অনলাইন ডেস্ক, ৬ সেপ্টেম্বর।। নিজেদের মধ্যে কোন্দল ও বিভেদের কারণেই এখনো আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা করতে পারেনি তালেবানরা। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি অনলাইন এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে। তালেবানের দোহা এবং হাক্কানি গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধ এবং হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে ‘সর্বোচ্চ নেতা’ হিসেবে মেনে নিতে হাক্কানী নেটোয়ার্কের অস্বীকৃতির কারণেই এই বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই এবং দুইবারের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মতো আগের সরকারের রাজনৈতিক নেতাদেরকেও নতুন সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে তালেবানের দোহা ও হাক্কানি গ্রুপের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়।
তালেবানের সামরিক কমান্ডাররা তাদেরকে নতুন সরকারে রাখতে নারাজ, অন্যদিকে দোহা শাখা তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে।
বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর সশস্ত্র গোষ্ঠী এই হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের সঙ্গে মোল্লা বারাদারের ‘উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়’ হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার তিনজন ডেপুটির একজন এবং নতুন সরকারের সম্ভাব্য প্রধান মোল্লা বারাদার।
ধারণা করা হচ্ছে এই সংকটের একটি সমাধান বের করার জন্যই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ গত শনিবার কাবুলে উড়ে গেছেন। তবে পাকিস্তানি এই গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে অতীতে হাক্কানিদেরকে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে।
গত মাসে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে গত বিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এবং সবচেয়ে মর্মান্তিক হামলার জন্য হাক্কানিরাই দায়ী।
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হাক্কানির ছেলে সিরাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করা হচ্ছে। ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মার্কিন ‘জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইউএস অ্যাডমিরাল মাইক মুলেন, ২০১১ সালে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে ইসলামাবাদের গোয়েন্দাদের “সত্যিকারের বাহু” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
জুন মাসের এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, হাক্কানিরা তালেবানদের লড়াইয়ে ব্যাপক অবদান রেখেছে এবং এরা “যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত একটি বাহিনী”।
গত সপ্তাহে তালেবান এবং অন্যান্য আফগান নেতারা বলেছিলেন যে, তারা নতুন সরকার এবং মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে “ঐকমত্যে” পৌঁছেছেন। হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা যে কোনো গভর্নিং কাউন্সিলের শীর্ষ নেতা এবং সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকবেন মোল্লা বারাদার।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য বিলাল করিমির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “আমরা কয়েক সপ্তাহ নয়, কয়েক দিনের মধ্যেই একটি কার্যকরী মন্ত্রিসভা এবং সরকার ঘোষণা করতে চলেছি”।
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে নৃশংস শাসনের জন্য কুখ্যাত তালেবানরা এবার বিশেষ করে মানবাধিকার এবং নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে আরও মধ্যপন্থী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।