নতুন প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ জুন।। রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রাণীপালন, ডেয়ারি, কৃষি, মৎস্যচাষ ইত্যাদি প্রাইমারি সেক্টরের উপর রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের যে সব নীতি নির্দেশিকা রয়েছে সেগুলি অনুসরণ করেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ তবেই সাফল্য আসবে৷ আজ বুধবার সচিবালয়ের ১ নম্বর কনফারেন্স হল-এ আয়োজিত প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের পর্যালোচনা সভায় দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পর্যালোচনা সভায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের সর্বশেষ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির পরিপ্রেক্ষিতে দফতর কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলির পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ডিমের চাহিদা মেটাতে বহির্রাজ্য থেকে প্রচুর ডিম আমদানি করতে হচ্ছে৷ তাতে অনেক টাকা ত্রিপুরার বাইরে চলে যায়৷ ত্রিপুরার টাকা যাতে রাজ্যেই থাকে তার জন্য ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির উপর দফতরকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে রাজ্যে আরও লেয়ার ফার্ম স্থাপন করার পরিকল্পনা নিতে হবে৷ প্রয়োজনে হরিয়ানার মতো রাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ ত্রিপুরায় এনে কাজে লাগাতে হবে৷ রাজ্যেই প্রয়োজনীয় ডিম উৎপাদন করা যায় তার জন্য লেয়ার ফার্ম স্থাপনের বিষয়ে দফতরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমাকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যাঁরা রাজ্যে লেয়ার ফার্ম স্থাপন করতে চান তাঁদের দফতরের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করার জন্যও বিভাগীয় মন্ত্রীকে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ক্লাস্টার ভিত্তিতে পোল্ট্রি করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি৷
পর্যালোচনা সভায় দফতরের অধিকর্তা দিলীপ কুমার চাকমা বলেন, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর পশু চিকিৎসা, টীকাকরণ, রোগ নির্ণয়, পশুপাখির বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা ইত্যাদি কাজগুলি করে থাকে৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৬ লক্ষ ১১ হাজার ৫৬২টি পশুর চিকিৎসা এবং ৬৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৫১টি পশুর টীকাকরণ করা হয়েছে৷ এছাড়াও ৫০০টি ফার্টিলিটি ম্যানেজমেন্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে৷ দফতরের অধিকর্তা আরও জানান, ত্রিপুরায় দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংকর প্রজাতির গো-পালনে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজননের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেন, দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১১৭টি ডেয়ারি কো-অপারেটিভ সোসাইটি স্থাপন করা হয়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষের মধ্যে আরও ৩৩টি ডেয়ারি কো-অপারেটিভ সোসাইটি স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজ্যে ২০টি মিল্ক পার্লার স্থাপন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৮টি মিল্ক পার্লার ইতিমধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে৷সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কামধেনু যোজনা প্রকল্পে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এক হাজার দুগ্ধবতী গাভী প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ডেয়ারি এন্টারপ্রেনিওরশিপ ডেভেলপমেন্ট স্কিমে ৪৮৯ জনের প্রস্তাবিত প্রকল্পের মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যে ২টি বাল্ক মিল্ক কুলিং সেন্টার স্থাপন করা হবে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে দুগ্ধশিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গোমতি কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের কার্যকরী ভূমিকা প্রয়োজন৷ গোমতি কো-অপারেটিভ দুধের পাশাপাশি ঘি, পনির এবং বিভিন্ন ফলের ফ্লেবারের দুগ্ধজাত সামগ্রী তৈরি করে তা বহির্রাজ্যে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য গোমতি কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷পর্যালোচনা সভায় দফতরের অধিকর্তা আরও জানান, রাজ্যে মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের শূকর ও ছাগল পালনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এই লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ১,৪৭৫ জন সুবিধাভোগীকে সংকর প্রজাতির পুরুষ শূকরছানা প্রদান করা হয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় কিষাণ বিকাশ যোজনার মাধ্যমে ২০০ জন সুবিধাভোগীকে শূকর পালন ইউনিট স্থাপনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেই তফশিলি জাতি কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে ১৮৫টি শূকর পালন এবং ২১৪টি ছাগল পালন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে৷ এছাড়া ওই অর্থবর্ষে তফশিলি উপজাতি কল্যাণ দফরের মাধ্যমে ১৩৩টি শূকর পালন এবং ১৩১টি ছাগল পালন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুবিধাভোগীদের যে সব শূকর ছানা প্রদান করা হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা ১৫ দিন অন্তর দফতরের আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং অ্যাকশন রিপোর্ট জমা দিতে হবে৷ এছাড়াও এর মাধ্যমে কতজন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন তা-ও রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে৷ এর জন্য দফতরের আধিকারিকদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি৷