অনলাইন ডেস্ক, ১৩ নভেম্বর।। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের মায়ানমার সীমান্তের কাছে বিদ্রোহীদের অতর্কিত হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল, তার স্ত্রী ও ছেলে এবং তিন সেনা নিহত হয়েছেন। মণিপুরের চুরাচাঁদপুর জেলায় সকাল ১০টায় এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা ছিল এটি। ৪৬ আসাম রাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল বিপ্লভ ত্রিপাঠী শনিবার একটি ফরোয়ার্ড ক্যাম্পে গিয়েছিলেন এবং ফিরে আসার সময় তার কনভয় এই অতর্কিত বন্দুক হামলার শিকার হয়।
এতে ওই কমান্ডিং অফিসারসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ওই কর্মকর্তার স্ত্রী এবং ছেলেও রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া একজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন। মণিপুরের বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ এই হামলার পেছনে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও কোনও গোষ্ঠী এখনও এর দায় স্বীকার করেনি।
হামলার স্থানটি রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরের একটি অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রাম। পুলিশ জানিয়েছে, বেহিয়াং থানার অন্তর্গত সিংঘাটের কাছে সায়লসি এবং সেকেন গ্রামের মধ্যবর্তী জঙ্গল ঘেরা এলাকায় তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। সেনা সদস্যদের অন্য গাড়ি থেকে জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেয়।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ওই সেনা কর্নেল এবং তার পরিবারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন একটি পাল্টা অভিযান শুরু করা হয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনা জওয়ান আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পরেই মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মণিপুরের ওই এলাকায় অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার সেনা এবং আসাম রাইফেলস।
মণিপুরের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি অব মণিপুর’ (পিএলএএম) অথবা মিয়ানমারে ঘাঁটি গেড়ে থাকা নাগা গোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং) এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর মণিপুরের চান্দেল জেলায় আসাম রাইফেলসের গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছিল নাগা গোষ্ঠী। ওই হামলায় তিন জওয়ান নিহত হন।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক রাজ্যের মতো মণিপুরেও ডজনখানেক সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, যারা হয় পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন অথবা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। চীন, মায়ানমার, বাংলাদেশ এবং ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এমন এলাকায় কয়েক দশক ধরেই ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা আছে। ২০১৫ সালে মণিপুরে বিদ্রোহীদের আক্রমণে ২০ জন সৈন্য নিহত হয়েছিল, যার পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী জঙ্গলে থাকা বিদ্রোহীদের ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়েছিল।