স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২০ জানুয়ারি।। ড্রাগস নেশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি ক্লাব (ফারামকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। কারণ ড্রাগসের বিরুদ্ধে লড়াই কারোর একার নয়। সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে এবং যুব সমাজকে রক্ষা করতে সম্মিলিত প্রয়াস একার দরকার। পুলিশের একার পক্ষে ড্রাগসের বিরুদ্ধে লড়াই তোলা।
এজন্য প্রয়োজন জডেন্য গড়ে আজ আগরতলা টাউন হলে ক্লাব ফোরামের প্রতিনিধিদের সাথে আযোজিত বিনিময় সভায় একথা বলেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দঘরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর এবং আগরতলা ক্লাব ফোরামের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই মত বিনিময় সভার মুখ্য বিষয় ছিল নেশা বা ড্রাগস থেকে কিভাবে সমাজকে মুক্ত করা যায়। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত মুক্ত আলোচনাচক্রে মতামত নেওয়া হয় রাজধানী শহরের বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধিদের।
প্রায় শতাধিক ক্লাবের প্রতিনিধি এদিন এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় উদ্বোধক তথ্য প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী প্রভোক আলোচনাকারীর বক্তব্য সম্পর্কে অবগত হন। তিনি বলেন, ড্রাগসের বিরুদ্ধে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে এজন্য ক্লাব ফোরামকে আরো ভাবনা চিন্তা করতে হবে। এ নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি করতে হবে।
প্রয়োজনে কোন কোন জায়গায় নেশা বা ড্রাগসের আসর বসছে সেখানে লিখিতভাবে অভিযান করবো এবং নিজেও সেই অভিযানে সামিল হবো। নেশার আসরের প্রসঙ্গে সন্ধ্যার পর উমাকার মাঠের সার্বিক অবস্থার চিত্র নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, নেশা বা মাদকে আচ্ছন্ন কোন ব্যক্তির পরিবার যদি সাহায্য চায় তবে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে ক্লাবগুলিকে।
দরকারে প্রত্যেকটি ক্লাবে সচেতনতামূলক মিটিং করতে হবে এবং নিজ নিজ এলাকায় থাকা পরিবারগুলিতে চিঠি পাঠিয়ে সেই মিটিংয়ে যোগ দিতে বলতে হবে। প্রত্যেকটি ক্লাবকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ড্রাগসের বিরুদ্ধে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে এবং রুখে দাঁড়াতে হবে। সমাজের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এভাবেই সম্মিলিত লড়াই করতে হবে।
ড্রাগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো সামাজিক কাজ করারও আহ্বান জানান যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী।
এক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে রক্তদানের মতো মহৎ কাজে এগিয়ে আসতে বলেন তিনি। যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রীর কথায়, করোনা মহামারির সময়ে রক্তদান শিবির কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তাই এখন প্রত্যেকটি ক্লাবকে নিয়মিত রক্তদান শিবির করার উদ্যোগ নিতে হবে।
এজন্য প্রতিটি ক্লাবে একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে। সেই ক্যালেন্ডার ধরে রক্তদানের আয়োজন করলে গাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের স্বল্পতা অনেকাংশে মিটে যাবে। পাশাপাশি গ্রাম থেকে শহরে চিকিৎসা করাতে আসা মানুষের রক্তের প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ক্লাবের সদস্যদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ রাখেন তিনি।
যুব সমাজকে নেশার কবল থেকে মুক্ত রাখতে তাদের খেলাধুলার প্রতি যুক্ত করতেও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি জানান, খেলাধুলায় নিয়োজিত থেকে নিয়মিত শরীর চর্চা করা গেলে নেশা থেকে অনেকটাই দূরে থাকবে যুবকরা।
এজন্য সারা রাজ্যে প্রায় দেড় হাজার ক্লাবকে ক্রীড়া সামগ্রী প্রদানের ঘোষণা দেন দপ্তরের মন্ত্রী। এরমধ্যে থাকবে ফুটবল, ভলিবল, নেট, ক্রিকেট ব্যাট বল ইত্যাদি ক্রীড়া সামগ্রী। তিনি আরো বলেন, ক্রীড়া সেক্টরে আরো উন্নভির লক্ষ্যে উদয়পুরের চন্দ্রপুরে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিল্কেটিক টার্চ তৈরি হয়েছে। দশরথ দেব স্টেডিয়ামে ৭ কোটি টাকা বাসে সিস্ফেটিক চার্চ তৈরির কাজ চলছে।
এর পাশাপাশি রাজ্যের ৮টি জেলায় ৮টি স্পোর্টস কমপ্লেক্স গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সাথে কথা হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যেই ৩/৪টির জন্য আর্থিক বরাদ্দ দিতে পারেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এদিন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে ক্লাব ফোরামের সামাজিক কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
করোনা তাক্সিনেশন প্রদানের ক্ষেত্রেও ক্লাবগুলির উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। বর্তমান সময়েও করোনা মোকাবিলায় ক্লাবগুলির পক্ষ থেকে সর্বতো সহযোগিতা রাখার আহ্বান রাখেন। এদিন সভায় খুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী আশ্বাস দেন ড্রাগস আসক ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য খুব সহসাই একটি ড্রাগস রিয়ার সেন্টার স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।
এজন্য মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে ড্রাগসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মহিলাদের যুক্ত করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং রাজনৈতিক সাটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও, বাজার কমিটিকে যুক্ত করারও পরামর্শ দেন। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, নেশা বা ড্রাগসের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন করতে হবে।
শুধু পুলিশ বা প্রশাসনের উপর ভরসা না করে নিজ নিজ ঘর থেকেই নেশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে। এর পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং ড্রাগস কারবারের উৎসস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। দাঁড়াতে হবে ড্রাগস আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে। সভায় ক্লাব ফোরামের চেয়ারম্যান সময় পাল বলেন, নেশার ভয়াবহতা করোনা থেকেও বিপজ্জনক।
এক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনকে আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণের আহা জানান তিনি। ক্লাব ফোরামের সভাপতি প্রণব সরকারও নেশা কারবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ নড়াইয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সেই সাথে এই লড়াইয়ে পুলিশকে আরো সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি। ক্লাব ফোরামের সম্পাদক সেবক ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে যুব সমাজের নেশার প্রতি আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এক্ষেত্রে নেশা কারবারিদের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। সভায় সদরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক তাপস কারি পাল ড্রাগসের বিরুদ্ধে পুলিশের পদক্ষেপ সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন। সেই সাথে ড্রাগস আস ব্যক্তিদের রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা করানো সহ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো সচেতনতার বার্তা দেন।
সভায় ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের অধিকর্তা সুবিকাশ দেববর্মা। উপস্থিত ছিলেন দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা পাইমোর মা সহ বিভিন্ন ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকরণ। ড্রাগসের বিরুদ্ধে আয়োজিত মত বিনিময় সভায় এদিন উপস্থিত সমস্ত প্রতিনিধিদের শদখ বাক্য পাঠ করান যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। যার একটাই লক্ষ্য সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই থাকেন।