অনলাইন ডেস্ক, ১২ জানুয়ারি|| গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আরও বেশি ভয়ংকর ও শক্তিশালী বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। করোনার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর লড়াই যে এখনো শেষ হয়নি, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ওমিক্রন
যদিও ওমিক্রনে মৃত্যুর হার আগের ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এখনও অনেক কম, তবে এর সংক্রমণ মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
ডব্লিউএইচও বলছে, ‘যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, এটি অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে’।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগের ধরনগুলো যতটা প্রাণঘাতী ছিল ওমিক্রন সে রকম নয়। কিন্তু তাতে নিশ্চিত হয়ে বসে থাকলে তা বিপদ ছাড়া আর কিছুই ডাকবে না।
চিকিৎসকরা বলছেন, ওমিক্রনের কোনো একটিও উপসর্গ দেখা দিলে একেবারে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত হবে না।
ওমিক্রনের উপসর্গগুলো কি কি?
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যানালাইসিস’-এর গবেষণা বলছে, ওমিক্রনের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে কাশি, অত্যধিক ক্লান্তি, নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে পানি পড়া অন্যতম। এছাড়াও হালকা জ্বর, ঘামাচি, শরীরে ব্যথা, অতিরিক্ত ঘামও দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খিদে হ্রাস পাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিচ্ছে এখন।
এরই মধ্যে ওমিক্রনের আরো তিনটি উপসর্গের কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক টিম স্পেক্টর। তিনি জানান, ওমিক্রনের নতুন উপসর্গ তিনটি হলো- মাথা ব্যথা, গলা চুলকানো বা গলা জ্বালা ভাব, ঘন ঘন নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
এসব উপসর্গকে শীতকালীন ঠাণ্ডাজনিত কারণ ভেবে হালকাভাবে না নিয়ে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ওদিকে, চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে। একইসঙ্গে আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩৮ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫ লাখ ২০ হাজার।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৭৮৫ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজারের বেশি। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৫ লাখ ২০ হাজার ৬২২ জনে।
একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮০৪ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৮ লাখেরও বেশি। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩২ জনে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও ভিয়েতনাম।
গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৪৪ হাজার ২৭৪ জন এবং মারা গেছেন ২ হাজার ১২২ জন। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৯০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৮ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৮৩ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৭ হাজার ৫২৫ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ২০৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৭ জনের।
এছাড়া গত এক দিনে যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৮২১ জন এবং মারা গেছেন ৩৭৯ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০৯ জন মারা গেছেন। একই সময়ে ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার ৫৩২ জন এবং মারা গেছেন ২৯৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৪৯ জন এবং মারা গেছেন ৩৪১ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ২৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৯ জন মারা গেছেন। একই সময়ে স্পেনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪২ জন এবং মারা গেছেন ২৪৭ জন।
এছাড়া জার্মানিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ২০৫ জন এবং মারা গেছেন ৩৮৭ জন। করোনা মহামারির শুরু থেকে ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৪৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭৪ জন মারা গেছেন। একই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪২৯ জন এবং মারা গেছেন ২১৯ জন।
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩৯ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭১ হাজার ৪৪৭ জন। অপরদিকে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ১৪২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ২৮১ জনের।
এদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার ৯০২ জন এবং মারা গেছেন ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৯ জন।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তুরস্কে ১৩৭ জন, পোল্যান্ডে ৪৯৩ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১১৯ জন, ফিলিপাইনে ২১৯ জন এবং ভিয়েতনামে ২৫৬ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মেক্সিকোতে মারা গেছেন ৭৮ জন। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৪১২ জনের।