স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৭ ফেব্রুয়ারী।। রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে শিল্পের প্রসার এবং বিকাশের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে এই ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে আরও গতিশীল এবং উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে। আজ সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প সমূহের অগ্রগতির পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে রাবার সেক্টরের উন্নয়নে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, রাজ্য সরকার রাবার সেক্টরের বিকাশে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি গুণগতমান সম্পন্ন রাবার উৎপাদনের জন্য আরও অধিক সংখ্যায় রাবার ট্যাপারদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। রাজ্যে রাবার শিল্প ক্ষেত্রের প্রসারে রাবার উড প্রসেসিং ইউনিট, অধিক সংখ্যায় স্মোক হাউস তৈরি এবং রেইনগার্ড লাগানোর উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি রাজ্যে রাবার বাণিজ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও বেশি করে রোজগার সৃষ্টির উপরও গুরুত্ব আরোপ করে রাজ্যে রাবার মিশন তৈরি করার কথাও ব্যক্ত করেন। সভায় রাজ্যে কলমিস্ত্রিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ন্যূনতম ২ জন করে দক্ষ কলমিস্ত্রি গড়ে তুলতে হবে।
এরফলে রাজ্যে রূপায়িত জলজীবন মিশনের জন্য দক্ষ কলমিস্ত্রির প্রয়োজনীয়তা মেটানোর পাশাপাশি বিরাট সংখ্যায় রোজগার সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। সভায় রাজ্যে বাঁশ শিল্পের বিকাশের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই শিল্পের প্রসার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে তিনি রাজ্যের বাঁশের তৈরি বোতলের গুণগতমান বজায় রেখে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে দপ্তরের আধিকারিকদের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি টিআরপিসি দ্বারা তৈরিকৃত বাঁশের বোতলের প্রশংসা করে এর অনুকরণের উপরও বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পসমূহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রূপায়ণের পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি করার জন্য দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
পর্যালোচনা সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, মুখ্যসচিব কুমার অলক, পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় সহ বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্র আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রয়োজনীয় মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা টি কে চাকমা ২০২১-২২ অর্থবছরে দপ্তরের সাফল্যের চিত্র সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে উত্থাপিত করেন।
তিনি রাজ্যে রূপায়িত পিএমইজিপি এবং স্বাবলম্বন প্রকল্পে দপ্তরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি রাজ্যে রূপায়িত ন্যাশনাল ব্যাম্বু মিশন সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, রাজ্যে ৫১টি বেসরকারি বাঁশ নির্ভর শিল্প ইউনিট গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আগরবাতি আত্মনির্ভর মিশনে ব্যাম্বু স্ট্রিপ তৈরি করার জন্যও প্রয়োজনীয় ৫০০টি টুলকিট সুবিধাভোগীদের দেওয়া হয়েছে।
দপ্তরের অধিকর্তা আরও বলেন, স্ফুর্তি প্রকল্পের অধীনে অমরপুরে আগরবাতি উৎপাদন এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ক্লাস্টার ভিত্তিতে বাঁশের বোতল তৈরি করার জন্য ২টি প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সভায় গত তিন বছরে রাজ্যে রাবার প্রসেসিং ইউনিট, স্মোক হাউস তৈরির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন দপ্তরের অধিকর্তা।
এছাড়াও তিনি সভায় কমলপুর এবং ধর্মনগরের বর্ডার হাট স্থাপন, সাত্তুমে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, লজিস্টিক হাব, স্পেশাল ইকোনমিক জোন ইত্যাদি বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। রাজ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা ইনভেস্টমেন্ট সামিট প্রসঙ্গে উল্লেখ করে দপ্তরের অধিকর্তা জানান, এই সামিটে ১০০ জনের অধিক বিনিয়োগকারী অংশ নেন।
ইজ্ অব ডুয়িং বিজেনসের জন্য রাজ্যের সিঙ্গেল উইন্ডো পোর্টাল সম্পর্কেও তিনি আলোচনা করেন। এছাড়াও সভায় অধিকর্তা জানান, স্কিলড ম্যানপাওয়ারদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য কর্মক্ষেত্র নামে একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি ইন্দ্রনগরে মডেল আইটিআই উদ্বোধনের বিষয়টিও তুলে ধরেন।
সভায় ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের উদ্যোগে রাজ্যে মৌমাছি প্রতিপালন, সিএনজি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলির আলোকপাত করা হয়। এদিনের সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধীন স্কিল ডেভেলপমেন্ট অধিকারের রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন প্রকল্প কর্মসূচি নিয়েও পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।