স্টাফ রিপোর্টার,আগরতলা, ২৪ মার্চ।। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ত্রিপুরাকে করোনা মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার আজ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এই তিনদিনে রাজ্যের পৌনে ৪ লক্ষ প্রবীণ নাগরিককে মিশন মুডে কোভিড-১৯ টিকাকরণের উদ্যোগ নিয়েছে৷
একজন প্রবীণ নাগরিকও যাতে কোভিড টিকাকরণ থেকে বাদ না যান সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব আজ আই জি এম হাসপাতালে বিশ্ব যক্ষা দিবস এবং প্রবীণ নাগরিকদের কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির বিশেষ অভিযানের উদ্বোধন করে এই আহ্বান জানান৷
প্রদীপ জেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আমরা কোভিড-১৯ অতিমারির সাথে পরিচিত হয়েছি৷ তবে যাদের বয়স ৬০-এর বেশি তাদেরই সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি থাকে৷
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে মাতা, পিতা, গুরুজন রয়েছেন তাদের প্রত্যেককে টিকাকরণ কেন্দ্রে এনে টিকাকরণ করানো উচিত৷ এই তিনদিন উৎসবের মেজাজে এই কাজটা আমাদের করতে হবে৷
তিনি বলেন, করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে৷ করোনা অতিমারির সময় ত্রিপুরাতে খাদ্যের অভাবে একজনও মারা যাননি৷ এটা রাজ্যের বড় সাফল্য৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় ত্রিপুরা দেশে ভালো অবস্থায় রয়েছে৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে রাজ্যে ৫৪.৯ শতাংশ শিশুর মধ্যে ক’মি রোগের প্রাদুর্ভাব ছিলো৷ ২০১৯ সালে তা কমে হয়েছে ২ শতাংশে৷ রাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারও বেড়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোভিড-১৯ অতিমারির সময় ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে সঠিক দিশায় নিয়ে গেছেন৷
কেন্দ্রীয় বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে টিকাকরণের জন্য৷ কেউ কোনোদিন কল্পনা করেননি যে, দেশে করোনা ভ্যাকসিন তৈরি হবে৷ অথচ প্রধানমন্ত্রীর নেত’ত্বে সেটা সম্ভব হয়েছে৷ আমরাও প্রধানমন্ত্রীর পথ ধরেই এগিয়ে চলেছি৷ কোভিড টিকাকরণে ত্রিপুরা আজ দেশের মধ্যে একটা বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে৷ সরকারের লক্ষ্য করোনা মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলা৷
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব বলেন, রাজ্য সরকার আজ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এই তিনদিন কোভিড-১৯ টিকাকরণের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়৷ সকলের সহযোগিতায় এই উদ্যোগ সার্থক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
সম্মানিত অতিথির ভাষণে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা বলেন, চাঁচুবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সমগ্র দেশের মধ্যে জাতীয় গুণমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ জিবিপি হাসপাতালে নির্মিত নতুন এম সি এইচ ওয়ার্ডের শীঘই উদ্বোধন হবে৷ আয়ুমান কার্ডে এখন পর্যন্ত ১২ লক্ষ ৪ হাজার জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য ৩৮ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা সহায়তা করা হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে
Bজাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (ত্রিপুরা) মিশন অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষা রোগ নির্মলীকরণের ডাক দিয়েছেন৷ রাজ্যেও সেই লক্ষ্যে কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে৷ তিনি বলেন, দেশে ৫০ লক্ষ জনসংখ্যার নীচে যেসব রাজ্য রয়েছে তারমধ্যে ত্রিপুরা টিবি রোগ প্রতিরোধে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ সিকিম রয়েছে প্রথম স্থানে৷
আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ত্রিপুরাকে দ্বিতীয় স্থানের জন্য পুরস্কৃত করছে৷ তাছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক টিবি রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাকে রৌপ্য পদকে পুরস্কৃত করছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে টিবি রোগ যাতে দ্রত ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ট্রনেট ও সিভিনেট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা. শৈলেশ কুমার যাদব, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রাধা দেববর্মা, আই জি এম হাসপাতালের সুুপারিনটেনডেন্ট ডা. অমিতাভ চক্রবর্তী ছাড়াও চিকিৎসকগণ ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যক্ষা রোগী হরলাল দেবনাথের হাতে নিক্ষয় পোষণ যোজনায় ৩ হাজার টাকার চেক তুলে দেন৷ তাছাড়া ৫ জন টিবি চ্যাম্পিয়ন রোগী, কোভিড ভ্যাকসিনে ভালো কাজ করার জন্য পশ্চিম ত্রিপুরা, দক্ষিণ ত্রিপুরা, ধলাই ও উত্তর ত্রিপুরা জেলাকে, এন টি ই পি প্রকল্পে ৮ জেলাকে, ২ জন বরিষ্ঠ নাগরিককে কোভিড ভ্যাকসিন শংসাপত্র, ইউ এন ডি পি এবং হু-এর পক্ষ থেকে টিবি রোগ প্রতিরোধে ভালো কাজ করার জন্য ডা. নবজ্যোতি চাকমা সহ অন্যান্য চিকিৎসকদের পুরস্ক’ত করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ তাদের হাতে পুরস্কার স্বরূপ শংসাপত্র তুলে দেন৷