স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৭ ফেব্রুয়ারী।। বেকারদের কর্মসংস্থান,রেগার মজুরি বৃদ্ধি, বেকার ভাতা চালু, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, এডিসি কে অধিক ক্ষমতাশীল করাসহ মোট দশ দফা দাবিতে শনিবার আগরতলা শহরে সুবিশাল মিছিল শেষে ঐতিহাসিক জমায়েত সংঘটিত করল বামপন্থী দুই যুব সংগঠন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন ও উপজাতির যুব ফেডারেশনের জিরানিয়া মহকুমা কমিটি৷
সামনেই এডিসি সহ পুর ও নগর সংস্থাগুলির নির্বাচন৷ এই নির্বাচনের প্রাকমুহুর্তে শহর কাঁপানো মিছিল ও যুব জমায়েত সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে এদিন কার্যত শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল বিরোধী সিপিআইএম দল৷
সুবিশাল মিছিল ও জমায়েতের মধ্য দিয়ে শাসকদের কার্যত তারা জানিয়ে দিলেন আসন্ন নির্বাচনে এক ইঞ্চি জমিও বিনা লড়াইয়ে ছাড়া হবে না৷ এদিন মেলার মাঠ থেকে মিছিল বের হয় শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে প্রকাশ্য সমাবেশে মিলিত হয়৷ সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷
সমাবেশে যোগ দেবার আগে বিরোধী দলনেতা এদিন মিছিলের অগ্রভাগে থেকে কার্যত নেতৃত্ব দেন গোটা আন্দোলন কর্মসূচিকে৷ যুব জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন রাজ্যের বর্তমান ও অতীতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শাসক দলকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা৷ তিনি বলেন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মানুষকে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শাসক দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা৷
একটি প্রতিশ্রুতিও তারা বাস্তবায়িত করতে পারেনি৷ নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি৷ এখন বুঝতে পারছেন রাজ্যবাসী৷যারা মিসকলে চাকুরী, ঘরে ঘরে রোজগার, কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশন প্রদানসহ আরও এক গুচ্ছ লোভনীয় কথা বলেছিলেন, তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ মুখ দেখাতে সাহস পাচ্ছেন না৷
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এদিন মহারাজার নাম না করে রাজন্য আমলের ইতিহাস খানিকটা তুলে ধরে বলেন ত্রিপুরাতে দীর্ঘদিন রাজন্য শাসন ছিল৷ ছিলেন বহু রাজা৷ বর্তমান নব্য দলের নেতা রাজপরিবারের নাম করে হুমকি দিচ্ছেন৷রাজ আমলে রাস্তাঘাট, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ,পানীয় জল কোন কিছুই হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ তিনি আরো অভিযোগ করেন রাজ্যের জুমিয়াদের সম্পদ দুহাত ভরে লুণ্ঠন হয়েছে, এবং এখনও তা হচ্ছে অন্য কায়দায়৷ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে রাজন্য আমলে, বর্তমান সময়েও এই প্রসেস চলছে৷
শোষণের জন্য এখন নতুন কায়দা নেওয়া হয়েছে৷ তাই এক সময় তোলা হয়েছিল তিপ্রা ল্যান্ডের ইস্যু ও পৃথক রাজ্যের দাবি৷ তবে বর্তমান এই অবস্থায় এখন আর পৃথক রাজ্যের স্লোগান না তুলে গ্রেটার ত্রিপুরার স্লোগান তোলা হচ্ছে৷ যা বিভেদকামী শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং বাঙালি জাতি ও জনজাতি দের মধ্যে আগুন লাগানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়৷
গ্রেটার তিপরা ল্যান্ডের দাবি যারা অর্থাৎ যিনি তুলেছেন তিনি জানেন এডিসি নির্বাচনের আগে যারা মোহভঙ্গ হয়েছেন অর্থাৎ বিজেপির শরিক দলের থেকেও যারা স্বার্থ সম্বলিত ক্ষমতার আস্বাদনে নিজস্ব স্বাধীনতা ও ক্ষমতা ভোগ করতে পারছিলেন না তাদেরকে এই স্লোগানে খানিকটা টেনে আনা সম্ভব হবে৷ আর উনার এই কৌশল অনেকটাই সফল৷
এই প্রসঙ্গে মানিক সরকার বলেন, যারা গ্রেটার তিপরা ল্যান্ডের দাবিদার তাদের মনে রাখতে হবে একই কৌশল কার্যকর হয় না বার বার৷ এডিসি নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে গ্রেটার ত্রিপুরার কথা বলে রাজ্যে একটা দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ পাশাপাশি গ্রেটার তিপরা ল্যান্ডের দাবিদারদের মানিক সরকার এটাও মনে করিয়ে দেন, এডিসি নির্বাচনের আগে বিজেপির শিকারি মোরগ মহারাজার এই মহাজোট৷
এদিকে মাঝে হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকদিন বাকি৷ এরপরেই রাজ্যের বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি হবে৷ আর এই তিনবছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষে রাজ্যে আসতে পারেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এ প্রসঙ্গে এদিন যুব জমায়েতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই রাজ্যে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য সফর অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ৷
https://www.facebook.com/cpimtripuraofficialpage/videos/908149649986501/
রাজ্যের মানুষ সরকারের দিক থেকে যেভাবে মুখ ঘুরাতে শুরু করেছেন, তাতে, শাসকদলের ভিতরে আগুন লেগেছে তা বোঝা যাচ্ছে৷ চারিদিকে ক্ষোভে ফুঁসছেন মানুষ তখন প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্য সফরের আমন্ত্রণ জানানো মানেই নিজেদের বাঁচানোর একটা প্রয়াস৷ তবে মনে রাখতে হবে এক মাঘে শীত যায় না৷ ঘুরে ঘুরে আবার আসে মাঘের শীত৷
এদিনের এই যুব জমায়েত থেকে বিরোধী দলনেতা বামপন্থী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাকে আরো বিস্তার করার আহবান রাখেন৷
এদিকে এদিন যুব জমায়েতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন ডি ওয়াই এফ আই এর রাজ্য সম্পাদক অর্থাৎ সব ধরনের বামপন্থী যুব অনুষ্ঠানে সর্ব ঘটের কাঁঠালি কলা নবারুণ দেব ও টি ওয়াই এফের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অমলেন্দু দেববর্মা৷ তবে তাদের বক্তব্য যুবকদের কতটুকু মোটিভেট করতে পেরেছে তা আগামী দিন বলবে৷