ব্রিটিশ রাজপরিবারে এই দুই নারীর অভিজ্ঞতার মধ্যে মিল খোঁজা হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক, ১০ মার্চ।। অপরা উইনফ্রের সঙ্গে ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটি কারণ হলো হ্যারি একাধিকবার তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার নাম উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

মেগানও কথা বলেছিলেন ডায়ানার বন্ধুদের সঙ্গে, “কারণ… ওই পরিবারের ভেতরে থাকাটা আসলে যে কী রকম চাপের তা আর কে বুঝতে পারতো?” এখন ব্রিটিশ রাজপরিবারে এই দুই নারীর অভিজ্ঞতার মধ্যে মিল খোঁজা হচ্ছে।

প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, তার আশঙ্কা হয়েছিল ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে’। এরপর তিনি ও মেগান রাজপরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্য হিসেবে তাদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

ব্রিটেনের ট্যাবলয়েড কাগজগুলো তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার প্রতি যে ধরনের আচরণ করেছিল, সেই কাগজগুলো তার স্ত্রী মেগানের প্রতিও যে একই ধরনের আচরণ করেছে সে কথাও হ্যারি উল্লেখ করেছেন। যদিও এ কথা তিনি আগেও বলেছেন।

ডায়ানা পৃথিবীতে সবচেয়ে বিখ্যাত নারীদের অন্যতম এবং প্রায়ই তাকে নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি হয়েছে। এসব লেখায় এসেছে তার দাতব্য কাজকর্ম এবং পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা শিরোনাম হয়ে ওঠা ঘটনা। নানা সময়ে মিডিয়ার অতিরিক্ত নাক গলানো নিয়ে সমালোচনাও করেন।

তবে জীবনের শেষ বছরগুলোতে ডায়ানা নিজেই সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যার থেকে কেউ কেউ মন্তব্য করতেন যে ডায়ানা প্রচারণা চাইছেন এবং তার ব্যাপার সামনে আনার জন্য সংবাদমাধ্যমে উৎসাহ দিচ্ছেন।

অন্যদিকে মেগান রাজপরিবারের বউ হয়ে আসার পর তার ব্যক্তিগত ব্লগ বন্ধ করে দেন। এবং উইনফ্রের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকারের আগে তিনি যা বলেছেন তার অধিকাংশই ছিল তার দাতব্য কাজকর্মকে ঘিরে। সাংবাদিক জেমস ব্রুকস মনে করেন সংবাদমাধ্যমের ব্যাপারে হ্যারির মতামতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার মা প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর ঘটনা।

“মিডিয়া সম্পর্কে হ্যারি আর উইলিয়ামের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মায়ের মৃত্যুর কারণে কলুষিত হয়ে গেছে। কারণ তাদের চোখে পাপারাজ্জিরা তার জীবন অনবরত উত্ত্যক্ত করে তুলেছিল। ”প্যারিসে এক সুড়ঙ্গ পথে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা। হ্যারির বয়স তখন মাত্র ১২।

গাড়ির চালক হেনরি পল মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং মোটরবাইকে তাদের গাড়ির পিছু ধাওয়া করছিল পাপারাজ্জিরা। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয় গাড়ি চালক ও পাপারাজ্জিদের ‘সম্পূর্ণ গাফিলতির’ কারণে মৃত্যুর শিকার হয়েছিলেন ডায়ানা।

বিবিসির একটি তথ্যচিত্রে ২০১৭ সালে প্রিন্স হ্যারি তার মায়ের মৃত্যুর পেছনে এই ছবিশিকারীদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছিলেন। “সবচেয়ে কঠিন ছিল এটা মেনে নেওয়া যে, যে লোকগুলো তার ছবি তোলার জন্য সুড়ঙ্গের ভেতর ওভাবে তার গাড়িকে ধাওয়া করেছিল, তারাই গাড়ির পেছনের সিটে মা মারা যাচ্ছেন সেই ছবিগুলো তুলেছিল। ”

লেখক কেটি নিকল বলছেন, প্রিন্স হ্যারি ২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি বিবৃতি দেওয়ার পরও তার ধারণা “পাপারাজ্জিরা যেভাবে ডায়ানাকে তাড়া করে ফিরত তারা সেভাবে মেগানের পেছনে হয়তো লাগেনি। ”মেগানকে বারবার সমালোচনা করে খবর লেখা নিয়ে হ্যারি স্পষ্টতই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন।

তবে কেউ কেউ বলছেন মেগানের সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানার তফাত হলো মেগান মানুষের নজর থেকে মুখ লুকিয়ে থাকার মতো মেয়ে নন। হ্যারিকে বিয়ে করার আগে তিনি একজন তারকা ছিলেন। কিন্তু এদের সঙ্গে একমত নন কেটি নিকল। “তিনি বিয়ের আগে তারকা জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন ঠিকই, কিন্তু রাজপরিবারের সদস্য থাকার সঙ্গে তার তুলনা চলে না। ”

“হ্যাঁ- তিনি তারকা ছিলেন, কিন্তু তিনি অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বা নিকোল কিডম্যানের মতো প্রথম সারির অভিনেত্রী ছিলেন না। মেগান নিজেই সেটা স্বীকার করেছেন। তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিচার করা হচ্ছে, লোকে তার প্রতিটি পদক্ষেপ মাপছে, এমন অভিজ্ঞতা তার কখনই হয়নি। ”

এ সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্দরেও তুমুল চর্চা হচ্ছে বলে খবর। তবে এটা মানতে হবে— ডায়ানা দুঃসময়ে স্বামীকে পাশে না পেলেও বা জটিলতার অনেকটা ছিল দাম্পত্য সম্পর্ক ঘিরে, সেখানে মেগান ও হ্যারির কেচ্ছা একদম আলাদা।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?