স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ সেপ্টেম্বর।। রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে উন্নয়নের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলিতে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যে রাবার, চা, মৎস্যচাষ, পশুপালন ও কৃষির মতো প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলির বিকাশে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলি রাজ্যের উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
এ সমস্ত প্রাথমিক ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে রাজ্যের ব্যাঙ্কগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ সচিবালয়ের ২ নং সভাকক্ষে ১৩৬তম স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন। সভায় সর্বশেষ স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো তা কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তার পর্যালোচনা করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সে সম্পর্কে ব্যাঙ্কগুলিকে অবহিত হতে হবে। সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলির সাথে সমন্বয় রেখে ব্যাঙ্কগুলিকেও প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে সময়ের মধ্যে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে এনপিএ কমানোর পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলির সিডি রেশিও বাড়ানো। যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলিতে ঋণ দেওয়ার সুবিধা রয়েছে সেগুলির জন্য ঋণ প্রদানের কর্মসূচি নিতে হবে ব্যাঙ্কগুলিকে। ব্যাঙ্কগুলি থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কাউকে যেন হয়রানি না হতে হয় সেজন্য ঋণ প্রদানের পদ্ধতিকে সরলীকরণের উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যাঙ্কগুলি কোন কোন ক্ষেত্রে কি পরিমাণ ঋণ প্রদান করবে তারজন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে কিনা তার তদারকিও করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কোনও কাজ করলে সফলতা নিশ্চয়ই পাওয়া যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে তিনি স্বাস্থ্য দপ্তরের সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযানের সাফল্য সভায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই অভিযানে রাজ্যের ১৩ লক্ষ শিশু ও কিশোর কিশোরীকে ১৫ দিনব্যাপী কৃমিনাশক কর্মসূচি, ভিটামিন-এ পরিপূরক কর্মসূচি, আয়রন ফলিক অ্যাসিড পরিপূরক কর্মসূচির রূপায়ণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর কাজ শুরু করেছিলো।
দেখা গেছে এই অভিযানের ৯৯ শতাংশ সফলতা এসেছে। ব্যাঙ্কগুলিকেও লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যাঙ্কগুলিকে মিশন মুডে কাজ করতে হবে। তবেই সফলতা আসবে বলে মুখ্যমন্ত্রী সভায় অভিমত ব্যক্ত করেন। সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে রাবার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
রাবার সেক্টর থেকেই রাজ্যে অধিক অর্থ আসে। তাই রাজ্যে রাবার সেক্টরে উন্নয়নে ব্যাঙ্কগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, রাজ্যে অনেকগুলি বড় চা বাগান রয়েছে। সেই চা বাগানগুলিকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যেতে পারে সেজন্য ব্যাঙ্কগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে চা বাগানগুলির মালিকদের সাথে ব্যাঙ্কগুলিকে সভা করার জন্য পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রাবার, চা, আগর ইত্যাদি লাভদায়ক ক্ষেত্রগুলির পাশাপাশি রাজ্যের জৈবচাষে যুক্ত চাষী এবং বায়োফ্লক মৎস্যচাষে যুক্ত মৎস্যচাষীদের পাশেও ব্যাঙ্কগুলিকে দাঁড়াতে হবে। কৃষি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত কৃষকদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে।
পাশাপাশি বর্গাদার কৃষকরা যাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ পেতে পারেন তারজন্য একটি প্রকল্প তৈরি করার জন্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সভায় পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ডিজিএম আনন্দ কুমার স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বিস্তারিত কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের অ্যানুয়েল ক্রেডিট প্ল্যানে ব্যাঙ্কগুলি প্রাইমারি ক্ষেত্র সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ ডিসবার্সমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুন মাস পর্যন্ত কৃষি, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প সহ অন্যান্য প্রাইমারি সেক্টরগুলির জন্য ১৫১৮.২৪ কোটি টাকা ব্যাঙ্কগুলি ডিসবার্স করেছে। চলতি অর্থবর্ষের খারিফ মরশুমে ১৫ হাজার ৮০৫ জন কেসিসি কার্ড প্রাপ্ত কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষের জুন মাস পর্যন্ত ৯৯৮টি স্বসহায়ক দলের ঋণের মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে।
স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া প্রকল্পে ২০২১২২ অর্থবর্ষের জুন মাস পর্যন্ত ৭৯ জন এস সি / এস টি মহিলা সুবিধাভোগীকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ডিজিএম আনন্দ কুমার আরও জানান, চলতি অর্থবর্ষের জুন মাস পর্যন্ত ডেয়ারি উন্নয়ন প্রকল্পে ৭০টি ঋণের প্রস্তাব মঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডর আত্মনির্ভর নিধি প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ২,৬২৮টি ঋণের মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে।
সভায় এছাড়াও ব্যাঙ্কের নতুন শাখা খোলা, পর্যটন বিকাশে সহায়তা করা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঋণ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয় স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির ১৩৬ তম সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মুখ্যসচিব কুমার অলক, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের সচিব তাপস রায়।
আগরতলাস্থিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শাখার জেনারেল ম্যানেজার তমাল সিনহা, নাবার্ডের ডিজিএম অনিল পুরোহিত, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার সাক্ষী গোপাল সাহা, অর্থ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার এবং এস এল বি সি কমিটির আওতাভুক্ত বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।