ্লিকেশন ব্যান করে দেওয়া হয়।
ব্যান হওয়া এই অ্যাপগুলির মধ্যে ছিল আলিসাপ্লাইয়ারস মোবাইল অ্যাপ, আলিবাবা ওয়ার্কবেঞ্চ, আলিএক্সপ্রেস-স্মার্টার শপিং, বেটার লিভিং, আলিপে ক্যাশিয়ার, লালামুভ ইন্ডিয়া-ডেলিভারি অ্যাপ, স্ন্যাক ভিডিয়ো, ক্যামকার্ড-বিজনেস কার্ড রিডার। স্যোল-ফলো দ্য স্যোল টু ফাইন্ড ইউ, উইডেট-ডেটিং অ্যাপ, ডেট ইন এশিয়া-ডেটিং অ্যান্ড চ্যাট ফর এশিয়ান সিঙ্গেলস, ট্রুলি চাইনিজ-চাইনিজ ডেটিং অ্যাপ, ফ্রি ডেটিং অ্যাপ-সিঙ্গল, স্টার্ট ইউর ডেট, ডেট মাই এজ: চ্যাচ, মিট, ডেট ম্যাচুয়র সিঙ্গলস অনলাইনের মতো নানা অনলাইন ডেটিং অ্যাপ।
এছাড়াও টুবিট:লাইভ স্ট্রিমস, ম্যাঙ্গো টিভি, উই টিভি-টিভি ভার্শন, উইটিভি-সিড্রামা, কেড্রামা অ্যান্ড মোর, তাওবাও লাইভ, এমজিটিভি- হিউনানটিভি অফিসিয়াল টিভি অ্যাপের মতো নানা ভিডিয়ো ও অনলাইন টিভি অ্যাপ্লিকেশনও ব্যান করা হয়েছিল।কেন্দ্রীয় সূত্রে খবর, ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে গালোয়ান সংঘর্ষের পর থেকে কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে যে ধাপে ধাপে অ্যাপ ব্যান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার অধীনে এখনও অবধি প্রায় ৩০০টি অ্যাপ্লিকেশন ব্যান করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, যে সমস্ত অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিল ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে দেওয়া।