স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৮ ফেব্রুয়ারী।। উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার। প্রথমবারের মতো সম্পন্ন হওয়া সফল ওপেন হার্ট সার্জারি সহ কিডনি, নিউরোর মতো অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসার লক্ষ্যেও পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। আজ রাজ্য 8 জেলাভিত্তিক ইনটেনসিফাইড মিশন ইন্দ্রধনুষ ৪০-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
বিভিন্ন রোগ প্রাদুর্ভাব থেকে সমস্ত গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষার্থে অত্যাবশ্যকীয় টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে মিশন ইদুধনুষ প্রকল্পের অন্তর্গত রাজ্যব্যাপী এই বিশেষ কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। পূর্ব যোগেন্দ্রনগর সমর স্মৃতি ভবনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে দু’জন শিশুকে টিকা খাইয়ে দেন এবং একজন গর্ভবতী মহিলাকে টিকা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত দিনে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে জিবিপি হাসপাতালে উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিলো না। বর্তমানে জিবিপি হাসপাতালে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে উঠায় একের পর এক সাফল্যের নজির সৃষ্টি হচ্ছে। তার অন্যতম দৃষ্টান্ত সদ্য চালু হওয়া কার্ডিও বিভাগ দ্বারা সফল ওপেন হার্ট সার্জারি। তার পাশাপাশি কিডনি রোগেরও সমস্ত রকমের চিকিৎসা সহ অন্যান্য জটিল রোগের জন্য রাজ্যের মানুষকে যেন আর বাইরে ছুটে যেতে না হয় তার উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে গুচ্ছ পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা এবং আহ্বানে সাড়া দিয়ে বহিরাজ্যে কর্মরত ত্রিপুরার বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রাজ্যমুখী হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও সমস্যা হলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ও তার পরিবার জিবি হাসপাতালের চিকিৎসক দ্বারাই চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করেন। এমনকি সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষাও জিবি হাসপাতালের ল্যাবে হয়ে থাকে। আশাকর্মী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব পর্যন্ত নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে দক্ষতার সাথে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে কাজ করছেন। কোভিড পরিস্থিতিতে ০-১৯ পর্যন্ত বয়সসীমার ছেলেমেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব, সুস্থ কৈশোর প্রকল্প এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলো। বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নের ফলে মন্ত্রিসভার সদস্যগণ থেকে শুরু করে পদস্থ আধিকারিকরাও সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা গ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের কাছে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছে গুণমান। তার পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্যের সংখ্যাও। রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বহুলাংশে উপকৃত হচ্ছেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আগরতলা পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র মণিকা দাস দত্ত বলেন, সুস্থ শিশুই সুস্থ সমাজের প্রধান শর্ত। উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান ও পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রয়াস বাস্তবায়িত হচ্ছে। মিশন ইন্দ্রধনুষ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে গর্ভবতী মা ও শিশুদের টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে নিগমের তরফে সমস্ত রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্বাস্থ্য দপ্তর নিজেদের দায়বদ্ধতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অত্যাধুনিকীকরণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তার প্রতিফলন।
রাজ্যের নির্ধারিত বয়সসীমার যে সমস্ত শিশু ও গর্ভবর্তী মায়েরা এখনও নির্ধারিত টিকার আওতার বাইরে তাদের এই কর্মসূচির মাধ্যমে ১০০ শতাংশ টিকাকরণের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিধায়ক রেবর্তী মোহন দাস, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা রাধা দেববর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল প্রমুখ।