স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৭ আগস্ট।। সর্পদংশনের ভয় থেকে মানুষের পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা কশ্যপমুনিকে একটি মন্ত্র বা বিদ্যাবিশেষ আবিষ্কার করার আদেশ দেন। ব্রহ্মার আদেশ পেয়ে কশ্যপ যখন মনে মনে এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন, তখন তাঁর মননক্রিয়া থেকে আবির্ভূতা হন এক স্বর্ণবর্ণা মহাদেবী।
যেহেতু তিনি মানসজাতা, মন থেকে তাঁর জন্ম, তাই তিনি ‘মনসা’। শিব মনসার পিতা, শিবের আরাধনা করে তিনি দিব্যজ্ঞানলাভ ও সামবেদ অধিগত করেছিলেন। তাই দেবীর নাম ‘শৈবী’। আবার শিবের অনুকম্পায় অণিমা, লঘিমাদি অষ্টসিদ্ধিরা মনসার শরীরে প্রবেশ করে তাঁকে ‘সিদ্ধযোগিনী’ রূপে রূপান্তরিত করেন। দেবীভাগবত হতে এ-ও জানা যায়, সাধনায় তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং সর্বাগ্রে মনসার পূজা করে তাঁকে ‘সর্বলোকপূজ্যা’ হওয়ার বর দান করেছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণের পর মহর্ষি কশ্যপ তাঁর পূজা করেন, তৎপরে মুনি, নাগ, গন্ধর্ব ও মানবগণ একে একে তাঁর পূজায় ব্রতী হয়। অনেক নামের মধ্যে দেবীর এক নাম ‘বিষহরী’। সর্পবিষ হরণ করার অদ্বিতীয় কৌশল দেবীর জানা আছে বলেই এই নাম। মনসাপুজো সাধারণত শ্রাবণ সংক্রান্তি বা আষাঢ়ী পঞ্চমীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, দেশে যখন প্রবল বর্ষাকালের সময়। সুদূর অতীতে, যখন চিকিৎসাশাস্ত্র এত উন্নত হয়নি, তখন সর্পদংশনের চিকিৎসা হত মন্ত্র, ওষধি, ক্রিয়া ও দৈব, এই চার প্রকারে। এই চারটে পদ্ধতিই ছিল মনসাদেবীর কৃপার ওপর নির্ভরশীল।
সেই কারণেই সর্পদ্বারা ঘটিত মৃত্যু বা সর্পদংশন এড়াতে সর্পদেবী মনসার পূজার প্রচলন। আবার কোথাও কোথাও দেবীর পরিবর্তে দেবীর প্রতীক হিসেবে অনন্ত, বাসুকি, পদ্ম, মহাপদ্ম, তক্ষক, কুলীর, কর্কট, শঙ্খ— এই অষ্টনাগও পূজিত হন। সোমবার রাজধানীর দুর্গা বাড়িতে সমস্ত ধর্মীয় আচার মেনে পূজিতা হন দেবী মনসা।
শ্রাবন মাসের সংক্রান্তিতে এই পূজা হয়। প্রতি বছর এই পূজা হয় দুর্গা বাড়িতে। মঙ্গলবার দশমীর পর মায়ের ঘট চলে যাবে রাজবাড়িতে। রাজন্য আমল থেকে শ্রাবণের সংক্রান্তিতে বিষহড়ীর পূজা রাজ্যবাসীর মঙ্গল কামনায় চলে আসছে বলে জানান দুর্গা বাড়ির পুরোহিত।