স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৯ জুলাই।। ত্রিপুরাকে পাখির চোখ করে তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরার রাজনীতিতে ঝড় তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের পর ত্রিপুরাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ স্থানীয় নেতা সফর করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজ্য সফরে এসেছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসেরনেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং সাংসদ ডেরেক ব্রায়ান।
শুক্রবার রাজ্য সফরে আসছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংসদ মুকুল রায়।
আয়তন ও লোকসংখ্যার দিক দিয়ে ত্রিপুরা ছোট রাজ্য হলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উঠেছে এই রাজ্য। ২০২৩ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ত্রিপুরাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ইতিপূর্বে দু-দুবার ত্রিপুরায় সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির প্রয়াস চালিয়ে সফল না হলেও এ যাত্রায় সাংগঠনিক শক্তি চাঙ্গা করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে ময়দানে নামার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার লক্ষে আইপ্যাকর২৩ সদস্যক প্রতিনিধি দল রাজ্যসভার পরে যাবতীয় সমীক্ষার কাজ শেষ করে ফেলেছে। বিষয়টি টের পাওয়ার পরই আইপ্যাকের সদস্যদের আগরতলার একটি হোটেলে কোভিড বিধি না মানার অজুহাতে আটকে রাখা হয়। তাতে রাজনীতির পারদ আরও ঊর্ধ্বগামী হয়।
তৃণমূল কংগ্রেস বিষয়টিকে পুঁজি করে সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন আইপ্যাকের সমীক্ষক দলকে আটকে রেখে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে ত্রিপুরার শাসক দল বিজেপি। এ ধরনের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ তৃণমূল কংগ্রেস কোনোভাবেই।
তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জরুরী ভিত্তিতে বুধবার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষিয়ান নেতা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং প্রাক্তন সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জিকে ত্রিপুরায় পাঠান। তারা সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
বৃহস্পতিবার রাজ্যে আসেন মহিলা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় নেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। তারা রাজ্যে এসে দলের মহিলা ব্রিগেড সহ অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শুক্রবার রাজ্যে আসবেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী এবং সংসদ মুকুল রায়।
২দিনের রাজ্য সফরে আসছেন অভিষেক ব্যানার্জী এবং সংসদ মুকুল রায়। তাদের রাজ্য সফর উপলক্ষে কলকাতা পুলিশের একটি টিম বুধবার আগরতলায় আসে। তারা বিভিন্ন হোটেল এবং আগরতলা প্রেসক্লাবের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে খতিয়ে দেখেন।
রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের একটি অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আগস্ট মাসের মধ্যেই তাদের একটি অংশ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
যতদূর জানা গেছে, যে যার মতো করে দরকষাকষি শুরু করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্ট মাসে রাজ্য রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ এর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষিয়ান কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক এর হাত ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস এ রাজ্যে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করার কৌশল নিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই কৌশলী রাজনীতিতে রাজ্যের শাসক দল বিজেপির অধঃপতন প্রায় নিশ্চিত।উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের দু-দুবার ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছে। এ যাত্রায় মন্ত্রী-সাংসদ সহ অন্যান্যরা যেভাবে ত্রিপুরায় ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করেছেন তাতে নতুনত্ব দেখতে পারছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতাদের রাজ্য সফরের পাশাপাশি প্রশান্ত বিশ্বাস এর আইপ্যাক টিমের রাজ্য সফরের বিষয়টি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক কারণে বলা যেতেই পারে ২০২৩ সালের ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে কি হবে তা সময়ই বলবে।