অনলাইন ডেস্ক, ৫ ডিসেম্বর।। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে যখন বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওমিক্রন সম্ভবত করোনা মহামারী শেষের ঈঙ্গিত দিচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নেটকেয়ার গ্রুপের সিইও ফ্রিডল্যান্ড এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি দেশটির ৫০টিরও বেশি হাসপাতাল পরিচালনা করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাদের দেশে যে ব্যাপক হারে ওমিক্রণের সংক্রমণ ছড়িয়েছে সে হারে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু বাড়বে না।
বিশ্বজুড়ে ওমিক্রন প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক দেশ এরই মধ্যে সীমান্তে কড়াকড়ি করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো, ইসওয়াতিনি, মালাউই এবং মোজাম্বিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রেলিয়া। অনেক দেশে টিকাগ্রহণকারীদেরও সীমান্তে যাওয়া-আসার বিষয়ে আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এখন ভ্যারিয়েন্টটির বিপুল সংখ্যক মিউটেশন এটিকে কোভিডের আগের ধরনগুলোর তুলনায় আরও মারাত্মক, আরও সংক্রমণযোগ্য বা ভ্যাকসিনগুলো এড়াতে আরও বেশি সক্ষম করে তোলা কিনা তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব।
নিউজিল্যান্ড বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো, ইসওয়াতিনি, সেশেলস, মালাউই এবং মোজাম্বিক থেকে শুধু তাদের নাগরিক যাওয়া-আসা করতে পারবে। তবে তাদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং করোনা পরীক্ষা করাতে হবে।
করোনার চতুর্থ তরঙ্গের মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের তিনটি তরঙ্গে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল দেশটিতে।
ফ্রিডল্যান্ড বলছেন, ওই ভয়ংকর পরিস্থিতি আবার সৃষ্টি হবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘যদি দ্বিতীয় ও তৃতীয় তরঙ্গের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো, তাহলে ওই সময়ের মতো হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ত। সুতরাং আমি মনে করি, এখানে একটি রুপালি আস্তরণ তৈরি হয়েছে, যা করোনা সমাপ্তির সংকেতও হতে পারে। নতুন ধরনটি গুরুতর মনে হলেও তা গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। অতীতে স্প্যানিশ ফ্লুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল’।
১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে আনুমানিক আড়াই থেকে পাঁচ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। ১৯২০ সালের মধ্যে এটি কম মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং পরবর্তী সময়ে নিয়মিত ফ্লুতে রূপ নেয়।
ফ্রিডল্যান্ড বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি টিকা নেওয়া মানুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তবে তাদের মধ্যে তা শুধু হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ তৈরি করছে’। তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এমন একটি ভ্যারিয়েন্ট পাই, যা সংক্রমণের দিক থেকে ডেল্টাকেও ছাড়িয়ে গেছে কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার কারণ হয়নি, তাহলে আমরা একে ওই স্প্যানিশ ফ্লুর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। স্প্যানিশ ফ্লুর ক্ষেত্রেও আমরা একই অবস্থা দেখেছি’।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ ইমিউনোলজিস্ট শাবির মাধী ফ্রিডল্যান্ডের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও রোগীর সংখ্যা কম। বেশির ভাগ ওমিক্রন রোগীর লক্ষণ মৃদু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন সম্ভবত আগের কোভিড ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে বেশি ভাইরাল নয় বা কম ভাইরাল।
ফ্রিডল্যান্ড বলেন, ‘বুস্টার ডোজ টিকা নেওয়া স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মধ্যে ওমিক্রন খুবই হালকা অসুস্থতা তৈরি করতে পেরেছে। আমি মনে করি, বিষয়টি নিয়ে যথাযথভাবে যোগাযোগ হয়নি বলেই এত আতঙ্ক তৈরি হয়েছে’।
ফ্রিডল্যান্ড আরও বলেন ‘তবে, এই বিষয়ে এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। কিন্তু আমি কম আতঙ্কিত। বাস্তবে এটা আমার কাছে অন্যরকম লাগছে’।