স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৭ সেপ্টেম্বর।। বিধানসভার ভেতরে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি নিয়ে বিধানসভার বাইরে মুখ খুললো সিপিএম! তা-ও চারদিনের মাথায় এবং দু’দিনের অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পর৷ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিধানসভা অধিবেশনের প্রথম দিনে (শুক্রবার) বক্তব্য রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
কিন্তু তার আগেই বিধানসভা অধিবেশন ছেড়ে চলে আসেন মানিক সরকারের নেতৃত্বে বিরোধী বিধায়করা এবং সোমবার অধিবেশনের শেষ দিনেও তাঁরা গড়হাজির ছিলেন৷ শেষমেশ সোমবার সন্ধ্যায় আগরতলায় সিপিএমের রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দলের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী৷ তিনি বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি বাস্তবের সঙ্গে সাযুজ্যহীন৷
নির্জলা অসত্য৷ গণতন্ত্রের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা৷ এরকম অসত্য বিবৃতি বিধানসভার পবিত্রতাকে কলুষিত করেছে৷ রাজ্যের বা দেশের মানুষকে মূর্খভেবে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, গোটা দেশেই সংসদীয় ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে চলেছে বিজেপি৷ সংসদে লোকসভায় এবং রাজ্যসভাতেও এটা দেখা যায়৷
এ রাজ্যেও হচ্ছে৷ তিনি বলেন, চলতি মাসে আগরতলায় প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে সিপিএমের রাজ্য কার্যালয়ে হামলা হয়৷ জেলা অফিসেও হামলা হয়েছে৷ একই দিনে রাজ্যের নানা জায়গায় অন্তত ৫০টি পার্টি অফিসে আক্রমণ হয়৷ এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতা কর্মীসমর্থকদের উপরে আক্রমণ হয়৷ তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ হয়েছে৷
এ সমস্ত বিষয়গুলো গত শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনের প্রথম দিনে উত্থাপন করতে চাইছিলেন বিরোধী বিধায়করা৷ কিন্তু তাঁদের তা উত্থাপন করতে দেওয়া হয়নি৷ তাই প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন বয়কট করা হয়েছে৷ জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য যে কতটা অসত্য তা কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এনসিআরবি-র বার্ষিক রিপোর্ট থেকেই বোঝা যায়৷
তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, রাজনৈতিক হিংসায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ত্রিপুরা৷ অন্যান্য রাজ্যে যেখানে রাজনৈতিক হিংসা প্রতি এক লাখে গড়ে ০.১ শতাংশ, সেখানে ত্রিপুরায় তা গড়ে ০.৫ শতাংশ৷
মুখ্যমন্ত্রীর ওই বিবৃতির একদিন পরেই আগরতলায় টিসিএস অফিসারদের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জিতেন্দ্র চৌধুরী৷ তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, আদালত আবার কী? পুলিশ কিছু করবে না! কারণ পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী৷
তাঁর এহেন বক্তব্যে যারা দুর্বৃত্তপনা করে কিংবা আইন ভাঙছে, তারা উৎসাহিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ একই সঙ্গে তিনি বলেন, অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর এই বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত৷
তিনি বলেন, এমনিতেই গণতন্ত্রে অমাবস্যা চলছে৷ আর মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে তো গণতন্ত্রে পুরো অমাবস্যা নেমে আসবে৷ যা শুধু বিরোধী নয়, কারও জন্যেই মঙ্গলজনক হবে না৷ তাই এ নিয়ে রাজ্যের মানুষকে সোচ্চার হতে তিনি দলের তরফে আহ্বান রাখেন৷