স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ১৯ ফেব্রুয়ারী।। পাহাড় ভোট নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে এক নয়া সমীকরণ৷ মহারাজার সামাজিক সংস্থা তিপ্রা যেদিন থেকে রাজনৈতিক দলের খাতায় নাম লিখিয়েছে সেদিন থেকেই পাহাড় ভোট নিয়ে বিরোধী জনজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এক নয়া সমীকরণের উত্থান শুরু হয়৷ শুক্রবার খোদ শাসক দল বিজেপির শরিক দল আইপিএফটি মহারাজার তিপ্রা দলের সাথে সমঝোতার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এই নয়া সমীকরণের ক্ষেত্রে এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিলো রাজ্যবাসীর কাছে৷ শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলো আইপিএফটির সভাপতি তথা রাজস্ব মন্ত্রী এনসি দেববর্মা এবং সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া৷ ফলে আইপিএফটি দলের এই সিদ্ধান্তে কিন্তু অনেকটাই বেকায়দায় শাসক দল বিজেপি৷
কেননা, এই মুহূর্তে চিত্ত দেববর্মার টিএসপি, বুধু এবং বিনয় দেববর্মাদের তিপ্রাহা এবং সর্বশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় মহারাজার তিপ্রা দলের সাথে সমঝোতাপত্রে চুক্তি করেছেন আইপিএফটি৷ যদিও এই মুহূর্তে এইসবকটি দলের সংমিশ্রণে একটাই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্যবাসীর সামনে তাহলো আগামী পাহাড় ভোটে শাসক দল বিজেপিকে চাপে ফেলতে মহারাজার মহাজোটে শামিল হচ্ছেন সবাই৷ তবে কয়েকদিন আগে আইএনপিটি মহারাজার দলে সাথে আসন সমঝোতা করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও শুক্রবার দিন দুই দফায় আইপিএফটি সহ অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলিকে সাথে নিয়ে যে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তাতে কিন্তু অনুপস্থিত ছিলো আইএনপিটি৷ যতটুকু খবর, আইএনপিটি দলের পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে, তারা পাহাড় ভোটে মহারাজার তিপ্রা দলের সাথে আসন সমঝোতায় কিংবা মিলে গেলেও যদি আইপিএফটি দল তাতে শামিল হয় তাতে তারা সহমত পোষণ করবেন না৷ যেহেতু শুক্রবারদিন দুই দফায় যৌথ বৈঠকে এবং সাংবাদিক সম্মেলনে আইএনপিটি দলের কোনো প্রতিনিধি ছিলো না, তাহলে কি আইপিএফটি মহারাজার তিপ্রা দলের সাথে সমঝোতায় আসায় পিছু হটতে চলেছে আইএনপিটি? আইএনপিটির একটি সূত্রে খবর, শুক্রবার এই ইস্যুতে আইএনপিটি দলের পক্ষ থেকে এক বৈঠক ডাকা হয়েছে৷
বৈঠকের নির্যাষ জানা না গেলেও আগামী দু-একদিনের মধ্যে আইএনপিটির তরফ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে বলেই দলীয় সূত্রে খবর৷ এদিকে শুক্রবার প্রথম দফায় মহারাজার সাথে টিএসপি এবং তিপ্রাহা দলের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এর পরবর্তীতে যুগ্মভাবে যে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় তাতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, টিএসপি এবং তিপ্রাহা এই দুটি আঞ্চলিক দল মহারাজার তিপ্রা দলের সাথে মিশে গেছে৷ তবে এই ক্ষেত্রে কিন্তু আইপিএফটি তিপ্রা দলের সাথে মিশে যায়নি৷ তারা কমন মিনিমাম প্রোগ্রামকে পঁুজি করে মহারাজার তিপ্রা দলের সাথে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন৷ যার মধ্যে দিয়ে তিপ্রা দলের সাথে আইপিএফটি সরাসরি মিশে না গিয়ে নিজস্ব সত্ত্বা বজায় রেখে আসন সমঝোতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানোর সময় আইপিএফটি দলের মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, যেহেতু তারা সরকারে রয়েছেন এই ক্ষেত্রে বিজেপি দলের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা করা হয়েছে কিনা?
জবাবে মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, নিজস্ব আদর্শকে পুঁজি করে কোনো দলের সাথে আসন সমঝোতা কিংবা কোনো চুক্তিতে যেতে গেলে আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই এই ধরনের রাজনীতিক ঘটনা ঘটে চলছে অহরহ৷ মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আইপিএফটি পৃথক রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে নিরন্তর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপির সাথে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে ধরা হলেও ওই সময় অসমের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মধ্যস্থতায় বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্বরা মোডালিটি কমিটি গঠন করে রাজ্যের জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই মোডালিটি কমিটির কাজ এক ফোঁটাও অগ্রসর হয়নি৷
তাই মহারাজা প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মা যেহেতু গ্রেটার তিপ্রা ল্যান্ডের দাবি করছে এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েই শাসক দলের শরিক হওয়া সত্বেও মহারাজার সাথেই আসন সমঝোতায় যেতে রাজি আইপিএফটি৷ এদিকে এই মুহূর্তে সিপিএমের উপজাতি সংগঠন জিএমপি এবং রাজ্য কংগ্রেস বাদে যেহেতু বিরোধী প্রতিটি আঞ্চলিক দলই মহারাজার মহাজোটে শামিল হয়েছে তাই আগামী পাহাড় ভোট যে শাসক দল বিজেপির কাছে ততোটা মসৃণ হবে না তা কিন্তু হলফ করেই বলা যায়৷ যতটুকু খবর, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই রাজ্য বিজেপির অন্দরে এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা এবং শুরু হয়েছে নতুনভাবে পাহাড় ভোটের জন্য ছক কষা৷