Tokyo Olimpic : টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে যাওয়া ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে আলাপচারিতা প্রধানমন্ত্রীর, দেখুন ভিডিও

অনলাইন ডেস্ক, ১৩ জুলাই।। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিতে যাওয়া ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া খেলোয়াড়দের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ। অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক এবং আইন মন্ত্রী শ্রী কিরেণ রিজিজু উপস্থিত ছিলেন।

এক ঘরোয়া এবং স্বতঃস্ফূর্ত আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন এবং তাঁদের পরিবার যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার জন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তীরন্দাজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া দীপিকা  কুমারির সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানশিপে সোনা পাওয়ায় অভিনন্দন জানান।

তীর ছুঁড়ে আম পাড়ার মধ্য দিয়ে দীপিকার তীরন্দাজী জীবন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তাঁর খেলোয়াড় জীবনের কথা জানতে চান। কঠিন পরিস্থিতিতে যেভাবে তীরন্দাজ খেলোয়াড় প্রবীণ যাদব, তার  লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেছেন। তিনি প্রবীণের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তাদের প্রয়াসের প্রশংসা করেন। শ্রী মোদী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মারাঠী ভাষায় আলাপচারিতা করেছেন।

জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়ার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সেনাবাহিনীতে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চান। শ্রী চোপড়া যে আঘাত পেয়েছিলেন, সেটি থেকে বর্তমানে কতটা সুস্থ হয়েছেন, এবিষয়েও প্রধানমন্ত্রী খোঁজ খবর নেন।

প্রত্যাশার চাপে তিনি যাতে উদ্বিগ্ন না হন, প্রধানমন্ত্রী, নীরজ চোপড়াকে সেই পরামর্শ দিয়েছেন। স্পিন্টার দ্যুতি চাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই তার নামের অর্থ নিয়ে কথা বলেন।  খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর দক্ষতার প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, দ্যুতি চাঁদ দক্ষতার মধ্য দিয়ে উৎসাহের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি তাঁকে ভয় মুক্তভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন গোটা দেশ তাঁর সঙ্গেই রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বক্সার আশীষ কুমারের কাছে জানতে চান, কেন তিনি বক্সিংকে বেছে নিয়েছেন। কোভিড – ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার সময় কিভাবে তিনি প্রশিক্ষণ চালিয়ে গেছেন, শ্রী মোদী সেবিষয়েও প্রশ্ন করেন। তার পিতৃ বিয়োগ সত্ত্বেও আশিষ যেভাবে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে চলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেছেন। এই ক্রীড়াবিদ জানান, সঙ্কটের সময় কিভাবে পরিবার, পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব তার পাশে ছিলেন। শ্রী মোদী এই প্রসঙ্গে ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরের পিতৃ বিয়োগের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন এবং খেলার মধ্য দিয়ে কেমন করে শচীন, তার বাবাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি স্মরণ করেন।

বক্সার মেরি কমের প্রশংসা করে শ্রী মোদী বলেছেন, অনেক খেলোয়াড়ের কাছে তিনি বর্তমানে আদর্শ। কিভাবে পরিবারের দায়িত্ব সামলে মেরি কম খেলাধুলো চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশেষত এই মহামারীর সময়েও, প্রধানমন্ত্রী সেবিষয়েও জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী, মেরি কমের পছন্দের মুষ্ঠাঘাত এবং পছন্দের খেলোয়াড়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

তিনি তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় পি ভি সিন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রী মোদী হায়দ্রাবাদের গাছিওয়ালিতে তার অনুশীলনের বিষয়ে জানতে চান। প্রশিক্ষণের সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাসের প্রয়োজনীয়তা কতটা সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী খোঁজ খবর নেন। তিনি সিন্ধুর বাবা, মা –কে সেই সব ছেলে মেয়েদের বাবা– মাদের পরামর্শ দিতে বলেন, যাঁরা নিজেদের সন্তানকে খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে চান। পি ভি সিন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিযোগিতার শেষে তারা যখন দেশে ফিরে আসবেন, তখন তিনি তাদের সঙ্গে আইসক্রিম খাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শ্যুটার এলাভেলিন বালারিভানের কাছে জানতে চান, কেন তিনি শ্যুটিংএ উৎসাহিত হয়েছিলেন। বালারিভান, আমেদাবাদে বড় হয়েছেন। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে শ্রী মোদী, তাঁর সঙ্গে গুজরাটি ভাষায় কথা বলেন এবং তার মা-বাবাকে তামিল ভাষায় শুভেচ্ছা জানান। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, এলাভেলিনের শৈশবের বাসস্থান যে অঞ্চলে,  তিনি সেই মণিনগরের বিধায়ক ছিলেন। কিভাবে এলাভেলিন লেখাপড়া এবং শ্যুটিং –এর প্রশিক্ষণ একইভাবে চালিয়ে গেছেন, শ্রী মোদী সে বিষয়ে জানতে চান।

প্রধানমন্ত্রী আরেক শ্যুটার সৌরভ চৌধুরির সঙ্গে কথা বলার সময় মনোসংযোগ বাড়ানো ও মনকে শান্ত রাখার ক্ষেত্রে যোগের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন। বর্ষীয়ান টেবিল টেনিসের খেলোয়াড় শরৎ কোমলের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, আগের অলিম্পিকের সঙ্গে বর্তমান অলিম্পিকের পার্থক্য কোথায়। মহামারীর ফলে অলিম্পিক কতটা প্রভাবিত হয়েছে, তিনি সেবিষয়েও আলোচনা করেন। শ্রী মোদী বলেছেন, শরৎ কোমলের অভিজ্ঞতা ভারতীয়  ক্রীড়াবিদদের সাহায্য করবে। আরেক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মণিকা বাত্রার দরিদ্র শিশুদের প্রশিক্ষণের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খেলার সময় মণিকা হাতে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত ব্র্যান্ড পরে থাকেন। মণিকার কাছে তিনি জানতে চান, খেলার থেকে চাপ কমানোর জন্যই কি তিনি নাচ-কে বেছে নিয়েছেন।

ভিনেশ ফোগাতকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছেন, তার পরিবারের সদস্যরা কুস্তিগীর হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তিনি প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। শ্রী মোদী, ভিনেশের বাবার সঙ্গে কথা বলেন এবং জানতে চান, তার প্রতিভাধর মেয়েদের তৈরি করতে তিনি কি কি ব্যবস্থা নেন। সাঁতারে স্বজন প্রকাশ কিভাবে গুরুতর চোট থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, শ্রী মোদী সেবিষয়েও জানতে চেয়েছেন।

হকির মনপ্রীত সিং এর সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মেজর ধ্যানচাঁদের মতো কিংবদন্তী খেলোয়াড়ের কথা উল্লেখ করেছেন এবং আশা করেন, মনপ্রীতের দল প্রত্যাশা পূরণ করবে।

টেনিস খেলোয়াড় সানিয়া মির্জার সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রী মোদী বলেছেন, টেনিসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এক্ষেত্রে নতুন ক্রীড়াবিদদের তিনি কি কি পরামর্শ দেবেন, শ্রী মোদী সে বিষয়ে জানতে চান। টেনিস কোর্টে অংশীদারের সঙ্গে কিভাবে তিনি বোঝাপড়া করেন, শ্রী মোদী সে সম্পর্কেও জানতে চান।

এই প্রসঙ্গে গত ৫ – ৬ বছর ধরে ক্রীড়া জগতের পরিবর্তন সানিয়া কতটা বুঝতে পেরেছেন, শ্রী মোদী সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সানিয়া মির্জা জবাবে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ভারতীয় খেলোয়াড়দের যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, তার প্রতিফলন খেলার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

ভারতীয় ক্রীড়াবিদ উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারীর কারণে তিনি তাঁদের সঙ্গে মুখোমুখি বসতে পারলেন না। মহামারী বিভিন্ন রীতি নীতির পরিবর্তন ঘটিয়েছে, এই পরিবর্তন অলিম্পিক্সেও অনুভব করা যাচ্ছে। তাঁর মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী, অলিম্পিক্স-এ অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের জন্য দেশবাসীকে উৎসাহ দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি #Cheer4India –র জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেছেন, সারা দেশ খেলোয়াড়দের সঙ্গে রয়েছে এবং তাদের আর্শীবাদ সবসময় খেলোয়াড়রা পাবেন। শ্রী মোদী, জনসাধারণকে নমো অ্যাপের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার জন্য সকলকে লগ ইন করতে বলেছেন। “খেলার মাঠে ঢোকার সময় সব খেলোয়াড়দের ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর আর্শীবাদ ও শুভেচ্ছা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খেলোয়াড়দের অভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। এগুলি হল : দৃঢ়চেতা, দৃঢ় প্রত্যয়, ইতিবাচক মনোভাব, শৃঙ্খলা পরায়ণ, লক্ষ্য পূরণে স্থির থাকা এবং  খেলায় নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করা। শ্রী মোদী বলেছেন, খেলোয়াড়দের মধ্যে অঙ্গীকার পূরণের দায়বদ্ধতা এবং প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা রয়েছে। এই গুণ নতুন ভারতের মধ্যে দেখা যায়। নতুন ভারত এবং দেশের ভবিষ্যৎ আজ খেলোয়াড়দের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত।

প্রধানমন্ত্রী  বলেছেন, দেশের নতুন ভাবনা ও  নতুন ধারা আজ খেলোয়াড়দের  সঙ্গে রয়েছে।  তাদের মনোবল দেশের জন্য আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়রা যাতে চাপ মুক্ত হয়ে খেলতে পারেন, পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মাঠে নামেন, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সম্প্রতি ক্রীড়াবিদদের সাহায্য করার জন্য ভাবনা চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে।

ক্রীড়াবিদরা যাতে ভালো প্রশিক্ষণ শিবির এবং উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারেন, তার জন্য সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন খেলোয়াড়দের আরো বেশি করে আন্তর্জাতিক পরিবেশে খেলাধুলো করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতো স্বল্প সময়ে বিরাট পরিবর্তনের ফলে ক্রীড়াবিদদের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে  যোগদানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রথমবারের মতো এতো বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করায় শ্রী মোদী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। “ফিট ইন্ডিয়া” এবং “খেলো ইন্ডিয়া” –র মতো অভিযান চলছে। এবারই প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা অলিম্পিকে সব থেকে বেশি খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছেন। বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় ভারত, এবারই প্রথম অংশগ্রহণে ছাড়পত্র পেল।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তরুণ ভারতের মধ্যে যে আস্থা ও শক্তি তিনি দেখতে পান, তার থেকে এটা স্পষ্ট যে নতুন ভারতের কাছে বিজয়ী হওয়াই একমাত্র অভ্যাসে পরিণত হবে, সে দিন আর বেশি দূরে নেই। খেলোয়াড়দের নিজেদের সেরা জিনিসটি প্রতিযোগিতার সময় দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শ্রী মোদী দেশবাসীকে “চিয়ারফরইন্ডিয়া” –য় সামিল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

 

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?