অনলাইন ডেস্ক, ২৮ জুলাই।। জন্ম থেকেই নিজের দেশে যুদ্ধ দেখে বড় হয়েছেন।জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই শৈশব কেটেছে প্রবল আতঙ্কে। এই রকম এক পরিবেশে বড় হতে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে বাবা, মা পালিয়ে আসেন পাকিস্থানে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই একরত্তিটাকে একটু বাঁচার মত পরিবেশ দেওয়া।
১৯৯৩ সালে নিগারা শাহিনকে নিয়ে তাঁর পরিবার পাড়ি দেয় পাকিস্থানে। সেই নতুন দেশে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে ওঠা জীবনে শাহিনের মধ্যে দেখা যায় মার্শাল আর্টে অপরিসীম আগ্রহ। চলতি টোকিও অলিম্পিকে তিনি শরনার্থী দলের হয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৮ বছর পর নিজের দেশে ফিরে ভর্তি হয়েছেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ আফগানিস্থানে। আলজাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে পেশোয়ারে শরানার্থী হিসাবে বসবাস করেন শাহিনের পরিবার।শাহিন জানিয়েছেন আফগানিস্থান মেয়েদের জন্য বধ্যভূমি।
পাকিস্থানেও অনেক রক্ষনশীলতার মুখোমুখি হয়েই তাঁর অ্যাথলিট হিসেবে বেড়ে ওঠা। আল জাজিরা কে শাহিন জানিয়েছেন পেশোয়ারে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেন শাহীন ও তার পরিবার। আফগানিস্তান যেমন মেয়েদের বধ্যভূমি; পাকিস্তানেও মেয়েদের অনেক রক্ষণশীলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হয়। নিজের অ্যাথলেট হয়ে ওঠা নিয়ে শাহীন আল জাজিরাকে বলেন, ”পেশোয়ার ও কাবুলে আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকতাম।
আল্লাহই জানে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমি কতবার হুমকি পেয়েছি। আমার নামে ফেসবুক পেজ খুলে আজেবাজে পোস্ট দেওয়া হতো। আফগান মেয়েরা যত বাধার মুখে পড়েছে, আমিও সেসবের মধ্য দিয়ে গেছি। এরপরও আমি যদি করতে পারি, তারাও পারবে।”
নিজের এই অনমনীয় মনোভাব ও জেদকে সম্বল করেই আজ শাহিন এই বিশ্বক্রীড়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরেছেন। এখানেই শেষ নয় অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনের পর নিজের আবেগ গোপন রাখেননি তিনি। অকপটে জানিয়েছেন সারা বিশ্বকে নিজের অভিজ্ঞতা। এই জুডোকা বলছেন ” আপনি যখন একটি দেশের শরনার্থী তখন আপনার সব সময় মনে হবে সেদেশের সমাজ আপনাকে ঠিকমত মেনে নিচ্ছেনা।নিজের শৈশব পাকিস্থানে আমার অনেক উড্বগের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। যা চারপাশের অন্য শিশুদের তুলনায় অনেকটাই কঠিন ছিল”
শাহিন জানান জুডো তার চিরকালের ভালোবাসা।পরিবারকেও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেছেন” আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমার পরিবারের আমার প্রতি গভীর আস্থা ছিল, আমি আমার মা, বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ তাঁরা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন।
অলিম্পিক স্বপ্ন নিয়ে শাহীন বলছেন ‘আমি সব সময় স্বপ্ন দেখতাম, একদিন অলিম্পিকে অংশ নেব। আর এ জন্য আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু একটা সময় মনে হয়েছিল, আমি কোনোদিনও পারব না। তখন আমি মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য রাশিয়ায়। করোনার কারণে সব জুডো ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আমার মনে আছে, যেদিন শরণার্থী অলিম্পিক টিম ঘোষণা করা হলো, সেখানে আমার নাম দেখতে পেয়ে বিশ্বাস হচ্ছিল না। পুরো এক দিন লেগেছিল বিশ্বাস করতে।”