Promises: তালেবানরা নিজেদের বদলে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে

অনলাইন ডেস্ক, ১২ সেপ্টেম্বর।। দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই তালেবানরা নিজেদের বদলে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। মানবাধিকার, নারী অধিকার, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, সবার অংশগ্রহণের সরকার সহ অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে তারা। যদিও ইতিমধ্যেই তাদের কথা আর কাজে অনেক পার্থক্য দেখা দিয়েছে। তালেবানের এমন ১০টি প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

 

১. প্রতিশোধ নেয়া হবে না

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভীত সন্ত্রস্ত আফগানরা দেশ ছাড়তে উন্মুখ হয়ে ওঠেন। তালেবান মুখপাত্র তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমি আমার স্বদেশিদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিদেশিদেরকে সহায়তাকারী অনুবাদক, সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা সাধারণ নাগরিক যারাই আছেন না কেন সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। কারো প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ করা হবে না’।

 

২. সরকারে সব পক্ষ থাকবে

সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, ‘আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী ইসলামি সরকার থাকবে। নাম কী হবে কিংবা আর কী করা হবে সেটি রাজনৈতিক নেতাদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা। তারা এ নিয়ে জরুরিভিত্তিতে আলোচনা করছেন। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে, আমাদের মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই একটি ইসলামি ও শক্তিশালী সরকার গঠন করা হবে এবং তা আমাদের নাগরিকদের মূল্যবোধ বা স্বার্থবিরোধী হবে না’।

 

৩. অর্থনীতি পুনর্গঠন

দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলব। এজন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর ব্যবস্থা করা হবে। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা, বিনির্মাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ ও অন্য যে সম্পদ আছে তা নিয়ে কাজ করব। এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি যে আমাদের সহায়তা করুন, যাতে আমরা খুব দ্রুতই পুরো পরিস্থিতি, আমাদের অর্থনীতি আমরা বদলে ফেলতে পারি’।

 

৪. চোরাচালান, মাদক রোধ

মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা দেশের পুরুষ, নারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই কোন ধরনের মাদক আমরা উৎপাদন করব না। কেউ মাদক চোরাচালানে জড়িত থাকবে না’। তবে মাদকমুক্ত আফগানিস্তান গড়তে ও বিকল্প শস্যের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছেও সহায়তা চান।

 

৫. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

‘আমরা গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অব্যহত থাকবে। তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে’। এমন আশ্বাস দিলেও মুজাহিদ বলেন গণমাধ্যমের কার্যক্রমে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হতে হবে। তারা আমাদের কাজের সমালোচনা করতে পারবে যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি’।

 

৬. গণমাধ্যমে নারীরাও কাজ করতে পারবে

সংবাদ সম্মলনে প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ জানান, নতুন সরকার গঠন হলে ইসলামি শরীয়া আইন অনুযায়ী নারীরা গণমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ করতে পারবে। তবে দ্রুতই বিষয়টি পরিস্কার করা হবে।

 

৭. নারীদের ‘অধিকার’ দেয়া হবে

সংবাদ সম্মেলন মুজাহিদ বলেন, ‘ইসলামি আমিরাত শরীয়া কাঠামোর আলোকে নারীদের অধিকার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বোন, আমাদের পুরুষরা একই অধিকার ভোগ করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আমাদের নিয়ম ও নীতির আলোকে কাজ কাজ করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই নারীদের প্রতি কোনও বৈষম্য করা হবে না, তবে অবশ্যই সেটি আমাদের কাঠামোর মধ্যে হবে’।

 

৮. প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক

জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, তাদের বিরুদ্ধে বা কোন দেশের ক্ষতিসাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আমরা আন্তর্জাতিক সীমানা ও যোগাযোগকে স্বীকৃতি দেই। আমাদের সেভাবেই বিবেচনা করা উচিত যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের কোন সমস্যা নেই’।

 

৯. বিদেশিদের নিরাপত্তা থাকবে

কাবুলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যেসব এলাকায় দূতাবাস আছে সেখানে পুরোপুরি নিরাপত্তা থাকবে। সব বিদেশি রাষ্ট্র, প্রতিনিধি, দূতাবাস, মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা দাতা সংস্থাগুলোকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু করতে দিব না। আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে’।

 

১০. কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়

কাবুল দখলে নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যেকোনও সংঘাত এড়ানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কারো প্রতিই ইসলামি আমিরাতের কোনো শত্রুতা বা বৈরিতা নেই। বৈরিতার অবসান হয়েছে এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আমরা কোনও অভ্যন্তরীন বা বহিরাগত শত্রু চাই না। আমাদের ভুমি ব্যবহার করে বিশ্বের কারো বিরুদ্ধেই হামলা চালাতে দেওয়া হবে না।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?