অনলাইন ডেস্ক, ৭ ফেব্রুয়ারী।। ২০২২ সালে আজ অবধি পাঁচজনকে ডাইনী অপবাদে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এই রিপোর্ট বলছে, ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় এক হাজার জনের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহিলা। গত ২২ বছরে এক হাজার মানুষকে ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। গত ২ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার লুকিয়া গ্রামে এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদে মারধর করেন স্থানীয়রা। মৃত্যু হয় তাঁর। মাকে রক্ষা করতে ছুটে যান অজয় ও সঞ্জয় নামে দুই ছেলে,তাদের সহই দড়ি দিয়ে বেঁধে চলে নির্মম প্রহার। দুই ভাই গুরুতর আহত হন।
এই ঘটনায় পুলিশ যে অভিযোগ দায়ের করে সেখানে মূল অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং পঞ্চায়েত প্রধানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি। খুনতি জেলার অদকি থানার তিরলা গ্রামে এক যুগলকে পিটিয়ে খুন করেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, তাঁরা ‘কালাজাদু’ জানতেন।১২ জানুয়ারি। আবারও ডাইনি সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। থেতাই থানার অন্তর্গত কুড়পানি গ্রামে এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযুক্তের বয়ান অনুযায়ী, ঝড়িয়ো নামে এক প্রতিবেশীর ‘কুনজর’-এ অকালে মারা যান তাঁর স্ত্রী। এখনও রাঁচির এক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই মহিলা। একই কারণে ২৭ জানুয়ারি প্রাণ হারান আরও একজন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহিলাকে খুনের পর গাড়িতে দেহ লুকিয়ে, গাড়িটিকে খুনতি থানা এলাকার একটি নির্জন জঙ্গলে ফেলে রাখেন চার অভিযুক্ত। আর এই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পেশায় নার্স! সালোমি মিজ নামে ওই নার্স জানান হঠাৎ তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়। নার্সের ঘোর সন্দেহ, নোরা লকড়া নামে তাঁর ভাড়াটে ডাকিনী বিদ্যা করে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলেছেন! ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। গুমলা জেলায় পাঁচজনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে আট জনের বিরুদ্ধে। তার আগের দু’মাসে তিনজন এই কুসংস্কারের বলি হন। ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সাত বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ডাইনি সন্দেহে খুনের ঘটনা ৩৫টি।
সিআইডি-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৫ সালে ডাইনি সন্দেহে ৪৬ জন মহিলাকে পিটিয়ে মারা হয়। ২০১৬ সালে ৩৯, ২০১৭ সালে ৪২, ২০১৮ সালে ২৫, ২০১৯ সালে ২৭ এবং ২০২০ সালে ২৮ জন এই কুসংস্কারের বলি হয়েছেন। ২০২১ সালে ২৪ জন এই কুসংস্কারের বলি হয়েছেন। ২০২১ সালের পুরো তালিকা এখনও আসেনি। তবে পুলিশের খাতায় এমন ২৪টি খুনের মামলা রুজু হয়েছে। গত সাত বছরে ঝাড়খণ্ডে ২৩০ জনের মৃত্যুর কারণ হল ডাইনি অপবাদ। গত ২২ বছরে সংখ্যাটা এক হাজারের বেশি!