স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২০ নভেম্বর।।
ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রিপুরার আয়তন ছোট হলেও, জনকল্যাণ ও পরিষেবামূলক ব্যবস্থাপনায় এ রাজ্য অগ্রণী। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগরতলায় রক্তদান শিবিরে গিয়ে একথা বলেন। তিনি জানান, স্থানান্তর কর্মজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নাগরিক পরিষেবা প্রদানে, কর্মচারীদের রাজ্যের যেই প্রান্তেই দায়িত্ব ন্যস্ত করা হোক না কেন, তাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাগত জানিয়ে কর্মক্ষেত্রে দায়বদ্ধতাকে প্রাধান্য দেওয়াই কাঙ্খিত। কোভিডের সময়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মীরা সমগ্র দেশের সামনে ঝুঁকি পূর্ণ পরিস্থিতিতেও দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিবেকানন্দ বিচার মঞ্চের উদ্যোগে মেগা রক্তদান শিবিরে আয়োজন এক প্রশংশনীয় উদ্যোগ।রক্তদান আমাদের রাজ্যে এখন উৎসবের মেজাজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দৃষ্টিহীন হওয়া সত্বেও অষ্টমী সূত্রধর স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে এক অনন্য নজির গড়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৬ বার রক্তদান করেছেন। রক্তদানের ক্ষেত্রে তিনি একজন আদর্শ। তার কাছ থেকে আমাদের প্রত্যেকেই শেখার আরও কিছু রয়েছে। আজ বিবেকানন্দু বিচার মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত মেগা রক্তদান শিবিরে এভাবেই স্বাস্থ্যকর্মী অষ্টমী সূত্রধরের প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও স্বেচ্ছা রক্তদানে তিনি যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তারজন্য তাকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি এই বিষয়টি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অবহিত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিন রাজধানীর গুর্থাবস্তিস্থিত স্বাস্থ্য অধিকর্তার কার্যালয়ে এই মেগা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই এই কর্মসূচির উদ্বোধক হিসেবে রক্তদান শিবির পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
সেখানে তিনি কথা বলেন অষ্টমী সূত্রধর সহ অন্যান্য রক্তদাতাদের সাথে। তাদেরকে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি সম্বলিত ত্রিপুরা স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিলের ব্যাজ পরিধান করান মুখ্যমন্ত্রী। পরে উদ্বোধকের ভাষণেও মুখ্যমন্ত্রী আনন্দনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী অষ্টমী সূত্রধরের রক্তদানের মানসিকতার দরাজ প্রশংসা করেন। তিনি জানান, রক্তাল্পতা সমস্যাজনিত কারণে দৃষ্টিহীন হয়েছিলেন এই মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী।
পরে তিনিই অন্যের জীবন বাঁচানোর তাগিদে নিজেই স্বেচ্ছা রক্তদানে এগিয়ে আসেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বলেন, কোভিত পরিস্থিতির সময়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মীরা নিজেদের সেরাটুকু দিয়ে প্রাণপাত কাজ করেছেন। যদিও সেসময় করোনা টিকা দেওয়া নিয়ে একটা অংশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল। তবে স্বাস্থ্য কর্মীরা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারাও করতে পারেন।
কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সাযুজ্য রেখে যেভাবে ভারতে দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে আসা গেছে তারজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পিএম কেয়ারের সহায়তার মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে জিবি হাসপাতালেও বড় বড় সার্জারি হচ্ছে। অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওনাল ক্যান্সার হাসপাতালেও বড় ধরণের সার্জারি হচ্ছে।
মাত্র কিছুদিন আগেও এই ক্যান্সার হাসপাতালে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর মায়ের সার্জারি হয়েছে এবং সেটা সফল হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতি বিশ্বাস, ভরসা ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখার আহ্বান জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চেষ্টার মাধ্যমে শিখতে হবে।
আপনার আশপাশের লোকদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। কোভিড আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় আমরা যে মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছি আগামীতেও সেই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। এদিন মেগা রক্তদান শিবিরের শুরুতে স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্যা অর্পণের মাধ্যমে শ্রহ্মা নিবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।
স্বাগত ভাষণ রাখেন মেগা রক্তদান শিবিরের আয়োজক সংস্থা বিবেকানন্দ বিচার মঞ্চের সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে সমাজ পরিবর্তনের জন্য এই সামাজিক প্রয়াস হাতে নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ব্যাপক অংশের সরকারি কর্মচারিদের সামিল করা তাদের একটা অন্যতম লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিবেকানন্দ বিচার মঞ্চের সম্পাদক তপন দাস, মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি সঞ্জয় মিশ্র স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা এবং পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা রাধা দেববর্মা। শিবিরে ৮১ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।